পোস্টস

সমালোচনা

শাহরিয়ার কবিরের নিঃশর্ত মুক্তি চাই

২৮ অক্টোবর ২০২৪

Afsana Kishwar

অক্ষর জ্ঞান কবে হয়েছিলো এখন আর মনে পড়ে না।আমরা কালো স্লেটে সাদা চক দিয়ে লেখা শিখতাম।আম্মু লেখা ও পড়া শেখানোর পরে বুঝলেন কন্যা তাকে নিরন্তর জ্বালাবে শুধু বই পড়ার জন্য।যা দেখতাম সামনে পেতাম পড়ে ফেলতাম।ক্লাস থ্রি তে যখন তখন একদিন বাসায় আর কিছুই পড়ার নেই এমন অবস্থা।ভাইয়া অগত্যা আমাকে বই দিলো নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়।আমার স্মৃতিতে বইটার সেবা প্রকাশনীর প্রচ্ছদে শমী কায়সারের ছবি এমন মনে আসে।

 

যাই হোক বইয়ের প্রচ্ছদে আরও যারা আছে তাদের দেখে কল্পনার জগতে একজনকে মনে হলো আমাদের মামাতো ভাই শাফিন ভাইয়া।এমন এক আউলা দিনে ললি,টুনি,আবির,বাবু,নেলি খালার সাথে ঘুরলাম বার্মার সীমান্তে-আমি পরিচিত হলাম শাহরিয়ার কবির নামক একজন লেখকের সাথে।

 

পাথারিয়ার খনি রহস্য,কার্পেথিয়ানের কালো গোলাপ এসব বাঁকে হেঁটে আমি পৌঁছালাম "একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়" নামক একটা নিউজপ্রিন্ট ছাপার বইয়ের পাতায়।

 

আট বছর বয়সের আমি হু হু করে কাঁদলাম কয়েকদিন একাত্তরে শুধু নারীদের সাথে কি হয়েছে তা জেনে।অনেক কিছুই অত ছোট মনে বুঝতে পারিনি।পাড়ার এক বড় আপাকে জিজ্ঞেস করলাম আপা ধর্ষণ কী,বীরাঙ্গনা কী-উনি অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন এসব শব্দ কোথায় শিখেছি।তাকে বইটা দেখালাম।উনি বললেন এ বই পড়ার বয়স তো তোর হয়নি।এটা স্কুল পাশ করে পড়িস,ক্লাস থ্রি তে এটা পড়া ঠিক হয়নি।

 

এ বইয়ের প্রথম সংস্করণে আছেন শাহরিয়ার কবির।আমি এক নীরব শিশু,শিশু থেকে কিশোরী শাহরিয়ার কবিরের হাত ধরে লেখার আইলে হেঁটে হেঁটে মুক্তিযুদ্ধকে পড়লাম,হৃদয়ে নিলাম।

 

 

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে।এ এক অন্য বাংলাদেশ দেখলাম-যাদের অত্যাচারের কাহিনী পড়েছি তাদের বিচারের কাঠগড়ায় উঠাবে জনতার আদালতে।কি একটা অবস্থা!

 

নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে এ ধরনের খোয়াবে ঝামা ঘঁষে দিয়ে তৎকালীন সরকার জাহানারা ইমামসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করে দেয়।

 

এই যে নীরব অহিংস একটা গ্রুপ যারা সারাটা জীবন শুধু বাংলাদেশ বুকে নিয়ে হাঁটলেন আমি সেই শাহরিয়ার কবিরকে দেখলাম একই ভাবে কলম তুলে নিয়ে জানাতে কিভাবে আসিফ নজরুল,আশরাফ কায়সারদের বেঈমানীতে রাজাকারদের তালিকা হারিয়ে জাহানারা ইমাম কেঁদেছেন মৃত্যুশয্যায়!

 

আমার কৈশোরের শাহরিয়ার কবির,আমার নুলিয়া ছড়ির সোনার পাহাড়ের শাহরিয়ার কবির পুরো দেশ ঘুরেছেন আবার ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘুদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালালে।তিনি এবং তার সাথে থাকা বাংলাদেশ পক্ষের মানুষেরা প্রকাশ করেন শ্বেতপত্র।

 

শাহরিয়ার কবিরকে বিএনপি জামায়াত কলমে ঠেকাতে না পেরে বোমা হামলার আসামী করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধারাবাহিক অত্যাচার করে একটা পা নষ্ট করে দিলো।একদিনের জন্য কোন সরকারী সুবিধা না পাওয়া একজন মানুষ শুধু বাংলাদেশকে ভালোবেসে আজকে আবার কোন আইনী সহায়তা ছাড়া শুয়ে আছেন মিথ্যা মামলায় জেলে।বুকে নিউমোনিয়ার ছোবল,শরীরে বয়সের আঁচ,হৃদয়ে বাংলাদেশ আর চোখে দেশ হাতছাড়া হবার এক বিস্ময় নিয়ে।

 

https://fliphtml5.com/lzrut/mgqs/basic

https://fliphtml5.com/lzrut/ehpo/251-300

 

 

#FreeShahriarKabir