পোস্টস

গল্প

গল্পঃ অবিশ্বাস্য তবুও---, লেখকঃ আবদুল মজিদ

১৫ অক্টোবর ২০২৪

আবদুল মজিদ

# গল্প (ভৌতিক )    
#অবিশ্বাস্য_তবুও--- 
# কলমেঃ আবদুল মজিদ 

 

পর্ব-২ 
ভাবছি চোখে কোন ভ্রম দেখলাম কিনা? আবার চিন্তা করলাম লোকটা হয়তো হাতে কালো কোন রেক্সিনের গ্লাভস পরেও তো থাকতে পারে। আজকাল তো অনেক সবজি বিক্রেতারা ওগুলি পরে থাকে।

নিকটে আসেপাশে কোন মানুষ জনও দেখছি না। লোকটা চলে যাচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি।

আমার মনে হচ্ছে তার পা দুটো মাটি স্পর্শ করছে না। অথচ সে হাওয়ার উপর কদম রেখেই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে।

আমি তাকিয়ে আছি ভয়কাতর দৃষ্টি নিয়ে----!

হঠাৎ  আমার স্ত্রীর ফোন থেকে কল এলে আমি ভয়ার্ত চিন্তার জগত থেকে ফিরে এলাম।

ফোন ধরতেই আমার স্ত্রীর কণ্ঠে দারুণ উৎকণ্ঠার স্বর ভেসে এলো------!

---হ্যালো এতো রাত করছ কেন? আমার বই'য়ের পান্ডুলিপিটা কিবরিয়া ভাইকে দিয়ে এসেছ? নাকি আজও সেটা ফেরত নিয়ে আসলে?

---না কিবরিয়া ভাই'য়ের ওখানে আজও যেতে পারি নাই?

---আমার মনে হয় আসলে তুমি চাচ্ছ না আমার বইটা প্রকাশিত হোক।

---এটা তুমি কি বলছ? তোমার বই ছাপা না হোক এটা আমি চাইবো কেন?

---তা হলে তুমি কেন বার বার বাহানা করছ? এবার নিয়ে তিন তিন বার আমি পান্ডুলিপিটা তোমাকে দিয়েছি। ঐ ভদ্রলোক বার বার ওটার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। পান্ডুলিপিটা হাতে পেলেই তো বইটা ছাপিয়ে ফেলবে না। এর সাথে তো অনেক গুলি কাজ জড়িত। বইটা উনি অমর ২১শে বই মেলায় উনার স্টলে আনবেন।

---তা আমি বুঝতে পারছি তবে আমার ঝামেলাটা তো তুমি কিছুই শুনলে না?

---হ্যাঁ, বল শুনছি।

---খুশির খবর হলো আজ অনেক গুলি অর্ডার পেয়েছি আর সেগুলির স্যাম্পল কালেকশন করতে অনেক দেরি হয়ে গেল। তাই কিবরিয়া ভাই'য়ের বাসায় যেতে পারি নাই তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি আগামী কাল  প্রথমে কিবরিয়া ভাইকে তোমার বইয়ের  পান্ডুলিপিটা দিয়ে তারপর অফিসে যাব। আর একটা কথা হলো রাস্তায় আসার সময় বাজারের পাশে এক মাছ ওয়ালার নিকট হতে আড়াই হাজার টাকায় বেশ বড় বড় কেজি সাইজের দুইটা ইলিশ মাছ  কিনেছি। তবে আমার ভয় লাগছে। মন চাইছে মাছ দুটো ফেলে দিয়ে চলে আসি।

---কেন? মাছ ফেলে দিবে কেন? এতো রাতে মাছ পেলে, তরতাজা তো?

---মাছ একদম ফ্রেশ, তবে মাছ ওয়ালার শরীর থেকে বিকট গন্ধ বের হচ্ছিল। কোন মানুষের শরীরে এমন গন্ধ ভাবা যায় না!!

---তুমি আমাকে হাসাইলা। এক জেলে সারাদিন মাছ বিক্রি করে তার শরীর থেকে গন্ধ বের হবে না, তবে কি পারফিউমের ঘ্রাণ বের হবে? ঐ লোক কি তোমার মতো সকালে সুঘ্রাণ সাবান মেখে গোসল করে প্যান্ট শার্ট পরে,গায়ে সেন্ট লাগিয়ে অফিসে যায়?

---আরে শুধু তাই নয়, লোকটা নিচের দিকে তাকিয়ে মাছের থালাটি আমার দিকে ধরে রাখলো। একবার আমার মুখের দিকেও তাকালো না!

---তাহলে তো আমি বলবো লোকটা কোন ঝক্কি ঝামেলার মানুষ নয় বরং খুবই ভদ্র।

---তোমাকে আমি বুঝাতে পারছি না? এতো ফ্রেশ মাছ অথচ আমি যে দাম বললাম তাতেই দিয়ে  দিলো।

---দিবে না কেন? এতো রাতে সে খরিদদার পাবে কোথায়?

---আমি মাছের দাম দিলে সে প্লেট পেতে দিল, হাত বাড়িয়ে নিতে চাইল না!  

