৫ অগাস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ বিভূঁইয়ে ফ্লাই করার পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন তিনবাহিনী প্রধানকে সাথে নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, "আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি"।
এখন কিনা রাষ্ট্রপতি বলছেন, "তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তাঁর কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই"। মানবজমিন সস্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
মানবজমিনের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন জনতার চোখে প্রকাশিত 'উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...' এখন রীতিমতো ভাইরাল। সব পত্রিকার টপ নিউজ।
১০ অগাস্ট দ্য ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন করেছিল। সেটির শিরোনাম ছিল, 'সাংবিধানিকভাবে শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী—এ দাবি সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, 'পৃথিবীর কোনো সংবিধান লেখার সময় এটা কল্পনা করা হয় না যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সাধারণ মানুষকে গ'ণহত্যা করবে কিংবা গ'ণহত্যা করে দেশকে সংকটে ফেলে পালিয়ে যাবে কিংবা পালিয়ে অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেবে।’
'শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি'—এই দাবি প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দুটি ক্ষেত্র ছাড়া বাকি সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির আলাপ-আলোচনা গোপনীয়তার মধ্যে হয়। কাজেই তারা গোপনীয়তা রক্ষা করে কী আলোচনা করেছেন, তা তারাই জানেন। তাদের মধ্যে একজন যখন বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তখন সেটাই গ্রহণযোগ্য ও চূড়ান্ত।'
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, '৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, 'সরকার গঠন ও ক্ষমতাচর্চার দিক থেকে '৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রায় ৯০ শতাংশ মিল আছে। সেই সময়েও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনসহ যা যা করা হয়েছিল তার কোনোটিই তৎকালীন সংবিধানে ছিল না। পরবর্তীতে দ্বাদশ সংশোধনের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়।'
আমরাও ধরে নিচ্ছি, রাষ্ট্রপতি কী বলেছিলেন, আর এখন কী বলছেন এটি মুখ্য নয়। গণ-আন্দোলনের পর থেকে যা কিছু ঘটে চলেছে তাদের স্বার্থেই সেটির বৈধতা দিয়ে দেবে পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার। আর যদি এরমধ্যে ম্যাজিক্যালি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা ফিরে পায়, তারা কী করবে? ওই যে আগে যেমনটা করে এসেছে তাই তাই করবে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যের তো ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই। কোথাও লেখাজোকাও নেই।
আপাতত আমরা আমাদের মু'সলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কু'রআনের একটি আয়াত সন্নিবেশিত করে আলাপ শেষ করি।
«وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ، إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَآئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُوْلًا»
‘‘যে বিষয়ে তোমার পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পেছনে পড়ো না তথা অনুমানের ভিত্তিতে কখনো পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয়ই তুমি কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় এ সবের ব্যাপারে (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’’।
(বানী ইস্রাঈল : ৩৬)
-ফারদিন ফেরদৌস
২১ অক্টোবর ২০২৪