পোস্টস

গল্প

Murder Mystery গল্পঃ লাস্ট কেস পার্ট ০৭

২১ অক্টোবর ২০২৪

Salsabil Khushi

মূল লেখক Salsabil Khushi

জামশেদ হক বসলেন রণবাবুর ডায়রি নিয়ে।যদিও ডায়রিটা অত বেশি আগের নয় তবুও যদি কোথাও কেস সম্বন্ধে কিছু লেখা থাকে সে আশায়।

 
একটু পর রশিদ কেস ফাইল নিয়ে হাজির হলো।
একটা খুনের কেস।

 
"খুনী মনীষ চক্রবর্তী। খুন করেছে নবনী নামের একটি মেয়েকে। মেয়েটিকে  বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো মনীশ। যে কারণেই হোক মেয়ে বা তার পরিবার রাজী না হওয়ার খুবই চতুর পরিকল্পনা করে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা মনে হলেও এটা ছিলো খুন। রণ বাবু কেসটা চমৎকারভাবে তদন্ত করেছেন। রায়ে মনীশের ফাসির আদেশ হয়।"

জামশেদ হক রণবাবুর  কেসটা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে এলাকার পুরনো লোকজনদের সাথে কথা বলেন। রণ বাবুর পুরনো কাজের লোক হরিদা এবং সে সময়ে কেস রিলেটেড সামান্য পরিমাণে ও কিছু বলতে পারবে এমন কাউকেই তিনি বাদ দেননি। এভাবে গোটা একদিন চলে গেলো।

 

পরদিন  বিকেলে খবর এলো শান্তি রাম মারা গেছে।ছুটে গেলেন জামশেদ সাহেব।। 
শান্তি রাম পড়ে আছে মাটিতে। খুব সম্ভবত চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। হাতে কিছু একটা ছিলো। হাত বাঁকা হয়ে আছে।সম্ভবত গ্লাস বা এজাতীয় কিছু।আত্মহত্যার আলামত নেই।বিষ খেয়ে মৃত্যু। 


কমল বিমর্ষ হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রচন্ড অনুতাপে সে দগ্ধ। হয়তো তার উচিত ছিলো  বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করা। লোকটা তার ভুল বুঝে ফিরে এসেছিলো। এমন হবে জানলে কমল কখনোই খারাপ ব্যবহার করতো না।

 

পোসমর্টেম করা হলো। পেটে  জুস পাওয়া গেছে যা থেকে ধারণা করা যায় সম্ভবত এর সাথেই বিষ মেশানো ছিলো। রিপোর্ট আসলে পুরোটা ক্লিয়ার হবে।

 

রাতে জামশেদ সাহেব সবাইকে ডেকে পাঠালেন মুকেশ বাবুর ড্রয়িং রুমে।


বাড়ির সবাই উপস্থিত। রণ বাবুর রাধুনি হর দা,  প্রীতম দত্ত,কমল,মুকেশ বাবুর বাড়ির সকলে।
এক কোণে ছোট্ট একটি টুলে বসে আছেন মুকেশ বাবুর স্ত্রী। রোগা-পাতলা শরীর। 


মুকেশ বাবুর নাতি বসে আছে তার ছেলে মৃদুলের কোলে। "দেবশিশু" বলে যে প্রচলিত কথা আছে তা যে বাস্তবেও হতে পারে এ শিশুটিকে না দেখলে তা কেউ বুঝতে পারবে না।


মৃদুলের চেহারায় তার বাবার থেকে মায়ের ছাপ ই বরং বেশি বলা চলে। উচ্চতা বাবার মতো অতোটা নয়। চেহারায়ও মা মা ভাবটা বেশি।

 

নিরবতা ভেঙে প্রীতম বাবু বলে উঠলেন,
আমাদের সবাইকে এখানে ডাকার কারণ কি ?  
 

জামশেদ হক— যেখান থেকে সব কিছুর শুরু সেখানেই শেষ করার জন্য ডেকেছি। 


—তারমানে?


—আমি আপনাদের সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।  ঘটনার শুরু থেকে আমি ধীরে ধীরে সব ব্যাখা করব।কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে আমি তা করার সুযোগ দিব।দয়া করে মাঝখানে কেউ কথা বলবেন না।

 

ঘটনার দিন।

 

বেলা আনুমানিক দুপুর পৌনে দুইটার দিকে রণবাবু তার বেড রুমে বসে  ডেইলি ডায়রি লিখছিলেন। খুনের আগে তিনি যে ডায়রি লিখছিলেন তা বোঝা যায় তার অসমাপ্ত শেষ লেখাটি দেখে।রণ বাবু নিজেই সময় উল্লেখ্য করেছেন সেখানে।শেষ লেখাটি তেমন জরুরি কিছু নয় বিধায় উল্লেখ্য করছিনা।প্রীতম বাবু ডায়রিটা কি বালিশের নিচে ছিলো? 

 

—জ্বী।আমি লাইব্রেরি রুম, আলমারি, বেডসাইড টেবিল সব খুঁজে যখন পাইনা তখন দেখি বাবার বালিশ স্বাভাবিকের থেকে একটু উঁচু হয়ে আছে।ওটা সরাইতেই ডায়রিটা পাই।কিন্তু ডায়রিটা যে বালিশের নিচে ছিলো আপনি সেটা আন্দাজ করলেন কিভাবে?

