পোস্টস

নন ফিকশন

কালেক্টেড ভাইকে নিয়ে কিছু কথা

২৪ অক্টোবর ২০২৪

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

মূল লেখক ‌ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

ফেসবুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক কালেক্টেড ভাইয়ের লেখা পড়ছি ব‌হুবছর ধরে। এই ব‌হুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারীকে নিয়ে আমার এই ট্রিবিউট এবং অবজারভেশন। 

 

১) ফেসবুকের কল্যাণে কালেক্টেড ভাইয়ের লেখা কে না পড়েছেন। ভার্চুয়াল লেখালেখির জগতে জুতো সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডিপাঠ সবকিছুই কালেক্টেড ভাইয়ের কীবোর্ড থেকে আসে। এত বিস্তর লেখাপড়া এবং লেখা ভাইরাল শুধুমাত্র কালেক্টেড ভাইয়ের দ্বারাই সম্ভব। 

 

২) কালেক্টেড ভাইয়ের জন্মস্থান, জন্মের সন, প্রকৃত পরিচয় এবং ছবি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রহস্যময় এই লেখক খুব সম্ভবত নিজেকে আড়াল করে রাখতে চান। তবে কারো কারো মতে তিনি বাংলায় লেখালেখি করার সময় "সংগৃহীত" ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকেন। তাঁর বয়স আন্দাজ করা কঠিন কারণ অনেক পুরানো লেখাও এই রাইটারের লেখা। 

 

৩) কালেক্টেড ভাই বাংলা এবং ইংরেজীতে প্রায় সমান পারদর্শী, তাই তাঁর মাতৃভাষা কোনটি জানা মুশকিল। কেউ কেউ মনে করেন তিনি বাঙ্গালী কারণ মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসে তাঁর অনেক ভালো ভালো লেখা পাওয়া যায়। অবশ্য ইংরেজীতে তার দক্ষতা দেখলে মনে হয় তিনি হয়তো দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী। 

 

৪) তিনি কোন ধর্ম পালন করেন তাও বলা বেশ কঠিন। প্রায়‌ই তার বিভিন্ন লেখা দেখলে তাকে বেশ ইসলামিক মনে হয় আবার এক‌ই সাথে অন্যান্য ধর্মের প্রতিও তাঁর শ্রদ্ধা টের পাওয়া যায়। অবশ্য নিন্দুকেরা অভিযোগ করেন যে মাঝে মাঝে তার লেখায় নাস্তিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখা যায়। ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁর এই স্ববিরোধী অবস্থান বুঝে উঠা যায় না। 

 

৫) তিনি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করেন সেটা চিন্তা করলেও ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বিএনপি সাপোর্টার মানুষজন তাকে নিজেদের মানুষ মনে করেন, আবার আওয়ামী লীগের পক্ষেও তার অনেক লেখালেখি আছে। কখনো কখনো তাকে বামপন্থী মনে হয়, আবার মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি জামাতের মানুষ। সবাই মনে হয় তাকে যার যার দলে চান। 

 

৬) সাহিত্যের সকল শাখায় তার বিচরণ আছে। তবে কিছু দুষ্ট লোক মনে করেন যে কালেক্টেড ভাই অনেক বিখ্যাত দেশি বিদেশি লেখকের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেন। এই জ্ঞানপাপীদের বুঝা উচিত যে, এমন‌‌ও তো হতে পারে এসব বিখ্যাত লেখক কালেক্টেড ভাইয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কলম ধরেছিলেন। অনুবাদেও তিনি বেশ চৌকশ। 

 

৭) বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ এবং প্রোফাইল থেকে সবচেয়ে বেশী শেয়ার করা হয় এই সব্যসাচী লেখকের অসাধারণ সব লেখা। কিছু খারাপ লোক এসব লেখার বানান ভুল ধরেন, আবার এরাই এসব লেখাকে নিম্নমানের বলেন। তাঁর বেস্টসেলার লেখার প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে মনে হয় এরা এসব বলেন। জনপ্রিয়তায় তার ধারেকাছেও তো কেউ নেই তাই তাঁর বিরুদ্ধে যতো অপপ্রচার। 

 

৮) নিন্দুকেরা বলে থাকেন, যারা লেখালেখি করতে পারে না বা নিজে চিন্তা করতে পারে না তারাই দিনরাত কালেক্টেড ভাইয়ের লেখা শেয়ার করে থাকেন। এসব দুষ্ট লোক বুঝেন না বা বুঝেও না বুঝার ভান করেন। অর্থনীতি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, ধর্ম আরো কত শত বিষয়ে তার এই অগাধ জ্ঞান সাধারণ মানুষ তো শেয়ার করবেই। এখানে আমি দোষের কিছু দেখি না। 

 

৯) তাঁর একটি কঠিন সমালোচনা আছে, যে যেটা বিশ্বাস করেন অথবা প্রতিটি মানুষ যা দেখতে চায়, কালেক্টেড ভাই তার জন্যে সেরকম মনমতো লেখা দেন। একজন দর্জি তো আপনার মাপ নিয়ে কাপড় সেলাই করবে। এই মহান লেখক অনেকটা দর্জির মতোই। এই আনকমন বৈশিষ্ট্য বিশ্বে আর কোন লেখকের নেই। 

 

১০) আজ পর্যন্ত তিনি লেখালেখি করে অর্থ উপার্জন করেছেন এই প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা‌। তিনি মানুষের মনের শান্তির জন্যেই লিখে থাকেন। তাঁর লেখায় সবসময় সত্য খুঁজতে যাওয়াটা ঠিক না। সত্য এবং শান্তি একসাথে পাওয়া যায়না সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ কালেক্টেড ভাইয়ের অগনিত লেখায় পাওয়া যায়।

পরিশেষে কালেক্টেড ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা র‌ইলো। সত্যের সন্ধান দেয়া হয়তো তার কাজ নয় তবে তিনি শান্তির সন্ধান দিয়েছেন তার গুণমুগ্ধ পাঠকদের। এই বা কম কি! তিনি সঙ্গত কারণে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। সবার মনে স্থান করে নেয়ার কারণে তিনি সব জায়গায় আছেন আবার কোথাও নেই।