বিভিন্ন জাতীয় দিবস এলেই রাষ্ট্রীয় ছুটির কথা বলা হতো। কিন্তু ইশকুল কলেজ খোলা থাকত বাধ্যতামূলকভাবে। ধরুন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ওই দিনটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিলিভারদের নিঃসন্দেহে ভালো লাগে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী যারা প্রত্যক্ষভাবে বঙ্গবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে এসেছে, তাদের কি পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসা ভালো লাগে?
কিন্তু ওই জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা/কর্মচারীরাও দিবসটি এলে বঙ্গবন্ধুর জন্য কেঁদেকেটে আকুল হয়েছে। সেই কান্নাটা কি হৃদয় থেকে ছিল? একদম না! জামায়াত এখন বলে দিচ্ছে তারা ফেরাউনের ডেরায় নিজেদেরকে মুসা রূপে বড় করেছে।
আওয়ামী লীগের পতনের অন্যতম বড় কারণ হলো দেশের সব মানুষকে তারা আওয়ামী লীগ ভাবত। এখন যেমন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, বিএনপি বা জামায়াত বলে, 'আমাদের সাথে আঠারো কোটি মানুষ আছে।'
কোনো দিবস এলেই ইশকুল কলেজে রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। রচনার বিষয় ঘুরেফিরে ওই একটাই, 'বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের গুণকীর্তন!' এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের দেয়া হতো, অসমাপ্ত আত্মজীবনী বা কারাগারের রোজনামচা' জাতীয় একই ধরণের বই। একটা পর্যায়ে আওয়ামী রেজিমের শেষের দিকে ওসব প্রতিযোগিতায় স্টুডেন্ট পাওয়া যেতো না। একই রচনা একই বই কাহাতক আর ভালো লাগে?
শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বিরক্তি নিয়ে বলতে শুনেছি, রাসেল দিবস কেন পালন করা লাগবে?
বস্তুত শেখ হাসিনা তাঁর পারিবারিক বিয়োগান্তক হিস্টরি সর্বজনে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এগুলো করে বরং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্ত্রীর রাজনৈতিক আত্মত্যাগকে চর্বিতচর্বণ হিসেবে পুনঃ পুনঃ উপস্থাপন করে সবার কাছে তেতো বানিয়ে ফেলেছিলেন। এসবেরই জের হিসেবে ৫ আগস্ট একশ্রেণীর দেশবাসীর কাছে বঙ্গবন্ধু ভয়াবহভাবে হেয় হয়েছেন। স্বাধীনতার স্থপতির এমন অপমান কিছুতেই পাওনা ছিল না।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত পারিবারিক দিবসগুলো ফরমান জারি করে বাতিল করে দিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি ঐতিহাসিক ৭ মার্চও বাতিলের খাতায় চলে গেছে।
এসব দিবসের ধার না ধেরে শেখ হাসিনা সরকার যদি দেশে সুশাসন নিশ্চিত করত, জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করত, অপরাধীর প্রপার শাস্তি দিত, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতো, একশ্রেণীর আমলা, এমপি, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি এবং ব্যাংক লুটপাটের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত না করত, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে আস্থায় রেখে তাদের স্বাধীন মতামতের সুযোগ দিত; তাহলে এমন ভালোমানের শাসক কার কন্যা, এই চিন্তা থেকেই মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করত। রচনা লিখত, কবিতা আবৃত্তি করত আর গলা খুলে গান গাইত।
শেখ হাসিনার ভুলগুলো একাত্তরকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চার মটোও এখন রিসেট বাটনের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি আজকের এবং আগামীর শাসকদের জন্যও বড় শিক্ষা। আপনারাও ভেবে দেখবেন শেখ হাসিনার পথটা যেন আপনাদের সমান্তরালে না হাঁটে। ইতিহাসের ট্রাজিক শিক্ষা এটাই যে, আমরা ইতিহাস থেকে এতটুকু শিক্ষাও গ্রহণ করি না।
-ফারদিন ফেরদৌস
১৬ অক্টোবর ২০২৪