 

—খুনের দিন মোটামুটি সব রুমই আমি ঘুরে দেখেছি।তখন বালিশের ব্যাপারটা চোখে পড়েনি। যদি বিছানায় বা কাছে কোনো টেবিলের উপর ওটা থাকতো তবে অবশ্যই তদন্তের খাতিরে সেটা জমা নেয়া হতো। আর যেহেতু দুপুরবেলা, প্রাতঃরাশের পর আরামের জায়গা তো বিছানাই। সে কারণেই ধারণা করলাম। তাছাড়া হাতের লেখা দেখেও বোঝা যায় সেটা টেবিলে বসে ধীরে সুস্থে লেখা নয়। কোনো অসমতল স্থানে রেখে লিখলে যেমন হয় তেমন।হাতের উপর বা কোলের উপর। 


যাই হোক,এ সময় খুনি এসে তাকে ডাক দিলে তিনি তৎক্ষনাৎ ডায়রিটা বালিশের নিচে রেখে হাতে কলম নিয়েই ড্রইং রুমে পৌছান। তৎক্ষণাত বলছি এ কারণে , যদি তা না হতো তবে তিনি কলমটা ডায়রির মধ্যে রেখে ধীরে সুস্থে এগিয়ে যেতেন। এছাড়াও খুনিকে নক করতে হয়নি কারণ ঘরের সদর দরজা খোলাই ছিলো । কমল রোজ দুপুরের দিকে দাদুর সাথে দেখা করতে আসে।মূলত তিনি কমলের অপেক্ষাই করছিলেন কিন্তু খুনি এসে ডাক দিলে ধারণা করা যায় তিনি বেশ অবাক হয়েই ছুটে যান দেখা করতে।

 

এখন কথা হচ্ছে কে এসেছিলো যার জন্য রণবাবু লেখা শেষ না করেই উঠে যান।হয়তো খুনি  এমন কেউ যাকে তিনি একদম ই আশা করেন নি।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী খুনের সময় দুপুর সোয়া দুইটা বা তার আশেপাশে। তার মানে কথা বলার এক পর্যায়ে  মিনিট দশেকের মধ্যেই খুনি উত্তেজিত হয়ে যায়।আর  হাতের কাছে থাকা কলম দিয়ে রণবাবুর গলায় আঘাত করে বসে। এবং দ্রুতই সে স্থান ত্যাগ করে । যাওয়ার সময় হত্যার অস্ত্র অর্থাৎ কলমটিও সঙ্গে  নিয়ে যায়।

 

দুপুর ২.৩০টা নাগাদ কমল দেখা করতে আসে রণবাবুর সাথে।আর তখনই সে  রণবাবুর মরদেহ দেখতে পায়। এরপর যা যা হয়েছে তা সকলেরই জানা।

 

সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে জামশেদ সাহেবের কথা।

 

হত্যার অস্ত্র কলম সন্দেহ করার কারণ ফরেনসিক মতে অস্ত্র চিকন পাইপ আকৃতির কিছু। ক্ষতস্থান দেখে বোঝা যায় যে এর ব্যাস খুব একটা বেশি নয়।কলম হওয়ার সম্ভাবনা ধরে নিয়ে বাড়িতে এসে খোঁজ করে জানতে পারি, সবসময় ব্যবহার করা রণবাবুর কলমটা মিসিং। ব্যাস, আর সন্দেহ রইল না হত্যার অস্ত্র কলম হওয়া পসিবল। 


আমার ধারণা খুনি খুন করার মতলব নিয়ে আসেনি।একারণেই কলমের মতো একটা জিনিস হত্যার অস্ত্র হয়ে দাঁড়ালো। কলমটা খুঁজে পাওয়া গেলে সেখানে রণবাবুর রক্তের ট্রেস ও পাওয়া যাবে। তবে আমার ধারণা কলমটা খুনির কাছেই আছে।

 

এবার আসি শান্তি রামের কথায়।
রণবাবু কয়েক মাস আগে শান্তি রামকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠান।শান্তিরাম নিজ ঠিকানায় না থাকায় চিঠি টা সময় মতো পায়নি।সে যখন আসে, সে আসে রাতের আধারে।এবং কমলের বাসার আশেপাশে উঁকি ঝুঁকি দিতে গেলে আমরা তাকে ধরে ফেলি।তখনই সে আমাদের কাছে জানতে পারে রণবাবু খুন হয়েছে। শান্তি রাম কখনো ভাবেনি যে খুনি তাকেও খুন করতে পারে। শান্তি রামকে যে জুস দেয়া হয়েছিলো তা খুনিই দিয়েছিলো। খুনি শান্তি রামের ও পরিচিত। খুনি জুস নিয়েই শান্তি রামের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। বেচারা শান্তি সরল মনেই সে জুস পান করে মৃত্যুবরণ করে।আর খুনি বরাবরের মতোই অতি সন্তপর্ণে কেটে পরে।

 

মুকেশ বাবু? ডাকলেন জামশেদ হক 
 

হকচকিয়ে উঠেলেন তিনি।
 

আজ্ঞে? 
 

আপনার সাথে রণবাবুর শেষ কবে কথা হয়েছিলো? 
 

খুনের দিন সকাল বেলা।
 

কি নিয়ে কথা হয়েছিলো?
 

তেমন কিছু না। জেঠু দোতলার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি নমস্কার করে কলেজে চলে যাই। ব্যাস,এইটুকুই।

—দিন পনেরো আগে আপনার সাথে রণবাবুর কথা হয়েছিলো। কথা শেষে আপনি বেশ ঘাবড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। হর দা আপনাকে  দ্রুত রণবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেন।

 

 সেদিন আপনাদের মাঝে কি কথা হয়েছিলো?

 

হরদা সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তাই অস্বীকার করার মতো  আর কোনো সুযোগ থাকল না মুকেশ বাবুর।