অষ্টম শ্রেণি রেজিস্ট্রেশন চলছে। শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে অনুপস্থিত এবং রেজিস্ট্রেশন করে নি এমন শিক্ষার্থীদের ফোন দিতে হয়েছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিতির স্বাভাবিক কারণ, অসুস্থতা; পড়ালেখায় অমনোযোগী ইত্যাদি। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে কমন উত্তর, ‘ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। পড়বে না।’ অধিকাংশের উত্তর ছিল সাবলীল এবং ছোট। সাথে বিরক্ত ভাব। ইচ্ছা থাকলেও কিছু বলা সম্ভব হয় নি।
একজন শুধু মনে হলো, কথা বললে শুনবে। ছাত্রীর খালা। রোল নাম্বার দেখলাম, বারো। বললাম, ও তো মেধাবী ছাত্রী। ক্লাস অনিয়মিত করে হলেও রেজিস্ট্রেশন করে নেন। অন্তত দাখিল পর্যন্ত পড়ান। বললো, ‘ও অনেক কান্নাকাটি করেছে পড়ার জন্য। বাবা মা তাকে বোঝা মনে করেছে। এজন্য বিয়ে দিয়ে ফেলছে।'
ছাত্রীটির জন্য খারাপ লাগলো। হয়তো আজীবন পড়তে না পারার কষ্ট সে বয়ে বেড়াবে। এরকম অনেক ছাত্রী হঠাৎ হারিয়ে যায়। খোঁজ নিলে উত্তর একটাই, বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। গ্রাম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী দেরি করে মাদ্রাসা ইশকুলে ভর্তি হয়। অনেক শিক্ষার্থী অবহেলা করে ক্লাস গ্যাপ দেয়। ফলে এস এস সি পাশের আগেই বিয়ের বয়স হয়ে যায়। সমস্যা হচ্ছে, অভিভাবক বিশেষ করে ছেলেদের এই বিশ্বাস, বিয়ের পর আর মেয়েদের পড়াশোনার প্রয়োজন নেই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রীদের স্বপ্ন দেখাই। বড় কিছু হওয়ার। বড় জ্ঞানী হওয়ার। বিয়ে এবং পড়াশোনা পরস্পর বিরোধী নয়। বরং সাংসারিক জীবনকে সুন্দর ও সফল করতে হলে পড়াশোনা প্রয়োজন -এটা বোঝানোর চেষ্টা করি। যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিশ্বাস, সংস্কার শুধু ব্যক্তিগত প্রেরণায় পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রয়োজন, সামষ্টিক উদ্যোগ। বিশেষ করে অভিভাবকদের আস্থা অর্জন এবং যৌক্তিকভাবে বোঝানো।
তবুও একজন শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরণা দিয়ে যাবো প্রিয় শিক্ষার্থীদের। ইনশাআল্লাহ। একদিন আমার ছাত্রীদের থেকেই জন্ম ইতিহাসের মা আয়েশা, জেবুন্নেছা, জয়নব গাযালী