পোস্টস

প্রবন্ধ

মা‌য়ের ভা‌লোবাসা ও বেদনাগু‌লি

১৭ অক্টোবর ২০২৪

মো. আখতারুজ্জামান

মা ও সন্তানের অটুট বন্ধন: পৃথিবীর পরম শান্তি ও দুঃখের উৎস।

মা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মা‌য়ের আঁচ‌লের ত‌লে যে সন্তান শা‌ন্তি পায়, সে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। মা‌য়ের মমতার স্পর্শে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে আনন্দময়। মা শুধুমাত্র সন্তানের দেখভাল করেন না, তিনি সন্তানের জন্য আশীর্বাদের এক অবিনাশী উৎস। কিন্তু যার মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তার দুঃখ সীমাহীন। সেই শূন্যতা কোনো কিছুতেই পূরণ হয় না। মা হারানোর বেদনাই সবচেয়ে কঠিন। তাই মাকে ভালোবাসা, যত্ন করা এবং তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাকে শ্রদ্ধা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

মা শব্দটি যেমন ছোট, তেমনি এর অর্থের গভীরতা অসীম। পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র মানুষ, যার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ ও নির্ভেজাল। মা‌য়ের আঁচ‌লের ত‌লে যে শা‌ন্তি সন্তান পায়, তা পৃথিবীর আর কোনো কিছুতে পাওয়া সম্ভব নয়। মায়ের কাছে সন্তানের নিরাপত্তা, স্নেহ ও ভালবাসা এমনভাবে জড়িত থাকে যে, তা শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে অপরিসীম প্রভাব ফেলে। মায়ের সান্নিধ্যে থাকা মানেই যেন এক নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে সব কষ্ট, সব দুঃখবোধ ভুলে থাকা যায়।

মা‌য়ের আঁচ‌লের ত‌লে শান্তির আশ্রয়ঃ

মায়ের আঁচল সন্তানের জন্য এক বিশাল আশ্রয়স্থল। শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ধাপে মা সন্তানের পাশে থাকেন, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। মায়ের কোলেই শিশু প্রথমবার শান্তি অনুভব করে, সেখানেই সে প্রথমবার ভালোবাসা ও মমতার সংজ্ঞা বুঝতে শেখে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এ সম্পর্ক কোনো নিয়ম-কানুনের বালাই মানে না, এটি স্বাভাবিক ও সহজাত। যেকোনো ধরনের দুঃখ বা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মা‌য়ের আঁচ‌লের মমতার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছু এত কার্যকরী হতে পারে না।

মায়ের স্নেহ শিশুকে মানসিক ও শারীরিক উভয়দিক থেকেই শক্তিশালী করে তোলে। মায়ের শিক্ষা ও আদর্শ সন্তানের নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলে, যা তাকে জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। মা শুধু একজন জন্মদাত্রী নন, তিনি সন্তানের প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু এবং সারা জীবনের জন্য একজন নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।

মা যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেনঃ

মায়ের স্নেহময় উপস্থিতি যে সন্তান ভোগ করতে পারে না, তার জীবনে এক অসীম শূন্যতা বিরাজ করে। মা‌য়ের বিদায়ে সন্তানের জীবন নিঃসঙ্গ ও বেদনাময় হয়ে ওঠে। মা চলে যাওয়ার পর সন্তানের জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা কখনোই পূরণ হয় না। মাকে হারানোর বেদনা এমন এক মানসিক আঘাত, যা সারাজীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয়। পৃথিবীর কোনো সুখ কিংবা সফলতা মায়ের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে না।

মা যখন সন্তানের জীবনে থাকেন না, তখন সেই সন্তানের জীবনের প্রতিটি দিনই যেন এক দুঃখের গল্প। মায়ের অনুপস্থিতিতে সেই শান্তি, সেই স্নেহময়তা আর কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। যত বড়ই হওয়া যাক না কেন, মায়ের শূন্যতা মনে একটা অপূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করে। যে মা পৃথিবী থেকে বিদায় নি‌য়ে‌ছে, তার সন্তানের কাছে দুনিয়ার সব কিছুই যেন অর্থহীন হয়ে পড়ে।

মায়ের ভূমিকা: সন্তানের জীবনের ভিত্তি

মা শুধু সন্তানকে ভালোবাসেন না, তিনি তাকে গড়ে তোলেন। তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি আদেশ-নিষেধ সন্তানের জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে। মা সন্তানের চরিত্রে এমন মূল্যবোধ তৈরি করেন যা তাকে সারা জীবন সঠিক পথে চালিত করে। মা সন্তানের জীবনের প্রধান অভিভাবক। তিনি সন্তানের ভুলগুলো শুধরে দেন, তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার পাশে থাকেন।

