রক্তাক্ত শরীর মেঝেতে পড়ে আছে। দূর্বল আঁখিদ্বয় অদূরে থাকা মেয়েটিকে বরংবার বলছে পালিয়ে যা। ভীতু হরিণীর মত চেয়ে থাকা মেয়েটি সে দৃষ্টি বুঝল না। তার পালিয়ে যাওয়া কতটা প্রয়োজনীয় তা থেকে বেমালুম।
আলমারিতে ঠেস দিয়ে বসে থাকা ছিপছিপে দেহখানা থরথর কাঁপছে। তিরতির করে কাঁপা ঠোঁটগুলো কিছু বলতে চাইছে যেন। নেত্রপল্লব ভীত। পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কাপুরুষটি আবারও সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি দেয় মেঝেতে পড়ে থাকা মালতিকে। ছিটকে খাটের সাথে মাথাটা লেগে সেখানেই জ্ঞান হারায় মালতি। বসে থাকা কিশোরী চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। নির্মম নিয়তি সেই চিৎকারকে মুষলধারে বৃষ্টির সাথে মিলিয়ে নেয়। বিকট এক বজ্রপাতে পুরো শহর হয়ে পড়ে আঁধারাচ্ছন্ন।
----------------------------------------------------
নিউইয়র্ক:
নাইট ক্লাবের সামনে থামে "লা রোজ"। সিকিউরিটি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে বেরিয়ে আসে এক যুবক। সবার প্রথমেই নজর কাড়ে নীলাভ আঁখি। যেন ব্রক্ষান্ডের সর্ব মায়া সেখানেই। অপর সাইড হতে বের হয় আরেক বলিষ্ঠ যুবক। মায়া ভরা মুখশ্রী তার। রাজকীয় ভঙ্গিতে ভেতরে প্রবেশ করে বারিস নিয়াজ ও মুরাত আব্রাহাম। পেছন পেছন আসে ৪ জন কৃষ্ণ পোশাক ধারী গার্ড।
নিদিষ্ট আসনে সমাসীন হতেই যাচ্ছিল বাঁধ সাধে এক কিশোরী। ভয়ার্ত নেত্রপল্লব, উস্ক ঠোঁটদ্বয়। রুক্ষ চুল এলোমেলো হয়ে পিঠে ছড়িয়ে আছে। ললাটের এক পার্শ্বে তাজা ক্ষত। টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। মেয়েটি দ্রুত গতিতে ওড়নায় মুখ ঢেকে ফেলে। দু'হাত জোর করে বাঁচার আকুতি জানায় বারিসের কাছে। পেছনে আসা ব্যক্তিগুলোর পানে চেয়ে পায়ে পড়ে বারিসের। লোকগুলো খুব কাছেই এসে পড়ে তখনই, মেয়েটির পানে অপলক চেয়েই হাত মেলে ইশারা করে বারিস ।পেছন পেছন আসা মহিলা সহ দু'জন পুরুষই থেমে যায় বারিসের ইশারায়। মেয়েটি তখনও কাঁদছে। অতিরিক্ত ক্রন্দনের ফলে হিচকি উঠে গিয়েছে। বারিস সম্মুখে থাকা মেয়েটিকে সম্মোধন করে বলে,
আমি বাংলা বলতে পারি না। তুমি চাইলে ইংলিশে কথা বলতে পারি।
- মেয়েটি সম্মতি জানায়, মাথা দুলিয়ে।
তুমি কি চাও?
