Posts

চিন্তা

মধুর ক্যান্টিনেও গরু!

October 26, 2024

ফারদিন ফেরদৌস

96
View

গরু পুষ্টিকর খাবার। এটা খাওয়া দোষনীয় কিছু না। এমনকি আয়োজন করে খাওয়াতেও আপত্তি নেই। যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে সেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গরু-খাসিতে আনন্দ সেলিব্রেট করবে এটাই স্বাভাবিক। ওরা এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। সুতরাং মামুলি গরু-খাসির টাকা ম্যানেজ করাও ওদের জন্য ব্যাপার না।

কিন্তু নৈতিকতার অধপাত ঘটেছে অন্য জায়গায়। প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন মধুর ক্যান্টিন চা সিঙাড়া মিষ্টান্নের জন্যই বিখ্যাত। প্রাণিজ মাংসের জন্য ওই ক্যান্টিন না। সর্বোপরি সনাতন ধর্মাবলম্বী মধুসূদন দে'র স্মৃতিবিজড়িত ক্যান্টিনে গরুর পদধূলি ফেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠের হেজেমনিরই প্রমাণ মেলে। এটার নাম বৈষম্য বিরোধিতা নয়, পুরাই আধিপত্যবাদ। আপনারা ক্ষমতা জাহির করছেন। হেডম দেখাচ্ছেন।

মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আদিত্যচন্দ্র। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আদিত্যচন্দ্র এখানে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে আদিত্যচন্দ্র মারা যান। এরপর তার ১৯ বছর বয়সি ছেলে মধুসূদন দে ব্যবসার হাল ধরেন। প্রথমদিকে ছনঘরেই ব্যবসার কাজ চালাচ্ছিলেন মধুসূদন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে আসেন বর্তমান ভবনটিতে। একসময়ে এটি ছিল নবাবের মনোরঞ্জনের জন্যে বাইজিদের নাচঘর।

৩০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু। তিনি মধুর ক্যান্টিন নিয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাউন্ডের এক প্রান্তে টিনের চালওয়ালা দর্মার ঘর, ভেতরে মলিনবর্ণ টেবিলের পাশে লম্বা ন্যাড়া টুল পাতা। এখানেই আমরা ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ করে থাকি, যেহেতু সারা তল্লাটে দ্বিতীয় কোনো চা-ঘর নেই। আদিত্যর ভোজ্যতালিকা অতি সীমিত, কোনো দিন তাঁর স্বহস্তে প্রস্তুত মিষ্টান্ন ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না আমাদের।’

মধুর ক্যান্টিন রাজনৈতিক শলা পরামর্শের সূতিকাগার হিসেবে ইতিহাসস্বীকৃত। ভাষা আন্দোলন, মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সকল ঘটন-অঘটনের সাক্ষী এই ক্যান্টিন। সেই মধুদার পুণ্যস্মৃতির প্রতি গরুর অঞ্জলি দেয়া ভীষণ বেখাপ্যা। মেধাবীদের অভীপ্সার সাথে এটা চলনসই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরু চড়ানোর অনেক জায়গা আছে। এমনকি উপাচার্য বা প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনের লনেই গরু নিয়ে উল্লাস করা যায়। পিকনিকে মাতা যায়। ২৫ মার্চের কালরাতে পরিবারসহ শহীদ হওয়া মধুদা'র আঙিনায় গরু নিয়ে যাওয়া বালখিল্যতা ছাড়া আর কী?

ক্যাম্পাসের টোটাল ভূমিই তো গরু খাদকের চারণভূমি। মধুদার ক্যান্টিনটা নাহয় কিঞ্চিত আলাদাই থাকুক।

জামায়াতে ইসলামী রংপুরের পীরগাছায় হিন্দু শাখা খুলেছে। অপরদিকে গুটিকয়েক ধর্মগুরুর দাবির মুখে মাদারীপুরের কালকিনিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ী মেলা।

হিন্দুদেরকে ক্রমাগতভাবে এমনসব এক্সপেরিমেন্টে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব হেজেমনির প্রতিবাদেই গতকাল চট্টগ্রামে 'সনাতনী জাগরণ মঞ্চের' ব্যানারে লাখো হিন্দুর সমাবেশ হয়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ হিন্দু নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৮ দফা দাবিনামা জানিয়েছে তারা।

বৈষম্য বিরোধী ভাইসকল আপনারা বড্ড সেকেলে র‌্যাডিক্যালিজমের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে ধরবেন নাকি আধুনিক মানবিক সমাজ কায়েম করে বিশ্বসভায় নিজেদের শির উঁচু রাখবেন -এই বিবেচনা আপনাদের। দেখেন যা ভালো মনে করেন।

লেখক: সাংবাদিক 
২৬ অক্টোবর ২০২৪

Comments

    Please login to post comment. Login