মাহী সাহেব, বলেন তো ভিয়েতনামের রাজধানী কী?
গত ৯ দিন ধরেই ঘুম থেকে ওঠা মাত্র প্রশ্নের কামানের সামনে পড়তে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয় কৌন বনেগা ক্রোড়পতির প্রতিযোগী। যিনি অমিতাভ বচ্চনের মত অধীর আগ্রহে আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছেন তার নাম সাদেক আলী। কিছু মানুষের চেহারা দেখলেই যেমন বোকা বোকা লাগে তিনি হচ্ছেন ঐ প্রকৃতির। ২ মাস আগেই তার বয়স ৩০ পেরিয়ে গেছে, তারপরও কিছু চাকরীর পরীক্ষা বাকি থাকায় তিনি রবার্ট ব্রুসের দাদার ধৈর্য সহকারে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু যে নিচ্ছেন তাই না, তার কথার অধিকাংশ চাকরী কেন্দ্রিক এবং চাকরী পড়া কেন্দ্রিক।
আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে খুব আয়োজন করে আড়মোড়া ভাঙলাম। হাই তুলতে তুলতে দেয়ালের বিশালাকার টিকটিকির দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। লুঙ্গির ভিতর দিয়ে পশ্চাৎ অংশ চুলকিয়ে সাদেক সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি অধীর আগ্রহে উত্তর শুনতে অপেক্ষা করছেন। যেন এই উত্তরের উপর নির্ভর করছে আমি কোটি টাকা পাব কী না। আমি তার আগ্রহে জল ঢেলে দিয়ে বললাম, ভাই বাথরুমে পানি আছে?
সদেক বললেন, ভাই ১ নাম্বারটা করতে পারবেন, কিন্তু ২ নাম্বারটা পুরোপুরি করতে পারবেন না।
আমি বললাম তাহলে তো ভাই আর যাওয়া হল না। আমার এমনিতে পেট নরম। ১ নাম্বারটা করতে গিয়ে শেষে ২ নাম্বারটা হয়ে গেলে তো সাথে “গু” নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। সভ্যতায় উন্নত ইংরেজ বা আমেরিকান হলে কাগজ দিয়ে গু মুছে ফেলতাম, বাঙালি জাতির এই সমস্যা ১ টাই, পানি লাগবেই, শুকনা গু নিয়ে চলতে পারে না দেখেই আজ এত পিছিয়ে, কী বলেন ভাই সাহেব?
আমার মুখে গু এর মত শব্দ শুনে সাদেক সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন। উনি হতচকিত অবস্থায় থাকতে থাক, উনার সাথে পরিচয়ের গল্পটা বলে আসি।
১৯ নং জীবাণুর জন্য আগের মেসটা হুট করে বন্ধ হয়ে গেল। নতুন ঠিকানার জন্য খোঁজ দ্যা সার্চ চালানো অবস্থাতেই হঠাৎ নাজিমুদ্দিন রোডের মাথায় দেখি এক ভদ্রলোক লিফলেট বিলি করছেন। শুকনো শরীরের তুলনায় অনেক ঢুলা শার্ট, চশমার ডাটিতে স্কচটেপ এবং জুতায় দুইটা পট্টি লাগানো। সাধারণত যারা চর্ম ও যৌন রোগ অথবা অন্য কোন কিছুর লিফলেট বিলি করেন তারা দ্রুত বিলি করে স্থান ত্যাগ করলেও দেখলাম এই ভদ্র লোক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। আগ্রহ নিয়ে কাছে গিয়ে দেখলাম যে তিনি লিফলেটের মাধ্যমে কক্ষসঙ্গী মানে রুমমেট খুঁজছেন। এই রুমমেট খোঁজার পদ্ধতি আমাকে এতই অভিভূত করল যে আমি ওনার সাথে কক্ষসঙ্গী হয়ে গেলাম। যে বাসায় উঠলাম সেটির মত চিপা গলি ঢাকা শহরে আর দুটি নেই। নাম শীয়া গলি। সাপের মত একেবেকে, ড্রেনের উপর দিয়ে একইসাথে হেঁটে ও মানুষের গু দেখতে দেখতে যে বাড়িতে এসে উঠলাম তার মত সিঁড়ি আর কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। একটি সিঁড়ির ধাপের সাথে আরেকটি ধাপের উচ্চতা ৩ ফুট, প্রতিবার ৬ তলায় সময় মনে মনে একবার করে বলি “খাইছে আমারে”। যে বাসার পানির বিল এবং কারেন্ট বিল না দেওয়ার জন্য নিয়মিত ভাবেই কারেন্ট ও পানি থাকে না।
যা হোক, পাছায় যেমন গু নিয়ে বসে থাকা যায় না, পেটেও তেমন গু নিয়ে থাকা যায় না। এই গু পরিষ্কার এবং সাথে ফ্রি নাস্তার জন্য এখন আমাকে যেতে হবে বেদেনা খালার বাসায়। যদিও খালু সাহেব অধ্যাদেশ জারি করেছেন যে যদি তিনি আমাকে তার বাড়ির ত্রিসীমানায় দেখেন তাহলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ সদস্যদের দ্বারা তিনি আমাকে “গুম” করে ফেলবেন।
ভবিষ্যৎ গুম হবার সামান্য দুশ্চিন্তা নিয়ে নীচে নামলাম এবং নামা মাত্রই পুলিশের জেরার মুখে পড়লাম।
মাস্ক বিহীন আমাকে দেখা মাত্রই উসাইন বোল্টের রেকর্ড ভঙ্গ করে দুজন পুলিশ ভাই আমার তিন ফুট সামনে এসে আমার রাস্তা আটকে দিলেন। মাস্ক পরে থাকায় কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। একজনের চোখ কুঁচকানো বিরক্তিতে যেন তিনি একটি চিকার দিকে তকিয়ে আছেন, আরেকজন যিনি সম্ভবত উনার সহকারী লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছেন।
উনারা কিছু বলার আগেই, আমি সটান দাঁড়িয়ে, গলা পরিষ্কার করে বক্তৃতার ভঙ্গীতে বললাম, সম্মানিত ও মানবদরদী পুলিশ ভাইয়েরা আমার, আমি শপথ করে বলিতেছি যে, আমি “তালানিচে” দেখিতে রাজপথে আসি নাই।
যিনি লাঠি ঘুরাচ্ছিলেন, তিনি বললেন , কী দেখতে নামেন নাই?