একটি প্রবাদ আছে, “মা ভালো তো দুনিয়া ভালো।” এই কথার বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। মা যদি সন্তানের জীবন সঠিকভাবে পরিচালনা করেন, তবে সেই সন্তান জীবনে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। মায়ের আদর্শ সন্তানকে জীবন চলার পথে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। মা যতই কষ্ট করুক না কেন, সন্তানের সুখ ও সাফল্যই তার প্রধান লক্ষ্য।

মা‌য়ের সান্নিধ্যের গুরুত্বঃ

মায়ের সান্নিধ্য সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। মা সন্তানের মানসিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেন। যখন সন্তান কোনো সমস্যায় পড়ে, তখন মায়ের পরামর্শ ও ভালোবাসা তাকে আবার নতুন করে শুরু করার সাহস দেয়। মায়ের সাহচর্যে সন্তান নিজেকে নিরাপদ ও ভালোবাসায় আবদ্ধ মনে করে, যা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

শৈশব থেকেই মায়ের সান্নিধ্যে থেকে সন্তান তার নৈতিকতা ও জীবনবোধের শিক্ষা পায়। মা‌য়ের ভালোবাসা ও স্নেহের মধ্য দিয়ে সন্তানের জীবন গঠিত হয়। একজন মায়ের আদর্শ অনুযায়ী, তার সন্তান জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। সন্তান যতই বড় হয়ে উঠুক না কেন, মায়ের প্রয়োজনীয়তা কখনো ফুরিয়ে যায় না।

মা হারানোর শূন্যতাঃ

মা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর সন্তান এক গভীর শূন্যতায় নিমজ্জিত হয়। মায়ের অভাব একজন মানুষের জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে, যা কখনোই পূরণ করা সম্ভব নয়। এই শূন্যতা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুভূত হয়। সন্তানের জীবনে সফলতা থাকলেও মায়ের অনুপস্থিতি সেই সফলতাকে পূর্ণতা দেয় না। মাকে হারানোর কষ্ট এমন এক অনুভূতি, যা ব্যক্তিগত বেদনার চেয়ে অনেক বড়। এটা এমন এক বেদনা, যা প্রত্যেক দিন মনের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে।

সন্তানের জীবনে মায়ের যে অবদান, তা পৃথিবীর আর কেউ পূরণ করতে পারে না। মা চলে যাওয়ার পর যে অভাব সৃষ্টি হয়, তা জীবনের সব দিকেই প্রভাব ফেলে। এই শূন্যতা শুধুমাত্র মা‌য়ের কাছে যে স্নেহ, সেবা ও ভালোবাসা পাওয়া যেত, তার জন্যই নয়, বরং মায়ের সঙ্গে থাকা আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্যও।

 

উপসংহারঃ

মা-সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও গভীর সম্পর্ক। মায়ের স্নেহময় স্পর্শ, তার ভালোবাসা এবং তার শিক্ষাই সন্তানের জীবনের অন্যতম ভিত্তি। মা‌য়ের আঁচ‌লের ত‌লে যে শান্তি ও স্নেহ পাওয়া যায়, তা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে, মা‌য়ের বিদায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেদনা, যা একজন সন্তানের জীবনকে চিরকাল দুঃখে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মাকে ভালোবাসা ও সম্মান করা আমাদের সবার কর্তব্য। মায়ের উপস্থিতি ও তার অবদান কখনোই ভোলা সম্ভব নয়।

 

আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন প্রত্যেক জী‌বিত মা/বাবা‌কে ঈমা‌নের স‌হিত নেক সন্তা‌নের অধী‌নে সু‌খে শা‌ন্তি‌তে রাখুন। যে সমস্ত মা/বাবা দু‌নিয়া থে‌কে বিদায় নি‌য়ে অন্ধকার কব‌রের বা‌সিন্দা হ‌য়ে গে‌ছে, তা‌দের প্রত্যেক‌কেই জান্না‌তের উচ্চ মাকাম দান করুন, তা‌দের কবর গু‌লো‌কে জান্না‌তের বাগীচা বা‌নি‌য়ে দেন। ‌এবং সকল সন্তান‌দের‌কে মা/বাবার ১৪ টি হক স‌ঠিকভা‌বে আদায়/পালন করার তৌ‌ফিক দান করুন।

 

--> আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।