Posts

গল্প

মিনিগল্প ধাক্কা

October 21, 2024

কমলেশ রায়

নিখিল বড় খুঁতখুঁতে স্বভাবের। এজন্য জীবনে তাকে কম মাশুল দিতে হয়নি। বয়স একান্ন চলে, এখনও তিনি বিয়ে করতে পারেননি।

পারবেন কী করে? কনে তার কিছুতেই পছন্দ হয় না। কোনো না কোনো খুঁত ঠিক তার চোখে ধরা পড়ে। আর সেকারণে বর সাজাও হয় না। শুধু মেঘে মেঘে তার বেলা বয়ে যায়।

শুরু ভালো হলে নাকি শেষ ভালো হয়। ছাই ভালো হয়! পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম দেখেছিলেন চাঁদপনা একটি মুখ। সেই প্রথম কনে দেখতে যাওয়া। দেখেই মুখটা একদম মগজে গেঁথে গেল। তখন নিখিল বিএ পাস করে অনেক চেষ্টার পর সবে একটা চালকলে চাকরি জুটিয়েছেন। বিয়ে করাকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। পাত্রীর বাবা পত্রপাঠ বিদায় করে দিলেন। চালচুলোহীন ছেলের সঙ্গে কিছুতেই মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

ধাক্কা বেশ জোরালো ছিল। সামলে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল নিখিলের। এরপর চালকলের চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে কাজ শুরু করেন পোশাক কারখানায়।  ফিরতে শুরু করে কপাল। এখন তার নিজের চারটি কারখানা। চারটে ডাল-ভাত খাওয়ার সুবন্দোবস্ত অনেক আগেই তার হয়েছে। ব্যবসায়ী মহলে তার দারুণ সুনাম।

ব্যর্থতা মোটা দাগে একটাই। এখনও বিয়ে করতে পারেননি। দেড় ডজন বার যাত্রা করেছেন কনে দেখতে।   কোনো যাত্রা সফল হয়নি। সুফল মেলেনি। কী মুশকিল! সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই ঘুরে ফিরে সেই চাঁদমুখ সামনে চলে আসে।

বিচ্ছিন্ন ভাবে এতদিন প্রায়ই প্রস্তাব এসেছে । মন নড়েনি । এই তো কিছুদিন আগে বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে প্রস্তাব এলো। তার সুশ্রী উচ্চশিক্ষিত একমাত্র কন্যার জন্য। মেয়েটি 'শর্ট ডিভোর্সি '। ভদ্রলোক কিছুই লুকাননি। বন্ধুরা বলল, উত্তম প্রস্তাব। এবার রাজি হয়ে যা। নিখিলের মন তবুও সায় দিলো না।

যে জেলা শহরে জীবনের প্রথম চালকলে চাকরি নিয়েছিলেন, সেখানেই আজ নিখিলের আসতে হয়েছে ছোটমামার পাল্লায় পড়ে। কনে দেখতে। ক্ষয়িষ্ণু পরিবার। তবে মেয়েটি নাকি নজরকাড়া।

ড্রইং রুমে বসে আছেন নিখিল ও তার ছোটমামা। মেয়েটি আসল, সঙ্গে তার দুই বান্ধবী। দেখেই চমকে উঠলেন নিখিল। সেই একই চাঁদপনা মুখ।

মেয়ের মা ঢুকলেন একটু বাদেই। পাত্রকে দেখে বিষম ধাক্কা খেলেন তিনি। এক ঝটকায় ঘুরে দাঁড়ালেন। ছুটে গেলেন পাশের রুমে, শাশুড়ির শয্যা পাশে।

কী বৌমমা, তুমি এখানে কেন? ও ঘরে যাও। অসুস্থ শাশুড়ি মেজাজি গলায় বললেন।

মা, এ বিয়ে কিছুতেই হবে না। আপনার ছেলেকে আপনি বারণ করে দেবেন।

কেন পাত্র নাকি বিরাট বড়লোক ? বয়স একটু বেশি হলেও দেখতে নাকি কম বয়সিই দেখায় ? তাহলে অসুবিধা কোথায়?

অসুবিধা আছে মা।

কী অসুবিধা?

এই লোকটা আমাকেও দেখতে এসেছিল।

ক্ষীণ দৃষ্টিতেও শাশুড়ি স্পষ্ট দেখতে পেলেন, রাগে লাল হয়ে ওঠেছে বৌমার চাঁদপনা মুখ। তার চোখ দুটো টলটল করছে।

Comments

    Please login to post comment. Login