Posts

গল্প

স্বৈরাচারী ব্যক্তিত্ব

October 23, 2024

Rouf An Nur

94
View

দূর গ্রামের এক কোণে ছিল এক ছোট্ট পাহাড়ি এলাকা, যেখানে মানুষজন খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করত। এই গ্রামের শাসনভার ছিল রুদ্র নামে এক ব্যক্তির হাতে। রুদ্রের ছিল এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য—তার নেতৃত্বের ক্ষমতা ছিল অসীম, কিন্তু তার মধ্যে ছিল এক কঠোর স্বৈরাচারী মনোভাব। তিনি সিদ্ধান্ত নিলে, সেটাই ছিল শেষ কথা, কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগই ছিল না।

রুদ্রের শৈশব ছিল অত্যন্ত কঠোর। তার বাবা ছিলেন গ্রামের প্রধান, আর বাবার শাসনব্যবস্থা ছিল অমানবিক। শৈশবে বাবার হাতে প্রচুর শাস্তি পাওয়ার পর রুদ্র শিখে নিয়েছিল কঠোরতা ও শক্তির মূল্য। তিনি ভাবতেন, ক্ষমতা হল সবকিছু, আর যতক্ষণ মানুষ ভয়ে থাকবে, ততক্ষণই শৃঙ্খলা থাকবে।

গ্রামের মানুষরা প্রথমে তার কঠোর শাসন মেনে নিয়েছিল, কারণ তারা বিশ্বাস করত, শক্তিশালী নেতা থাকলে গ্রাম নিরাপদ থাকবে। কিন্তু ধীরে ধীরে রুদ্রের নিষ্ঠুরতা সীমা ছাড়িয়ে গেল। যেকোনো ছোটখাটো ভুলের জন্য মানুষকে শাস্তি দেওয়া শুরু করলেন তিনি। তার আইন অনুযায়ী, যে কেউ তার কথার বিরোধিতা করলেই তাকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে দেওয়া হত।

গ্রামের মানুষদের মধ্যে একটা চুপচাপ বিদ্রোহ জন্ম নিচ্ছিল। তারা বুঝতে পারছিল, এই শাসনব্যবস্থা তাদেরকে দমিয়ে রেখেছে। কিন্তু রুদ্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করত না। একদিন, গ্রামের একজন বয়স্ক মানুষ, হরিদাস, যার বয়স আশির কোঠায়, সাহস করে রুদ্রের কাছে গিয়ে বলল, "বাবা, শক্তি দিয়ে মানুষকে শাসন করা যায়, কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করা যায়।"

রুদ্রের চোখ রাগে লাল হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে উঠল, "তুমি কি বলতে চাইছ, আমি ভুল করছি?" হরিদাস শান্তভাবে বলল, "ভুল করা মানুষের ধর্ম, কিন্তু ভুল শোধরানোর মধ্যে প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়।" এই কথা শুনে রুদ্র ক্ষিপ্ত হয়ে হরিদাসকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে দিল।

কিন্তু সেই রাতেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। রুদ্রের স্বপ্নে তার মৃত বাবা এসে বললেন, "তুমি আমার পথ অনুসরণ করছ, কিন্তু মনে রেখো, স্বৈরাচারী শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মানুষকে সম্মান দাও, না হলে একদিন তারাই তোমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।"

এই স্বপ্ন রুদ্রকে গভীরভাবে নাড়া দিল। সে বুঝতে পারল, তার কঠোর শাসন আসলে তাকে একা করে দিচ্ছে। পরের দিন সে গ্রামের মানুষদের ডেকে বলল, "আমি ভুল করেছি। ক্ষমতা দিয়ে নয়, ভালোবাসা ও সম্মান দিয়ে আমি তোমাদের পাশে থাকতে চাই।"

গ্রামের মানুষরা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি, কিন্তু ধীরে ধীরে রুদ্র তার পরিবর্তিত মনোভাবের প্রমাণ দিতে শুরু করল। কঠোর শাসনের পরিবর্তে তিনি মানুষের কথা শুনতে শুরু করলেন, এবং গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ করলেন।

কয়েক বছর পর, রুদ্র এক নতুন নামে পরিচিতি পেল—"প্রিয় নেতা।" স্বৈরাচারী ব্যক্তিত্ব বদলে এক ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠলেন তিনি, আর তার গ্রাম সত্যিকার অর্থেই সুখী ও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠল।

Comments

    Please login to post comment. Login