পোস্টস

গল্প

Murder Mystery গল্পঃ লাস্ট কেস পার্ট-০৪

১৪ অক্টোবর ২০২৪

Salsabil Khushi

মূল লেখক Salsabil Khushi

রাত ৯.৩০

দরজায় খট খট আওয়াজ শুনে কমল জিজ্ঞেস করলো 
কে?
আমি, ওসি জামশেদ। 
কমল কিছুটা চমকালো।
দরজা খুলতেই জামশেদ সাহেব বললেন,
চলো, তোমাকে নিয়ে একবার দত্ত বাড়ি যাব। কমল শার্ট গায় দিয়ে বেরিয়ে এলো। 
এসময় বাড়িতে পুলিশ দেখে কিছুটা চমকালো প্রীতম দত্ত।
জামশেদ সাহেব— ঘুমাচ্ছেন নাকি প্রীতম বাবু।
প্রীতম — না, আসলে এখনো টাইম জোন টা মিলিয়ে উঠতে পারছিনা।এসময় তো ঘুমানোর অভ্যাস নেই।আমার মনে হয় আপনি জানতেন আমি জেগে থাকবো। আসুন ভেতরে আসুন।

 

জামশেদ সাহেব কমলকে বললেন প্রতিটা রুম ভালোভাবে ঘুরে দেখতে। কোথাও  কোনো কলম মিসিং কিনা খুঁজে দেখতে।

কমল কিছুটা কপাল কুচকালো তবে  কিছু বলল না।  লাইব্রেরি, ড্রয়িং রুম আর বেড রুম ঘুরে এলো। 
এরপর বলল, 
—দাদুকে দেখতাম সুন্দর একটা কালো ও সোনালী রঙের কলম ব্যবহার করতেন। কলমটা কোথাও দেখছিনা।দাদু সবসময় ওই কলমটাই ব্যবহার করে লিখতেন।

"—বাবার জন্মদিনে কলমটা আমিই গিফট করেছিলাম। প্যারিস থেকে আনা।বেশ পছন্দ করেছিলেন তিনি। তাকে উপহার দিয়ে খুশি করা বেশ কঠিন।ওই একবার এবং শেষবারই তাকে খুশি করতে পেরেছিলাম ",,,, গলা ধরে এলো প্রীতমের।
—আপনার বাবা ডায়রি লিখতেন প্রীতম সাহেব? 
—জ্বি। রোজনামচার মতো প্রতিদিন  দু লাইন  লেখা তার একটা অভ্যাস ছিলো।
—ডায়রিটা যে পড়তে হয়। ওখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
—আমি এনে দিচ্ছি।
মিনিট পাঁচেক পরে ডায়রিটা নিয়ে হাজির হলেন প্রীতম বাবু।
জামশেদ সাহেব ডায়রিটা  নিয়েই চলে আসলেন 
রাস্তায় হাটছে ওরা দুজন। 
এই প্রথম মুখ খুলে কমল প্রশ্ন করলো জামশেদ সাহেবকে। 
—আপনি  কলমের খোঁজ করলেন কেন? 
—বুদ্ধি খাটিয়ে বলো তো কেন।
—সামান্য কলমের জন্য তো দাদুকে কেউ খুন করবে না।ওটা স্বর্ণের ছিলোনা। 
—তোমার মনে হয় চুরির জন্য খুন হয়েছে?
—না, খুনি খুন করেই চলে গেছে।ঘরে সব স্বাভাবিক নিয়মেই যথাস্থানে  ছিলো। আর চুরি করতে হলে চোর আসত রাতে ।রাতে দাদু একা থাকেন বাড়িতে। একথা প্রায় এলাকার সবাই জানে।
—গুড, আর?
—দাদুর ক্ষত চিহ্ন আমি বেশ কাছ থেকে দেখেছি।মর্গে সেটা আরো ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছিলো।জায়গাটা গোল হয়ে ছিলো।তবে কি কলম দিয়েই দাদুকে,,

—হ্যাঁ।আমার যতদূর ধারণা  হত্যার অস্ত্র কলম।
—কলমের মাথার দিকের বেশ খানিকটা প্রায় দেড় কি দুই ইঞ্চি মতো বেশ সরু। এরপর বাকি অংশ মোটা কালো রঙের ।সরু অংশের রঙ সোনালী। । যে কেউ অল্প বল দিলেই,,,,, 
আর বলতে পারল না কমল। হয়তো দৃশ্য টা কল্পনা করে  কষ্ট হচ্ছে ওর।