- প্লিজ আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচান।
এসো আমার সাথে। বলেই বারিস হাঁটা শুরু করে। পেছন পেছন ২ জন গার্ড আসতে থাকায় মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। বারিস আস্বস্ত করে তারা ওর শুভাকাঙ্ক্ষী। বাকি দু'জন গার্ডসহ আব্রহাম সেখানেই রয়ে যায়।
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বারিস। অন্য পাশে মেয়েটি। গার্ড দু'জন বাহির পর্যন্ত সাথে এলেও ওদের সাথে করে আনেনি বারিস।ওরা আব্রাহামের সাথেই ফিরবে। গাড়িতে বসে, প্রথমেই ফাস্ট এইড বক্স বের করে খুব সাবধানে ক্ষতস্থান পরিস্কার করতে থাকে। প্রথমে মায়া মুখ থেকে কাপড় না সরাতে চাইলেও বারিসের বাজখাই ধমকে আপনা আপনিই হাত সরে যায়। তুলোর পরশে জ্বলে ওঠে ক্ষতস্থান। সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে মায়া চেপে ধরে বারিসের হাত, মাথা একটু পিছনের দিকে নিয়ে যায়। বারিস একহাতে মায়াকে কাছে টেনে অপর হাতে যত্ম করে ক্ষততে ব্যান্ডেজ করে। সারা রাস্তা মেয়েটি হিচকি তুলে কেঁদেছে। বারিস কান্নার শব্দে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে প্রায়। এক পর্যায়ে নিজেকে আর সংবরন করতে না পেরে বারিস ধমকে ওঠে,
প্লিজ চুপ হও। এত কান্না করার কি আছে?
বারিসের ধমক খেয়ে কান্নার শব্দ কমলেও কান্না বন্ধ হয়নি। চাঁপা কান্না, খানিক বাদে বাদেই হিচকি তোলা আছে।
তোমার নাম কি?
- মা,,মায়া।
সুন্দর নাম।
সারা রাস্তা আর কোন কথা হয় না। গাড়ি এসে থামে আলিশান ভবনের সামনে। দৈত্যকার ফটক পেরিয়ে বাড়ির বাম সাইডে পার্কিং এ গাড়ি থামে। একজন গার্ড এসে দরজা খুললে বারিস বের হয়ে কোর্ট ঝাড়া দেয়। গার্ড ততক্ষণে অপর পাশের দরজাও খুলে দেয়। মায়া বেরিয়ে আসে। বারিস দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকায়। মুখের কাপড় সরে গেলে দূর থেকে আসা আলোয় নজরে আসে মায়ার চেহারা। স্বর্গের পরী বললেও কম হয়। বারিস মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে মায়াকে। একবার আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার মায়ার পানে তাকায়। উহুম জমিনের চাঁদটিই বেশি সুন্দর। মায়া আবারও মুখ ঢেকে ফেলে। বসন্তের শেষ। হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া বয়। সিল্কের ওড়না আগে পড়া হয়নি বলেই হিমশিম খেতে হয়েছে মায়াকে। সেই সুযোগ লুফে নেয় বারিস। পার্পেল গাউনে পরীর বাচ্চার মতই লাগছিল তাকে।
বারিসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মায়াও পৌঁছে বাড়ির ভেতরে। আভিজাত্যের ছোঁয়ার জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে বাড়িটি। ড্রয়িং, ডাইনিং এত অপরুপ হলে না জানি ভেতরের রুমগুলো কেমন নজরকাড়া হবে? মায়ার এসব ভাবনার মাঝে বারিস তুরি বাজিয়ে তার ধ্যান ফিরায়। এই যে এখানে এসো। হাতের ইশারায় পাশে বসতে বলে। সোফায় বসা বারিসের পাশে মায়া গুটিশুটি মেরে বসে।
প্রথম কথা, মুখ থেকে কাপড় সরাও।
- মায়া কাচুমাচু করতে থাকে।
এককথা বারবার বলা অপছন্দনীয় আমার।
- বলছিলাম...
হয়ত কাপড় সরাও নতুবা আগের জায়গায় রেখে আসব।
- মায়ার বুক ধ্বক করে ওঠে। ওই নরকে ফিরে যাওয়ার চেয়ে এটা ভালো। মায়া চট জলদি কাপড় সরায়।
ভীতুর ডিম একটা। এটাকে নিয়ে খেলে মজা পাব। ( মনে মনে বলে বারিস)