তালানিচে।
এটা কী জিনিস?
এটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে গরম খবর।
এলএসডি নাকি ব্রাউন মাশরুম এর মত কিছু?
পুলিশ ভাই, আপনি জনগণের সেবক হয়ে যদি না জানেন তাহলে আমাদের সাধারণ জনগণের কী হবে?
পাশের জন হুঙ্কার দিয়ে বললেন, থাবড়া না খেতে চাইলে বল এই তালানিচে কী?
লকডাউন স্যার। লক মানে তালা আর ডাউন মানে নিচে। দুইটা মিলে হয় তালানিচে। সামান্য একটু বাংলা চর্চা করলাম আরকি স্যার। সামনের বিসিএস পরীক্ষায় কাজে দিবে।
পুলিসের সাথে মশকরা করিস। এই তোর মাস্ক কই?
স্যার আমি যে পীরের অনুসারী, তিনি নাক এবং পা ঢাকতে মানা করেছেন।
ছোট পুলিশ, বড় পুলিশের কানে কানে গিয়ে বললেন, স্যার মনে হয় এলএসডি খায়। বাদ দেন।
বড় পুলিশ ইতিমধ্যে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে পায়ে জুতো নেই। আমাকে বললেন, এই জুতো কই তোর?
স্যার, পীর সাহেব পড়তে মানা করেছেন। খুব গরম পীর স্যার।
এই তুই এলএসডি খাস? এলএসডি কী জানিস?
জানি স্যার।
কী জানিস বল?
স্যার, এটির পূর্ণরূপ হচ্ছে ডি- লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড। এটি বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি হয়। এটি স্বচ্ছ ও গন্ধহীন। একে সাইকোডেলিক ড্রাগস বলা হয়।
আমার কথা শুনে বড় পুলিশ সাহেব একটু তব্ধা খেয়ে গেলেও ছোট পুলিশ উৎসাহ নিয়ে বললেন, স্যার পকেট চেক করি? বিশেষ বিশেষ সময়ে পুলিশেরা পকেট চেক ও পকেটে বিশেষ কিছু ঢুকিয়ে দিতে পারঙ্গম।
তিনি পকেট চেক করে অবাক হয়ে বললেন, স্যার এর তো পকেট নাই পাঞ্জাবিতে?
বড় পুলিশ বললেন, তুই কোথায় যাচ্ছিলি?
বললাম স্যার, খালার বাসায়, পল্লবীতে?
এখনতো জরুরি অবস্থা ছাড়া বের হওয়া নিষেধ, জানিস না?
জানি স্যার। আমি শুধু জরুরি না, ১০ নাম্বার জরুরি কাজ করতে যাচ্ছি।
কী কাজ?
স্যারের পেটের গু পরিষ্কার করা।
কী বললি? আবার বল।
স্যার গু। শুদ্ধ বাংলায় বললে বলতে হয় কোষ্ঠ। আঞ্চলিক ভাষায় গু। জরুরি অবস্থায় প্রমিত বাংলা ভুলে আঞ্চলিক বাংলা বলে ফেলেছি দেখে দুঃখিত।
এই তুই থানায় চল।
স্যার থানায় গিয়ে কী কোষ্ঠ বের হবে?
তুই চল, তোর কোষ্ঠ বের করতেছি।
স্যার আপনি মহান। পুলিশ জনগণের বন্ধু। সেই পুলিশ যদি জরুরি মুহূর্তে জনগণের উপকার নাকরে তাহলে তো হবে না। ধন্যবাদ স্যার।
চলবে…।