পোস্টস

গল্প

Murder Mystery গল্পঃ লাস্ট কেস পার্ট ৮

২৩ অক্টোবর ২০২৪

Salsabil Khushi

মূল লেখক Salsabil Khushi

জামশেদ হকঃ মুকেশ বাবু, মানুষের অতীতের যেকোনো পাপ একদিন না একদিন উন্মোচিত হবেই। সেটা চাপা দিতে হলে নতুন করে আরেকটা অন্যায় করতে হয়।

 

মৃদুলঃ স্যার আপনি কি বলতে চাচ্ছেন একটু পরিষ্কার করে বলুন। এসবের সাথে বাবার কি সম্পর্ক?

 

জামশেদ হকঃ খুনটা তোমার ওই জেঠা একা করেননি। এর সাথে তোমার বাবাও যুক্ত ছিলেন।মুকেশ বাবু  আপনি চাইলে নিজের মুখে সবকিছু স্বীকার করে আমাকে হেল্প করতে পারেন।একনাগাড়ে কথা বলে আমি ক্লান্ত। 


মুকেশ চক্রবর্তী নিরস গলায়  বলা শুরু করলেন,

 


মনীশ আর আমার বয়সের পার্থক্য এক মাস।আমাদের নাম ও তাই মিলিয়ে রাখা হয়েছে। সহদর ভাইয়ের মতোই বড় হয়েছি আমরা। ও আমার কেবল ভাই না ছিলো বন্ধুও।আমার পিসি অল্প বয়সে বিধবা হন।তারপর থেকে পিসি আমাদের বাড়িতেই থাকতেন।জন্ম থেকেই যেহেতু মনীশ আমাদের বাড়িতে ছিলো তাই পদবিও আমাদেরটাই ব্যবহার করতো।মনীশ "চক্রবর্তী"।যে মেয়েটা খুন হয় তার নাম নবনী।মনীশ ওকে পছন্দ করতো।আমাদের তুলনায় নবনীর পরিবারকে দরিদ্রই বলা চলে।কিন্তু তবুও মনীশের সাথে নবনীর বিয়ে দিতে তারা রাজি হয়নি ওর পরিবার। নবনীর পরিবার যখন মনীশকে মেনে নেয়নি আমি দেখেছি ও কিভাবে ভেঙে পড়েছিলো। আমি ওর ওই অবস্থা সহ্য করতে পারছিলাম না।নবনীকে  খুনের আইডিয়া মনীশকে আমিই দেই।ও যদি তোর না হয় তবে ও কারো নয়। পরিকল্পনাও আমারই ছিলো। যথারীতি সব কাজ শেষ হয়। সবাই ধারণা করেছিলো নবনী আত্মহত্যা করেছে।আমিও খুশি ছিলাম এ ভেবে যে কেউ কিছু ধরতে পারেনি।কিন্তু সব কিছু ভালো ভালো শেষ হলো না।মনীশ রাগের মাথায় খুন করলেও নবনীর মৃত্যুতে ওর ধ্যান ভাঙ্গে।ওকে বাচাঁতে গিয়ে উলটো মেরে ফেলি আমি। খানা, গোসল, ঘুম সব বাদ দিয়ে সে এক যাযাবর জীবন যাপন শুরু করে মনীশ। এর কিছুদিন পর নবনীর কেস কোর্টে ওঠে। হঠাৎ কেন আবার এসব হলো জানতে গিয়ে শুনলাম রণপ্রসাদ বাবু কেসটার তদন্ত শুরু করেছেন।আর তারপর সব উলটে পালটে যায়। রণবাবু কেসটা তদন্ত করেন আর তাতে মনীশের দোস ধরা পরে, ওর  ফাঁসি হয়।  সবকিছুর দায় ও একা  নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। আমি আমার একমাত্র ভাই আর বন্ধুকে হারিয়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে পরি।মনীশ কে হারিয়ে আমার পিসি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।আমার পরিবার যেন এক মূহুর্তেই এলোমেলো হয়ে গেলো। আর এর জন্য দায়ী একমাত্র রণপ্রসাদ দত্ত।ঠিক করি এর প্রতিশোধ একদিন আমি নেবো ।কিছুদিন পর আমার বিয়ে হয়ে যায়।প্রতিশোধের ইচ্ছা থেকেই  রণবাবুর বাড়ি ভাড়া নেই।আর তাকে শাস্তি দেয়ার উত্তম সুযোগের অপেক্ষায় থাকি ।

 

তার মানে আপনি আপনিই আমার বাবাকে খুন করেছেন ?—কাঁপতে কাঁপতে বলল প্রীতম দত্ত


মুকেশ বাবু নিশ্চুপ

 

জামশেদ হকঃপরিকল্পনা তেমনই ছিলো। যেকারণেই হোক এত  বছর পরেও মুকেশ বাবু তার প্রতিশোধ নিয়ে উঠতে পারেননি। হয়তো সাংসারিক ব্যাস্ততায়।

 

 

মূলত রণবাবু সারাদিন একাই থাকতেন।কেবল গল্পের বই পড়ে তার সময় কাটতো না।তাই তিনি কিছুদিন আগে  পুরনো কেস ফাইল নিয়ে আবার বসেন।আর সেসময় তিনি তার জীবনের চরম ভুলটি ধরতে পারেন।তিনি এতদিন পর একটা গুরুত্বপূর্ণ লীড খুঁজে পান পুরনো সেই কেসে। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারেন নবনীর খুনটা মনীশের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় এর পিছনে নিশ্চয়ই অন্য কেউ আছে।আর মনীশ এ কাজে যদি কারো হেল্প নেয় তবে তা মুকেশ বাবুর থেকে উত্তম আর কেউ হতে পারেনা। পাশাপাশি তিনি মনীশকে যতটুকু চিনেছেন  তাতে তার পক্ষে এত নিখুঁত পরিকল্পনা করাও পসিবল না।  সুতরাং তিনি আবার তদন্ত শুরু করলেন।সব সত্য উদঘাটন হলে মুকেশ বাবুকে নিজ ইচ্ছায় স্যারেন্ডার করতে বলেন রণবাবু। এসব শুনেই সেদিন ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান মুকেশ বাবু।যা দেখছিলো রণবাবুর কাজের লোক হরিদা।

 

 

—কিন্তু এতে রণ বাবুর খুনের কিছুই প্রমাণ হয়না। খুনের সময় মুকেশ জেঠু কলেজে ছিলেন। যার যথেষ্ট সাক্ষ্য আছে, কমল বলল।

 


জামশেদ হকঃ জানি কমল, ধৈর্য ধরো সব বলব একে একে।আমি বলিনি তোমার দাদুকে মুকেশ বাবু খুন করেছেন । তিনি কেবল প্লান করেছিলেন। তবে তা বাস্তবায়ন করার আগেই অন্য কেউ রণবাবুকে খুন করে।