মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীকে জীবদ্দশায় যদি জিজ্ঞাসা করা হতো, আপনি কি 'মুহাম্মদ ইউনূস বা নাহিদ ইসলাম' সরকারের কাছ থেকে মৃত্যু পরবর্তী রাষ্ট্রের তরফে মর্যাদাকর সম্মাননা প্রত্যাশা করেন? কী উত্তর দিতেন মিজ চৌধুরী?
তিনি নির্ঘাত বলতেন, 'আমি মরে গেলেও তাদের দেয়া সম্মান চাই না। তাদের কোনো সাংবিধানিক বৈধতা নাই। তারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার স্থপতি মানতে অস্বীকার করেছে।'
যদিও দলপ্রীতি বজায় রাখতে গিয়ে নিজের নেত্রীর ভোটারবিহীন নির্বাচনকে অসাংবিধানিক মনে করবার সাহস দেখাতে পারেননি তিনি। তবু ইন্টেরিম গভমেন্টকে তিনি অবৈধ সাব্যস্ত করতেনই।
আমরা মনে করি এই বিষয়টি অনুভব করেছে ইন্টেরিম গভমেন্ট। মিজ চৌধুরী যা মন থেকে চান না, তা কেন দিতে যাবে ইউনূস সরকার? ভালোই করেছে। জীবিত মানুষকে বিব্রত করা আর মৃত মানুষকে বিব্রত করা একই কথা।
আওয়ামী লীগ যেভাবে ড. ইউনূসকে মামলার নামে হেনস্তা করেছে, পদ্মায় চুবনি দিতে চাইছে; সেটার প্রতিশোধ যদি প্রধান উপদেষ্টা না গ্রহণ করেন তাহলে বাঙালি মানুষ হিসেবে তাঁর নাম সার্থক হবে কিভাবে?
বীর মতিয়া চৌধুরী ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে থেকে ভুল করেছিলেন। ঠিক একই ভুল করেছিলেন দেশের সকল আমলা, আরক্ষা বাহিনীর সদস্য, বিচারক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংবাদিকরা। বস্তুত লাস্ট রেজিমে হার্ডকোর বিএনপি ছাড়া বাকিরা আত্মস্বার্থে লোকদেখানো আওয়ামী লীগ বনে গিয়েছিল। সেইসব আওয়ামী লীগ যদি এখন বাছাই করতে যান, ঠগ বাছতে গা উজারের দশা হবে। সর্বোপরি জুলাই বিপ্লবে বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ মতিয়া চৌধুরী রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগে ইন্ধন দিয়েছেন এমন প্রোভ কেউ দেখায়নি।
রাজনৈতিক জীবনে হাজার ভুল থাকতে পারে, এখন যারা ক্ষমতায় আছেন ভুল তাদেরও হবে। কিন্তু মতিয়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে কোনো ভুল করেননি। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করে 'বাংলাদেশ' নামের আলাদা ভূখণ্ড ও জাতিসত্তা নিয়ে না আসলে আপনারা যারা মসনদে বসে মাতাব্বরি করছেন, তাদেরকে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেই বসবাস করতে হতো। বৈষম্যের জুতার মালা গলায় পরিধান করে সমস্ত আয় রোজগার পশ্চিম পাকিস্তানের কোষাগারেই জমা রাখতে হতো।
একজন বীরকে সম্মান দিতে পারেননি, তাঁকে কবর থেকে বঞ্চিত করেছেন; এসব কাজ ভিন্নমতাদর্শীদের প্রতি আওয়ামী লীগ করত। আপনারা যেহেতু অতীতের এঁটো কাদা পথের বাইরে এসে সুশোভন পথে হাঁটতে পারছেন না, এর রিপিটেশনও আপনাদেরকে বইতে হবে বৈকি।
রাষ্ট্র কী করল না করল তাতে কিছুই যায় আসে না। বীরের বন্দনা করে ইতিহাস।
আওয়ামী আইকন রাষ্ট্রপতির হাতে বায়াত গ্রহণ করতে আপনাদের বিবেকে বাধেনি। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণের বেলায় আপনাদের যত বাছবিচার!
ভাগ্যচক্রে নিজের জন্য আলাদা করে একটা কবর পেলেন না, আইন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেন না মতিয়া চৌধুরী। তাতে মিজ চৌধুরীর আসলে কিছুই আসল গেল না। তাঁর সাদাসিধা যাপিত জীবন, কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দুর্নীতির উর্ধ্বে থাকা এবং একাত্তর পূর্ববর্তী ন্যায়ের পক্ষে রাজনৈতিক দৃঢ়তা মানুষ মনে রাখবে।
দোষ গুণ মিলিয়েই মানুষ।
অগ্নিকন্যা ভালো থাকুন। বিদায়।
লেখক: সাংবাদিক
১৮ অক্টোবর ২০২৪