Posts

নন ফিকশন

ইসরায়েলের দশ মিথ্যা, পর্ব ১

October 19, 2024

সরকার সাহাব

Original Author ইলান পেপ

Translated by সরকার সাহাব

48
View

পর্ব১:

ইস,রায়েলের দশ মিথ্যা: 
১. ফিলিস্তিন ছিল ফাকা ভুখন্ড
প্রপাগাণ্ডা : ১৬ শতকে ফিলিস্তিন ছিল ইহুদি প্রধান এলাকা,এর বানিজ্যিক প্রানকেন্দ্রগুলো ছিল ইহুদি বসতি এলাকায়। অটোমান শাসনের গুনগত অবনতির পর ফিলিস্তিন ব্যাপক অবহেলার স্বীকার হয়।১৮ শতকের শেষে জমির মালিকানা অনাবাসী ভূস্বামীদের হাতে চলে যায় যা বর্গাচাষিরা চাষ করত। কর ছিল অত্যাধিক ও খামখেয়ালি। গ্যালিলি ও কারমেলার বৃহৎ অরন্য বৃক্ষ শূন্য হয়ে যায়। কৃষিজমি জলাভূমি ও মরুভূমিতে পরিনত হয়। ফিলিস্তিন ছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। রাজকীয় বিভিন্ন উদ্যোগের কারনে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং বিরান ভুমিতে পরিনত হয়

উত্তর: স্বয়ং ইস্রায়েলী পন্ডিতরা এই প্রপাগাণ্ডাকে চ্যালেঞ্জ করে। ডেভিড রস্মান, এমনন কোহেন, বেন এরিয়েল এর গবেষণায় দেখা যায়, ফিলিস্তিন ছিল একটা মুসলিম প্রধান সমৃদ্ধশালী  আরব সমাজ।  কিছু কর্মব্যস্ত শহর বাদে এটা ছিল মুলত গ্রাম্য এলাকা। 
বিচ্ছিন হওয়া দুরের কথা, অটমান সাম্রাজ্যের অংশ হওয়ায় তা অন্য সংস্কৃতির সাথে  যুক্ত। পরিবর্তন ও আধুনিকতার সাথে আগে থেকেই পরিচিত থাকায় যায়নিস্ট আগমনের আগেই ফিলিস্তিন জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে।দাহের আল উমর এর মত শাসকের হাতে হাইফা, তিবরিজ, একবি ইত্যাদি শহর পুনর্জীবন লাভ করে। ইউরোপ এর সাথে বানিজ্য করে উপকুলীয় শহর বন্দরের সমৃদ্ধি আসে।
প্রতিবেশি দেশের সাথে বানিজ্য হত অভ্যন্তরীণ অঞ্চল দিয়ে। 
জায়নিস্ত আসার আগেই ফিলিস্তিন ছিল বিনাদ আল শামের বিকাশমান অংশ যাতে ছিল সমৃদ্ধ কৃষি,ছোট ও ঐতিহাসিক কিছু শহর যা ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস্থল হয়ে উঠে। 
উনবিংশ শতাব্দীর শেষে জনসংখ্যা বেশ বড়সড় হয় যার ক্ষুদ্র একটা অংশ ছিল ইহুদি। মনে রাখতে হবে, এই দল ছিল জায়নবাদি ধারণার বিরুদ্ধে। উনবিংশ, বিংশ শতকে জাতি ধারনার মত শক্তিশালী নির্নায়ক ধারণার সংস্পর্শে এক নতুন আত্মপরিচয়ের সুচনা  হয়। জাতি ধারণা আমেরিকান মিশনারীদের দ্বারা আসে। শিক্ষিত এলিটরা এই ধারণা গ্রহণ করে যা তাদেরকে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন ও পরিশেষে অটোমান থেকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার দিকে ধাবিত করে।
আরবে সেকুলারিজম ছিল জাতিবাদি প্রক্রিয়ার অংশ। ভুমি, ইতিহাস,সংস্কৃতির ভাগাভাগির উপর ভিত্তি করে সং্খ্যালঘুরা সেকুলারিজমকে গ্রহণ করে।
ফিলিস্তিনের এলিট মুসলমানদের সাথে খ্রিস্টানদের একটা জোট হয় যা ১ম  বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত একটা মুসলিম - খ্রিস্টান সমাজ গড়ে তোলে।  

মো. মুসলিহ ও রাশিদ খালিদী দেখিয়েছেন,  ১৮৮২ সালের আগেই ফিলিস্তিন এর এলিট ও আমজনতার মাঝে জাতীয় আন্দোলন ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল।খালিদি দেখিয়েছেন,  দেশাত্মবোধ, স্থানীয় আনুগত্য, আরববাদ,ধর্মীয় চেতনা ও উচ্চস্তরের শিক্ষা - এ কয়েকটি উপাদান মিলে নতুন জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠে। যায়নবাদের বিরোধিতা ফিলিস্তিনের জাতীয় চেতনার অন্তর্ভুক্ত হয় অনেক পরে। মর্ডানিজম, অটোমান পতনের পর ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইউরোপের লোলুপ দৃষ্টি ফিলিস্তিনের জাতিবাদি চিন্তাকে শক্তিশালী করে।এর অন্যতম নিদর্শন হল ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও পরে রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ফিলিস্তিনের উল্লেখ। 
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতেও  ফিলিস্তিনের সাংস্কৃতিক অবস্থান ছিল প্রকট যার সাথে ছিল পরস্পরের সাথে জুড়ে থাকার ঐক্যবদ্ধ অনুভূতি।  বিংশ শতকের শুরুতে ' Filastin ' নামক পত্রিকার  উপস্থিতি প্রমাণ করে ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের দেশকে কিনামে ডাকতো। নিজস্ব ভাষারীতি,  সতন্ত্র প্রথা, আচার আচরণ নিয়ে তারা বিশ্ব মানচিত্রে ফিলিস্তিন নামক দেশে বাস করত।
ফিলিস্তিন ছিল দুই প্রদেশে বিভক্ত - উত্তর ফিলিস্তিন ( বৈরুত শাসিত) , দক্ষিণ ফিলিস্তিন ( জেরুজালেমে শাসিত)।  ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ শাসনের শুরুতে উত্তর ও  দক্ষিণ ফিলিস্তিন এক হয়ে যায়। যেমন একই বছর মসুল,বাগদাদ ও বসরা মিলে আধুনিক ইরাকের জন্ম হয়। পারস্পারিক পরিচিত , ভৌগোলিক বন্ধন ( উত্তরে লি ভানি নদী, পূর্বে জর্ডান নদী, পশ্চিম ভূমধ্যসাগর)  মিলে উত্তর ও দক্ষিণ ফিলিস্তিন একক সামাজিক সাংস্কৃতিক একতার জন্ম দিয়েছে।

Comments

    Please login to post comment. Login