পোস্টস

গল্প

দেশপ্রেম

২৬ অক্টোবর ২০২৪

মোঃ রাজিকুল ইসলাম

দেশপ্রেম

আচ্ছা কাকু ;”একটি দেশে কারফিউ কখন দেয়”? প্রশ্নটি হৃদয়ের।

সে হঠাৎ কারফিউ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কেন করছে? খটকা লাগছে। আজ নিয়ে সাত দিন হল রাফি কমাতে আছে। সে বাহিরের কোন খোঁজ খবর কিছুই জানে না। 

ঘটনার শুরু পহেলা জুলাই থেকে। দেশের ছাত্র সমাজ রাজপথে নেমেছে তাদের দাবি আদায়ের জন্য। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন ।সরকার হঠাৎ করে এ বছর থেকে সকল সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং আরো সব মিলে ৫৬ শতাংশ কোটার চালু করে ।এই কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রদের দাবি হলো  ৫ শতাংশ করতে হবে। এই নিয়ে দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজপথে নেমে পড়ে। তারা আন্দোলন শুরু করে দেয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল, সমাবেশ করতে থাকে। কিন্তু যখন ছাত্রলীগ নামে তখন শুরু হয় বিপত্তি। দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি এবং হাতাহাতি শুরু হয়। পরিস্থিতি  এতটাই খারাপ হয় যে  সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়।

শুরুতে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। ধীরে ধীরে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ,  স্কুলসহ সাধারণ জনগণ  রাজপথে নেমে পড়ে । দেশের সর্বস্তরের জনগণ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। তবুও  সরকার পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। 

একটি দেশের ছাত্র সমাজ কতটা শক্তিশালী তাই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। সারাদেশ উত্তাল, সকল কিছু বন্ধ. যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দেশে অচল অবস্থা বিরাজমান। ছাত্র সমাজ হলো দেশের উন্নয়নের  হাতিয়ার ।আর যখন ছাত্রদের বিরুদ্ধে এমন আঘাত হানে তখন ছাত্র সমাজ কি করতে পারে তা সরকার  কে দেখিয়ে দিল।  শিক্ষার্থীরা  প্রাণের বিনিময় তাদের দাবি আদায় করে নিল।বাংলার রাজপথ রক্তাক্ত করে, জীবন উৎসর্গ করে তাদের দাবি আদায় করল।

রাফি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঢাকা হল সকল কিছুর প্রাণকেন্দ্র।আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। রাফি অবশ্য আগে থেকেই দেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতো।  যে কোন মিটিং, মিছিল ইত্যাদি অংশগ্রহণ করত। দেশের যেকোনো খারাপ পরিস্থিতিতে রাফি ছিল বজ্রকন্ঠি। তার মন দেশের জন্য সব সময় কাঁদে। দেশের বিরুদ্ধে যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করতে দেখে, এগুলো খবর শুনে  রাফি খুবই মর্মাহত হয় ।একদিন রাফি এবং তার বন্ধু রাহিদ একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। রাফি কথায় বেশিরভাগই দেশ, দেশের মানুষ. দুর্নীতি, উঠে আসে।

রাফি; খবর শুনেছিস।

কি খবর? নতুন কোন খবর আছে নাকি?

ডিবি প্রধান  বেনজির কে চিনিস।তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আত্ম স্বাদের গোপন খবর প্রকাশ হয়েছে।

বলিস কি! কই আমি তো দেখিনি ,কবে প্রকাশ হয়েছে?

আজকে কিছুক্ষণ আগে ,তুই হয়তো অনলাইনে ছিলি না তাই দেখতে পাসনি।

সরকার কি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই নি?

আর ব্যবস্থা, তার আগেই বেনজির তার পরিবারকে নিয়ে  দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

দেখ রাহিদ, আমি যে সব সময় দেশ নিয়ে  চিন্তা ভাবনা করি এমনি তো না। এই লোকগুলির কারণে আজ আমরা পঙ্গু। দেশের উন্নয়ন ধীরগতি। জনগণ আজ এত কষ্টে দিনযাপন করছে। আজ এই জানোয়ারদের কারণে আমাদের দেশের এমন করুন অবস্থা। আমি যদি কোনদিন ক্ষমতায় যাই তাহলে  এদের হাজার হাজার লোকের সামনে কুকুর দিয়ে কামড়িয়ে মারতাম। যাতে কেউ আর কোনদিন দুর্নীতি করার সাহস না পায়। আজ আজ ভালো এবং সৎ লোকের বড়ই অভাব। সবাই ক্ষমতায় গেলে সবকিছু ভুলে যায়।

রাফির চিন্তাভাবনা এবং কথাবার্তায় স্পষ্ট দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। তার চিন্তা ভাবনা সত্যি অনেক মহৎ। এরকম চিন্তা ভাবনা কিন্তু আমরা করি না। আমরা আগে নিজের কথা ভাবি, মানুষের কথা ভাবার কোন সময় আমাদের কাছে নেই। রাফির মত ছেলে যদি দেশে বড় পদে যায় তাহলে অবশ্যই দেশের উন্নয়ন সম্ভব।

কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই রাফি ছিল। সেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। স্লোগান দিয়েছে, মেধা না কোটা, মেধা ,মেধা। ১৪  জুলাই সকাল  ১০ঃ০০ টায় মিছিল বের হবে। সবাই ভার্সিটি সামনে জড়ো হয়েছে। রাফি সামনে থেকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। এই কয়েকদিন তারা শান্তিপূর্ণভাবেই মিছিল এবং সমাবেশ করেছে। আজও তেমনি হবার কথা ছিল। কিন্তু কে তেমনটা ঘটেনি। তারা মিছিল নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর ছাত্রলীগ এবং পুলিশ তাদের উপর  আকস্মিক ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্ররা ছিল নিরস্ত্র, তাদের কাছে শুধু লাঠি ছিল । তারাও  দমে না গিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ।একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করে। এমন সময় হঠাৎ করে একটা গুলি পিছন থেকে রাফির মাথায় লাগে। সাথে সাথে সে মাটিতে পড়ে যায়। তারপরে আর কিছু মনে থাকেনা। আজ নিয়ে সাত দিন হল রাফি কমায় আছে। সে দেশের কোন খবরই জানেনা। আজকে দুপুর পর তার জ্ঞান ফিরেছে। তার পুরো শরীরে আঘাত। মাথায় সবচেয়ে বেশি। চোখ খুলে দেখে তার ছোট্ট ভাতিজা হৃদয় তার পাশে বসে আছে। রাফি, হৃদয়কে অনেক অনেক ভালোবাসে।