---আমি বলবো লোকটা খুবই ভদ্র।

---পরে আমি বললাম---, চাচা টাকাগুলি গুণে নেন। তারপর সে যখন হাত বাড়ালো, তার হাত দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছি।

---দারুণ মর্দ পুরুষ! এক জেলের হাত দেখে ভয় পেয়ে গেলে? এই সাহস নিয়ে বাহিরে যাও কি ভাবে?

---আরে তোমাকে কি বলবো! আমার মনে হলো তার হাতের তালু কালো কালো লোমে ল্যাপটে আছে!!

---তুমি ভুল দেখেছ। মানুষের হাতের তালুতে কোন লোম থাকে না? লোকটা হয়তো কালো রেক্সিনের গ্লাভস পরে থাকতে পারে। আজ কাল তো অনেক শাকসবজি বিক্রেতারা হাতে গ্লাভস পরে থাকে। লোকটা সারাদিন মাছ বিক্রি করতে করতে হাত ভিজা থাকে তাই সে হয়তো গ্লাভস পরে ছিল। তুমি তার মুখ দেখেছ?  

--- না, তার মুখ কালো মাক্স দ্বারা  ঢাকা ছিল। তা ছাড়া সে তো আমার দিকে তাকায় নি আর একটি কথাও বলেনি।

---মাছ বিক্রি করলে কি হবে, আমি বলবো লোকটা যথেষ্ট স্বাস্থ্য সচেতন আর যেহেতু সে তোমার দিকে তাকায় নি আমি বলবো সে খুবই বিনয়ী এবং ভদ্র।

---আরে আমি টাকা দিলাম আর টাকা গুলি সে গুণেও নিল না!

---তুমি কি বলতে চাও? টাকা গুণে না নিলে সে কি মানুষ না? সে একজন সৎ লোক। যে নিজে সৎ সে অন্যকেও সৎ ভাবে, তাই সে তোমার টাকা গুণে নেয় নাই।

---আরেকটা ব্যাপার তোমাকে বলি লোকটা যখন জঙ্গলের পাশের কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছিল---, তখন আমার মনে হলো হেঁটে যেতে তার কোন পা মাটিতে স্পর্শ করছে না। আমার মনে হলো মাটি হতে এক ফুট উপর দিয়ে লোকটা দ্রুত হাওয়ায় হেঁটে হেঁটে অদৃশ্য হয়ে  গেলো!!

---আমার মনে হয় এগুলি তোমার দৃষ্টি ভ্রম। তাছাড়া এখান থেকে আমি তোমাকে কিইবা পরামর্শ দেব? তুমি এখন কি করতে চাচ্ছ? সে মানুষ হোক বা ভূত পিশাচ হোক সে তো চলে গেছে। এখন তুমি মাছ ফেলে দিলেই বা কি হবে আর নিয়ে আসলেই বা কি হবে?  আর মাছ ফেলে দিলেই কি তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? রাস্তায় কোন গাড়ি চলছে নাকি?

---হ্যাঁ হেড লাইট দেখা যাচ্ছে, একটা গাড়ি মনে হয় আসছে এদিকে। আচ্ছা আমি আসছি।

---আচ্ছা ফোন রাখলাম, সাবধানে এসো।

আমি মোটর সাইকেল স্টার্ট দিলাম। নিজের কাছে ভীষণ ভয় লাগছে। দু-পাশে গাছপালা মাঝে মাঝে বাঁশঝাড়। পাকা রাস্তা,তবে বেশ সরু। অনেক খানি দূরে দূরে দু-একটা বাড়ি ঘর। এলাকা নিরব আর নিস্তব্ধ।

বেশ কিছু দূর যাওয়ার পর, হঠাৎ আমার মনে হলো পাশের একটা বাঁশঝাড় প্রচন্ড ভাবে আন্দোলিত হচ্ছে! মনে হলো যেন হুড়মুড় করে পুরো বাঁশঝাড়টি এক্ষুনি আমার উপর ভেঙ্গে পড়বে!

মূহুর্তে আমি অনুভব করলাম প্রচন্ড ঝাকুনি দিয়ে আমার হুন্ডার পিছনের সিটে বিশাল ভারি একটা বস্তু চেপে বসেছে! এদিকে হুন্ডার ব্যালেন্স ঠিক রাখতে আমার দারুণ কষ্ট হচ্ছে।

আমি আরও অনুভব করলাম বস্তুটা লোমশ এবং সে একদম  আমার পিঠ ঘেঁষে বসে আছে।

আর তার গায়ের লোমগুলি টিশার্ট ভেদ করে আমার গায়ে এসে বিঁধছে।

ভীষন ভারি মনে হচ্ছে মোটর সাইকেলের পিছনের অংশটা। 
সেই সাথে দারুণ বিকট একটা গন্ধ ভেসে আসছে আমার নাকে!

গন্ধটা আমার কাছে অবিকল ঐ মাছ ওয়ালার গায়ের গন্ধের মতোই লাগছে।

ভীষন ভয়ে শরীরটা কাঁপছে। ভবছি আমার মটর সাইকেলটি যতখানি ওজন মনে হচ্ছে তাতে হঠাৎ কোন চাকা বার্ষ্ট হয়ে গেলে সকালে হয়তো এখানে আমার পরিত্যাক্ত মটর সাইকেল আর আমার ক্ষতবিক্ষত মৃত্যু দেহটিই পাওয়া যাবে।
                          চলবে------