ঘরের মধ্যে একটা ১০০ পাওয়ারের বাতি নিভু নিভু করে জ্বলছে,আয়ু হয়ত ফুরিয়ে গেছে বাঁচার ইচ্ছে এখনো ফুরায়নি। ছেলেটি টেবিলে বসে আছে,গালের নিচে হাত সুকান্তের সেই বিখ্যাত ছবির মতন রাখা।
আকাশ অনেকটা মেঘলা, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘন বর্ষণ শুরু হবে, মেঘ ক্ষণে ক্ষণে ডেকে গর্জে উঠছে। বিজলি ঝিলিক দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সাময়িকের জন্যে সব কিছু তীব্র সার্চ লাইটের আলোয় পড়ার মতন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির মনে হচ্ছে বিজলি যেভাবে চমকাচ্ছে ভালোভাবে তাকালে সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অন্ত্র, তন্ত্র, ভেইন, আর্টারি গুনে গুনে দেখতে পারবে।
বিজলি চমকালে যতদূর দেখা যায়, শেষবারের মতন ক্লান্ত অবশান্ত চোখ তুলে সে দেখলো। দোতলার জানালা থেকে নিচে শুধু গাছ-গাছালির সবুজ, বিদ্যুৎ চমকিয়ে সেই সবুজকে সাদা করে দিচ্ছে। সেই সাদাটাই তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে। যতদূর আই সাইট ততদূর শুধু গাছ আর গাছ। কিছু সেকেন্ড পরে চোখ বন্ধ করলো সে, চোখ আর খুলতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে ইচ্ছেটা কেউ বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ওর মধ্যে থেকে শুষে নিয়েছে। এই যে বিস্তীর্ণ গাছপালা, এইগুলো শুধুই গাছ।
একইভাবে পাহাড় শুধুই পাহাড়, মেঘ শুধুই মেঘ, সমুদ্র শুধুই সমুদ্র, বৃষ্টি শুধুই বৃষ্টি, সব কিছুই শুধুই সবকিছু। কে যেন একটা এসে তাকে এইটা বলে গেছে, এর পরে আর তার আজকাল চোখ খুলে দেখতে ইচ্ছে করছে না। পাহাড় পাহাড়ই থাক,সমুদ্রও তাই থাক, কোনো পরিচিত কণ্ঠস্বর কেবলই কণ্ঠস্বর থাক। সে অনন্ত পর্যন্ত খালি এমনিতেই টেবিলে হাতের কনুই রেখে, হাতের তালুতে কপোল রেখে, চোখ বন্ধ করে বজ্রপাতের শব্দ শুনবে। যে বজ্রপাত, শুধুই বজ্রপাত! বিজলি চমকাবে ক্ষণে ক্ষণে। যার এখন একমাত্র কাজ,সবুজ পাতাগুলিকে সাদা রঙে উন্মোচিত করা।।