কোন এক শীতের কুয়াশা ভোরে
স্বাভাবিক জীবন;
স্বাগত রোদের আরামে
চোখ বুজে শুয়ে থাকে স্বাস্থ্যবান কুকুর;
বিড়ালটা শরীর মুচড়ে ঘুম তাড়ায়,
অলস সকালে শীতল হাওয়া আসে হঠাৎ।
কিছু বরইপাতা ঝরে পড়ে পুকুরে,
রাজহাঁসগুলো ডানা ঝাপটে উড়ে গেছে
দূরের জলাশয়ে,
আসবে না আর ফিরে তারা ঘরে;
জলে কাঁপন তোলে শীতল হাওয়া হঠাৎ।
আমার হাত ধরে ঘরে ফেরে অরুণা,
তার শেষ ঘর।
অরুণার হাত ধরে বসে থাকি আমি,
তার হাত উষ্ণতায় ভরা;
হাসিমুখে বসে থাকে সে।
২
তোমার হারিয়ে ফেলা বর্তমান,
তোমার খুঁজে পাওয়া অতীত,
ফেলে আসা কোনো এক দীঘির জলে তোমার সাঁতার,
জলে ভেসে থাকা বরই পাতা
আর রাজহাঁস;
সেইসব রাত্রি – জোছনা কিংবা নীল আকাশ,
চোখে নক্ষত্রের আগুন,
তুচ্ছ যত উপেক্ষা, অনাগ্রহ,
তোমার প্রতিদিনের নিগ্রহ,
কিছুমানুষ, কিছু কাব্য আর কিছু গদ্য,
কিছু লোভ,দেঁতো-হাসি, মায়াকান্না,
হাহাকার দিবস, ক্ষুধার্ত আধাঁর;
এখন শুধুই জোছনা।
আমার হাত ধরে ঘরে ফেরে অরুণা,
তার শেষ ঘর।
অরুণার হাত ধরে বসে থাকি আমি,
তার হাত উষ্ণতায় ভরা।
মানবিক মানুষের পথে এই পথ,
বহুদূর,
বাতাসে ধুলোর চাদর, মরা রোদে উত্তাপ ছড়ায়।
মৃত্যুর গন্ধমাখা অতিপ্রাকৃতিক সুবাসের ছাই
হাতের উল্টোপিঠে;
রাস্তার পাশে দাড়িঁয়ে কেউ বলে উঠে “লাশ!”
এবং আরও কয়েকজন;
অরুণা লাশ হয়।
অরুণার হাত ধরে বসে থাকি আমি।
তার হাত উষ্ণতায় ভরা।
দিয়ে আসি তাকে তার ঘরে;
এইখানে, এই ঘরে;
জানামতে আছে আরও কয়েকজন;
আমার হাত ধরে ঘরে ফেরে অরুণা,
তার শেষ ঘর।
মিশে যাচ্ছে সে ধীরে,
নির্লিপ্ত মাটির সুদীর্ঘ অবসাদে,
তার মুখ চেনা যায় না আজ;
ঘাড় কাত করে শুয়ে আছে সে;
তার গায়ের রঙ, তার মানবিক ঘ্রাণ,
হারিয়ে গেছে তার নিঃশ্বাস অন্তিম আধাঁরে,
চুলের বাধঁন আলগা হয়ে পড়ে মাটির কামড়ে,
তবুও ভালো...
শূন্য দৃষ্টির আলো আধাঁরের চেয়েও গাঢ়;
শীতের রাতে তোমার শরীর গরম কর না আজ অনেকদিন,
হিমশীতল ঘরে শুয়ে কী ভাবো তুমি?
৩
সন্ধ্যার বিষাদ ছাড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠে
এই বাড়ির মানুষগুলো,
শশব্যস্ত ছোটাছুটি শেষে
দীর্ঘ রাত্রি ঘুমিয়ে পড়ে;
মানবীর তোমার প্রথম বিস্ময়-ভয়...
“অরুণা, তোমার কী খুব কষ্ট!”
আমার হাত ধরে ঘরে চলো, অরুণা,
তোমার ঘর।
তোমার হাত ধরে বসে থাকি আমি,
তোমার হাত উষ্ণতায় ভরা;
হাসিমুখে বসে থাকো তুমি পাশে।
কিছু জল তাই তোমায় দিলাম:
“অরুণা জলের বুকে,
তুমিই জাগালে দীপ্ত মুখে,
নক্ষত্রের তীব্রতা তোমার চোখে,
থাক তুমি পরম সুখে।
অরুণা জলের বুকে;
অরুণা জলের বুকে;”