জামশেদ সাহেব বললেন,
—আচ্ছা এখন বাদ দাও এসব। তোমার কথা বলো। তুমি কি পড়াশোনা করো? আর তোমার আত্মীয়স্বজন ও তো কেউ নেই।কিভাবে চলো?
— পড়াশোনা করিনা।দাদু কিছু কিছু শিখিয়েছেন। বাংলা দেখে পড়তে জানি।ইংরেজি সহজ আর্টিকেল হলে পড়তে পারি, । আর ব্যাবসায়ীক হিসাব নিকাশের ব্যাপারে কিছুটা আইডিয়া আছে।। দাদুকে গোয়েন্দা গল্পের বইগুলো আমিই পড়ে শোনাতাম। 
—এজন্যই তোমার কথা যথেষ্ট মার্জিত এবং শুদ্ধ। বই পড়ার অভ্যাস থাকায় সুন্দর শব্দ ব্যবহার করে কথা বলো। আমার মতে স্কুল পড়ুয়া অনেক ছেলে মেয়েও তোমার মতো  সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা।

—জামশেদ হকের পর্যবেক্ষণ দেখে বিমোহিত হলো কমল।লোকটা থানায় নতুন এসেছে। দাদুর মৃত্যুর দিন দশেক আগে।দেখে মনে হয়না উনি এত ভালো একজন অফিসার। কমলের ভরসা হতে লাগল।উনি নিশ্চয়ই দাদুর খুনিকে ধরে ফেলতে পারবেন।খুব শীঘ্রই।

—কমল!
ধ্যান ভাঙ্গে কমলের 
—তারপর বলো। কোথায় কাজ করো তুমি?

— সকালে এলাকায় পেপার বিলি করি।এ এলাকায় মাঝ বয়সি থেকে বৃদ্ধ বলতে গেলে সবাইই  পেপার পড়েন । এ পাড়ার কারো বাসায় দৈনিক পেপার পাবেন না এমন  বাড়ি খুজে পাওয়া দুষ্কর ।

—এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই যে শিক্ষা সচেতন তা তাদের কথা শুনেই বোঝা যায়। 
—জ্বি
আবার প্রশ্ন করলেন,
—আমি যে তোমার ব্যাপারে এসব আগেই জানি তোমার কি এমন মনে হয়নি ?
—আপনি যে সব জানেন  তা  আমি জানি। আর তাছাড়া আমি দাদুর এতো কাছাকাছি ছিলাম। সাসপেক্ট লিস্টে তো আমারও থাকার কথা।
— তুমি খুন করোনি।করতেও পারোনা।
হাঁটতে হাঁটতে কমলের বাসার কাছে এসে দাঁড়ালো ওরা দুজন 
জামশেদ হক কমলকে বললেন,

—তুমি চলে যাও কমল। আমি হেঁটে বাড়ি ফিরব।
কমল চলে গেলো।জামশেদ সাহেব দু পা না যেতেই কমলের কণ্ঠ ভেসে এলো,
কে? কে ওখানে? 
জামশেদ সাহেব দৌড়ে গেলেন। চাদর মুড়ি দেয়া এক লোক পালানোর চেষ্টা করছে। জামশেদ হক দৌড়ে গিয়ে ধরলেন লোকটাকে।বেশি বেগ পেতে হয়নি তাকে। সরু গলি দিয়ে লোকটা তেমন জোরে দৌড়াতে পারল না। তাকে ধরে নিয়ে আসা হলো কমলের ঘরে।


—কে, কে তুই।


লোকটি মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি শান্তি রাম।


কমলের চোখ কপালে উঠে গেলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।মুখের ভাব দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই।

 

—কে শান্তি রাম?  তোর পরিচয় কি? ধমকে জিজ্ঞাসা করলেন । 


উনি আমার বাবা শান্তি রাম, বলল কমল।

 

জামশেদ হক আঁচ করতে পেরছিলেন যে এই শান্তি রাম কমলের বাবা। তবুও চাচ্ছিলেন কমল নিজে থেকেই বলুক। এই ছেলে অনেক বছর তার বাবাকে দেখেনি। ছোট বেলায় দেখলেও চেহারা মনে থাকার কথা নয়। তবে নাম শুনে, পরিস্থিতি বিচার করে এক মুহূর্তেই ধরে ফেলেছে ইনি ওর বাবা।