পোস্টস

পোস্ট

ফল অফ মারিউপোলঃ পর্ব ২

১৮ অক্টোবর ২০২৪

Md. Rezaul Islam

মূল লেখক Md. Rezaul Islam

কয়েকদিনের মধ্যে মারিউপলের শতকরা ৮০ ভাগ দখলে নিলেও ইউক্রেনের পিছু হটা প্রায় ২৫০০ আজভ সেনা এবং তাদের মিত্র পশ্চিমা ভাড়াটে সেনা যাদের মধ্যে ২৮ বছর বয়সি “এইডান আসলিন” অন্যতম তাঁরা আজভস্টল কারখানাতে আশ্রয় গ্রহন করে এবং সেখান থেকে  এক শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই আজভ সেনা সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। ৫ই মে ২০১৪ সালে গড়া এই সেনা ব্যাটালিয়ন ইউক্রেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী ডানপন্থি স্ব-ঘোষিত নব্য-নাজি যারা হিটলারের মতবাদে বিশ্বাসী। তাঁরা এতটাই ডানপন্থী যে, ২৮ ফেব্রুয়ারি আল-জাজিরা একটি সংবাদে দেখানো হয় আজভ রেজিমেন্টের একদল সেনা রুশ চেচেন সেনাদের (যারা মূলত মুসলিম) হত্যায় যেসব গুলি ব্যবহার করছে সেই গুলিতে শুকরের রক্ত ও চর্বি মিশিয়ে দিচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত এই সংগঠনটি ইউক্রেন যুদ্ধে এক অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে। পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করছে।

 

 

যুদ্ধের শুরু থেকে রাশিয়া মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বললেও তাঁরা কোন ভাবে রাজি হচ্ছিল না। ২১ এপ্রিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর সেনাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,

         “আপনারা মারিউপোলের স্টিল কারখানা এমনভাবে ঘিরে রাখবেন যেন সেখান থেকে একটি মাছিও বের হতে না পারে।“   

তীব্র সংঘর্ষ চলাকালে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে কয়েকশ বেসামরিক নাগরিককে বের করা প্রক্রিয়া। দফায় দফায় আলোচনার পর অবশেষে জাতিসংঘ এবং রেড ক্রসের সহায়তায় ২৭ এপ্রিল রুশ-ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১লা মে থেকে ধারাবাহিকভাবে সাধারণ নাগরিকেরা তাদের পছন্দমত এলাকাগুলোতে যেতে থাকে এবং ৭ই মে সকল সাধারণ নাগরিককে সেখান থেকে সরানো সম্ভব হয়। 

 

জাতিসংঘ কর্তৃক সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারের মধ্যেই রাশিয়া চাচ্ছিল যেন ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করে কিন্তু তাঁরা বার বার প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছিল তাই ৫ই মে রাশিয়া স্টিল প্ল্যান্টের অপর অংশ থেকে তীব্র আক্রমন শুরু করে। এরই মধ্যে ১৮মে দোনেৎস্ক প্রধান ডেনিস পুশিলিন সাংবাদ মাধ্যমকে জানান,

          “আমরা ইউক্রেনের সেনাদের শেষবারের বলেছি হয় তাঁরা আত্মসমর্পণ করুক নতুবা এখানেই তাদের মরতে হবে কিন্তু তাদের প্রধান কমান্ডার সেটাকে প্রত্যাখান করেছেন তাই আমরা সেনাদের অভিযান আরো জোরদার করতে বলেছি।“

 

১৮ই মে রাতেই আহত ২৬৫ জন ইউক্রেনীদের সেনাদের প্রথম দলটি আত্মসমর্পণ করেন যার মধ্যে ৫৩ জনই ছিলেন মারাত্মকভাবে জখম। এই আত্মসমর্পণ থেকে ধারনা করা হচ্ছিল ইউক্রেনীয় সেনাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। ২১ শে এপ্রিল মারিউপোলের ইউক্রেনিয়ান বাহিনীর কমান্ডার মেজর সেরহিভ ভলিয়ানা একটি ভিডিও প্রাকাশ করেন যেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, 

      “এটিই হয়ত আমার শেষ বার্তা। আমাদের জরুরী সরবারহ শেষ হয়ে আসছে। রুশ সেনারা আমাদের চারপাশ থেকে ঘীরে ফেলছে এবং আমরা মাত্র কয়েকঘন্টা বা দিন টিকে থাকতে পারব।“

 

অবশেষে ওইদিন ইউক্রেনের প্রায় ১৮০০ সেনার আত্মসমর্পণের মাধ্যদিয়ে ৮২ দিনের সিজ অফ মারিউপলের পরিসমাপ্তি ঘটে। রাশিয়া ঘোষণা করে, সর্বমোট ২৪৩৯ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন যাদের মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সেনা, আজব ব্যাটালিয়ন, পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড এবং উল্লেখযোগ্য বিদেশি ভাড়াটে সেনা। তাদেরকে বন্দি অবস্থায় রাখা হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ইতিমধ্যে ৯০০ জনকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্দি ইউক্রেনীয় সেনাদের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে সেটা সময় বলে দিবে।