সেই শেষ দেখা-
সেই সন্ধ্যেবেলায়,
যখন পাখিরা ফেরে নীড়ে,
আকাশ সেজে ওঠে গোধুলির আবীরে।
সেদিন সন্ধ্যেটাও এমনই ছিল বুঝি,
জানিনা, দেখিনি
সন্ধ্যের রূপ দেখার সময় ছিলনা সেটা
সেদিনের সেই শেষ সন্ধ্যেটা।
তখন তোমার শ্বাসে অনন্তের টান,
তোমার দেহ তখন শীতল হিম।
তখন আমি জেনে গেছি এই শেষ, সব শেষ।
আর হবেনা দেখা, কথা হবেনা,
কলকল স্বরে একসাথে হেসে উঠবনা,
তোমার সেই প্রাণখোলা হাসি আর শুনবনা কোনদিন,
সেই আদরের "মা" ডাকটি কানে আর বেজে উঠবেনা।
এমন সন্ধ্যেগুলোয় আমাদের কত গল্প, কত কথা,
চায়ের টেবিলে তুমুল ঝড় -
আর কখনোই ফিরে আসবেনা সেই সোনালী সময়।
আর কখনোই কোন খাবারের আবদার নিয়ে আসবেনা তুমি,
আমারও আব্দারের আর কোন জায়গা থাকবেনা।
আমরা আর কখনোই একসাথে ভোরবেলা হাঁটতে যাবনা-
তুমি আমার পেছনে পড়ে যাবেনা,
আমিও আর পেছন ফিরে ফিরে খুঁজবনা তোমায়।
সেই সন্ধ্যেটাই শেষ সন্ধ্যা।
এমন অনেক সন্ধ্যায় পিতা কন্যা-
রাজপথ ধরে গাড়ির ভিড় ঠেলে বাড়ি ফিরতাম,
কাজ ফিরতি পথ মেতে থাকত আমাদের হাসি গল্পে-
তখন কি ভেবেছিলাম এমনও বিষাদসন্ধ্যা আসবে
আমাদের এই জীবনগল্পে?
তোমার শেষ সেদিনের সেই শেষ সন্ধ্যেটা,
তোমার সাথে কাটানো আমার শেষ সন্ধ্যেবেলা
তোমার কাছে সেই শেষ বসে থাকা।
বুভুক্ষের মত হাত বুলোচ্ছি
তোমার হাতে - বুকে - কপালে,
হাঁপড়ের মত উঠছে নামছে তোমার বুক।
আমি জেনে গেছি এই শেষ-
আর কখনোই আমাদের দেখা হবেনা এ পৃথিবীতে,
আসমুদ্রহিমাচল কোথাও আর খুঁজে পাবনা তোমায়।
ধরিত্রীমাতা তখন তোমার অপেক্ষায়,
অনন্তলোকে তোমার প্রতীক্ষায় - পিতামহ পিতামহী।
সেই তোমায় আমার শেষ ছুঁয়ে দেখা-
আমার বড় প্রিয় সেই রক্ত মাংসের নশ্বর দেহখানি তোমার।
তোমার সেই শেষ প্রশ্ন- "কোথায় যাব আমি"?
আমার সেই শেষ উত্তর - " সুস্থ হয়ে এসো, শরীরটা যে ভাল নেই"।
যাবার আগে শেষ বিদায়, কপালে শেষ শ্রদ্ধা চুম্বন -
ভালবেসে শেষ সেই আদর।
শেষ সেই প্রার্থনা
"প্রভু যা ভাল তাই করো",
তোমার চরণকমলে আমার শেষ স্পর্শ,
অস্ফুটে আমার সে-ই উচ্চারণ -
ভাল থেকো বাবা, আবার দেখা হবে আমাদের।
এ পঙ্কিল পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে
অনন্তে যে যাত্রা তোমার - সে যাত্রা শুভ হোক।
আবার দেখা হবে
তোমার সাথে আমার - অন্য কোন লোকে,
সময়ের ভিন্ন আবর্তে।
ততদিন - আমার সবটুকু ভালবাসা নিয়ে-
ভাল থেকো বাবা।