পোস্টস

প্রবন্ধ

স্বরে “অ” তে ঐ “অজগর” ..

১৪ অক্টোবর ২০২৪

মাহ্‌দী যুবায়ের

এক লোক দিগম্বর হয়ে কাপড় রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। এই দেখে আরেক লোক জিজ্ঞেস করলেন যে ভাই আপনি এমনে কাপড় না পরে দৌড়াদৌড়ি করছেন কেন? লোকটি করুণ মুখে উত্তর দিল “ ভাই, আমি কাপড় পড়ার জন্য নিরিবিলি একটা জায়গা খুঁজছি” 

কৌতুকটা পড়ে যাদের সেন্স অব হিউমার খুব ভাল তারা সবাই নিশ্চয় হাসছেন, যাদের সেন্স অব হিউমার ভাল না, তাদের কথা অবশ্য ভিন্ন। যাই হোক আমি হাস্যরসের একটু বাইরে গিয়ে এই কৌতুকটাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।

 Priority বলে একটা বিষয় আছে, অর্থাৎ প্রথমে কোন কাজটা করা উচিত। কাপড় পড়ার জন্য যেমন নিরিবিলি স্থান দরকার এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি উপরের কৌতুকের পরিস্থিতিতে আগে কাপড় পড়াটা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে কেউ আমাকে কাপড় পড়ার সময় দেখছে সেই চিন্তা করার আগে আমাকে সবাই কাপড় ছাড়া দেখছে সেই চিন্তাটাই আগে আসা প্রয়োজন, তারপর না গোপনে কাপড় পড়ার প্রয়োজনীয়তা।

আমরা যারা বাঙালি আছি, তারা যে যেরকমই শিক্ষিত হোক না কেন, মনে করি কেউ পঞ্চম শ্রেণী পাশ, কেউ এস এস সি, কেউ আবার গ্র্যাজুয়েট আবার কেউ কেউ হন পি এইচ ডি হোল্ডার। যে যাই হোক না কেন, সবার পড়াটা কিন্তু শুরু হয়েছে সেই স্বরে “অ” তে ঐ “অজগর” থেকেই।

মূল কথায় যাবার আগে এই ধরণের তবলার ঠুক ঠাকের কারণ হল আপনি যার যেরকম উন্নতির ডিজাইন ই করেন না কেন সেই ডিজাইন শুরু হতে হবে একদম বেসিক থেকে। অর্থাৎ শুরু করতে হবে প্রথম থেকে। যেখানে প্রথমেই কাপড় পড়ার প্রয়োজনীয়তা সেখানে যদি আপনি কাপড় পড়ার জন্য নিরিবিলি জায়গা খুঁজতেই ব্যস্ত থাকেন তাহলে কিন্তু হবে না। এটি খুব ই সিম্পল ব্যাপার যে, আপনি গ্র্যাজুয়েশন ই করেন অথবা পি এইচ ডি আপনাকে সবার প্রথমে আপনাকে স্বরে “অ” তে ঐ “অজগর” পড়েই কিন্তু আসতে হবে, নাহলে কিছুই সম্ভব না।  

এখন প্রশ্ন টা হচ্ছে উন্নয়েনর জন্য হোক সেটা একটি মানুষ, একটি পরিবার অথবা একটি প্রতিষ্ঠান, সেইখানে স্বরে “অ” টা আসলে কী। 

এই ক্ষেত্রে আমার অভিমত হচ্ছে উন্নয়নের প্রথম সিঁড়ি টা হল নিজের বা নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস। “ আমি / আমরা পাড়ব” এই বিশ্বাস নিয়ে আসা। একটি মানুষ হল অমিত সম্ভাবনার দুয়ার। একটি মানুষ যতই জ্ঞানী এবং দক্ষ হোক না কেন তার যদি নিজের সামর্থ্যের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস না থাকে তাহলে সে তার সেই জ্ঞান অথবা দক্ষতা কাজে লাগাতে অক্ষম। আবার একজন কম জ্ঞানী এবং কম দক্ষ লোকেরও যদি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বিশ্বাস থাকে, নিজের ভিতর যে অমিত সম্ভাবনা সেটি বিকশিত করতে পারেন তবে সে তার কম দক্ষতা আর কম জ্ঞানের ঘাটতি খুব সহজেই দূর করতে পারে।

যতক্ষণ না পর্যন্ত এই বোধ আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি অর্থনৈতিক সাহায্যই দেন, অথবা কারিগরিক জ্ঞান, অথবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন, তার অথবা তাদের উন্নতি করা কঠিন হয়ে যাবে।

উন্নয়নের প্রায়োরিটির প্রথম বিষয় টাই হল মানুষের ভিতরে অন্তর্নিহিত যে অসীম ক্ষমতা, যে অমিত সম্ভাবনা বিরাজমান সেইটি পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা, যেটি থাকলেই সে অথবা তারা নিজেদের বাস্তবিক সামর্থ্যের সবটুকু প্রকাশ করে, সবতুকু দিয়ে তার বাস্তব উন্নয়ন করতে পারবে। 

প্রতিবেদনের সূচনাটা করেছিলাম একটি কৌতুক দিয়ে, শেষটা করছি এরকমই আরেকটা কৌতুকের বিশ্লেষণ দিয়ে।

এক লোক সবসময় সব খানে লেট করে যান। প্রোগ্রামে, অফিসে বাজারে সব জায়গায় লেট করে যাবার অভ্যাস উনার। এই নিয়ে তার স্ত্রী মহা ক্ষিপ্ত। তো একদিন তিনি অফিস থেকে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছেন “ জান, আজকে ৫ মিনিট দেরী করে অফিসে যাবার জন্য বেঁচে গেছি। আমি যাবার ঠিক ৫ মিনিট আগেই অফিসে আগুন লেগে আমার রুমের সবাই মারা গেছে। বস সবার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন” জবাবে স্ত্রী বলছেন, “ দেখেছ, তোমার লেট করার অভ্যাসের জন্য আজকে আমাদের ১০ লক্ষ টাকা মিস হয়ে গেল”।

এই কৌতুক টা পড়েও যদি কেউ না হেসে থাকেন তবে অতিসত্বর ডাক্তার দেখান উচিত। তবে উন্নয়ন কর্মী দের জন্য একটি সুন্দর উদাহরণ হোল এই কৌতুক। ১০ লক্ষ টাকার সাময়িক উন্নয়ন নয়,সঠিক উন্নয়ন করার জন্য প্রয়োজন স্বামীর মতন স্থায়ীত্তশীল উন্নয়ন। হোক না সেই স্বামী একটু লেট লতিফ  টাইপ, কী বা ক্ষতি এসে যাই তাতে!!!!!