পোস্টস

নন ফিকশন

স্ক্রিন টাইম: ডিজিটাল সুস্থতার মাপকাঠি এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ তৈরির উপায়

২৯ অক্টোবর ২০২৪

আল ইমরান

ডিজিটাল যুগে আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্ক্রিনের সামনে সময় কাটাই। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, টিভি—প্রতিটি ডিভাইস আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। যদিও প্রযুক্তি আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে, তবে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই অবস্থায়, স্ক্রিন টাইমকে ডিজিটাল সুস্থতার (digital wellbeing) একটি মাপকাঠি হিসেবে চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

স্ক্রিন টাইম এবং এর প্রভাব

 

স্ক্রিন টাইম বলতে আমরা বোঝাই, প্রতিদিন একজন ব্যক্তি কত সময় স্ক্রিনের সামনে কাটায়। এটি সামাজিক যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা, কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘসময় স্ক্রিনের সামনে কাটানো মানসিক চাপ, চোখের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আমরা অনেকেই অন্যের জীবন দেখার মাধ্যমে নিজেদের জীবনের সাথে তুলনা করতে শুরু করি, যা হতাশা বা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

 

একইভাবে, বেশি সময় স্ক্রিনে কাজ করলে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, যার ফলে স্থূলতা, হার্টের সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা ডিজিটাল সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
 

ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং এর মাপকাঠি হিসেবে স্ক্রিন টাইম

 

গুগল, অ্যাপল সহ অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন স্ক্রিন টাইমকে ডিজিটাল সুস্থতার মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনের সামনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর বদলে একটি সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখা। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের "Screen Time" ফিচার ব্যবহারকারীদের দেখায় তারা প্রতিদিন কত সময় কোন অ্যাপে বা ডিভাইসে কাটাচ্ছেন। এতে মানুষ নিজের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ তাদের স্ক্রিন টাইম সম্পর্কে সচেতন হয়, তখন তারা এর প্রভাব এবং বিকল্প সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে। যেমন, একজন ব্যক্তি যদি জানে যে সে প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটাচ্ছে, তাহলে হয়তো সে সেই সময়ের কিছুটা বই পড়া, শারীরিক ব্যায়াম, বা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য বরাদ্দ করতে পারে। এটি সুস্থ জীবনের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।

 

স্ক্রিন টাইমের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা

 

অনেক পরিবার স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবার প্রতিদিন সন্ধ্যার পর একঘণ্টা "ডিভাইস ফ্রি" সময় বরাদ্দ করতে শুরু করেছে। তারা সেই সময়টা একসাথে গল্প করা, খেলা বা বই পড়ার জন্য ব্যবহার করছে। এর ফলে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে এবং তারা মানসিক শান্তি পেয়েছে। স্ক্রিন টাইম কমানোর মাধ্যমে এমন ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো বাস্তব জীবনে অনুভব করা সম্ভব।

 

সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়তে স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনা

 

স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র আমাদের বর্তমান জীবনকে সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ করে না, এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আজকের শিশু-কিশোররা খুব ছোট বয়স থেকেই ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে বেড়ে উঠছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দিতে পারে। তাই শিশুদের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ, সক্রিয় এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রজন্ম তৈরি করতে পারব।

স্ক্রিন টাইমের বিষয়টি শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, এটি আমাদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক সুস্থতার উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত সচেতনভাবে স্ক্রিন ব্যবহারের সময় সীমিত করা এবং ডিজিটাল সুস্থতা নিশ্চিত করা।

 

ডিজিটাল যুগে স্ক্রিন টাইম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি যা আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অভ্যাস এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে। স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার মানও বাড়ায়। ডিজিটাল সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের উচিত স্ক্রিনের সামনে সময় কমিয়ে অন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং সম্পর্কগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। সুস্থ, ভারসাম্যপূর্ণ এবং আনন্দময় ভবিষ্যত গড়ার জন্য স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।