পোস্টস

গল্প

যে বাবুটার কখনো কোনো নাম রাখা হয়নি

৩০ অক্টোবর ২০২৪

জাফর সাদেক রুমী

জলিল সাহেব আজ বেশ প্রসন্ন মেজাজে আছেন। আজ ছেলের বাসায় যাবেন। রাতুল । ঊনার একমাত্র ছেলে। আলাদা বাসায় থাকে।  বিয়ের পর খুব বেশীদিন বাবা মার সাথে থাকা হয়নি ছেলেটার। শুরুতে ক'দিন একাসাথেই ছিল। এরপর শ্বাশুড়ি আর বউয়ের মন কষাকষি। তাই এখন  এই ব্যাবস্থা- ছেলে আর ছেলের বউ আলাদা বাসায় থাকে।

 

এই অনতিবিরল সাংসারিক দ্বন্দে জলিল সাহেবের ভূমিকা কি ছিল তা খুব বেশী জানা যায় না। তবে যদ্দুর জেনেছি, তিনি ছেলের মুখ দেখেননি দু'বছর। একেবারে সাদাকালো যুগের বাংলা সিনেমার মতো।ছেলেও বাপকা বেটা। কিন্তু ক'দিন আগে ছেলে খবর পাঠিয়েছে বউ "অসুস্হ"। আজকালকার নিয়ম অনুযায়ী জলিল সাহেবের  পরিবারে এখনো " বউ প্রেগন্যান্ট" বা "উই আর এক্সপেক্টিং"  বলার চল্ হয়নি। জলিল সাহেব শুনেই বুঝলেন। মনে পড়ল তার পুরনো দিনের কথা। রাতুলের মা ও তখন "অসুস্হ"। জীবনে প্রথম বাচ্চা। জলিল সাহেব ভয় পেয়ে যান। মফস্বলের সেই কলোনীর বাসা থেকে রাতুলের মাকে রেখে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। আরো এক অজপাড়াগাঁয়ে। তারপরেও জলিল সাহেব নিশ্চিন্ত- এটলিস্ট দেখাশোনাটা হবে ঠিকমতো। নইলে ঊনি যখন অফিসে যান, দেখারতো কেউ নেই।

 

নিজের মাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন সব কথা। কারণ তখনো মোবাইল ফোনের যুগ আসেনি। খোঁজখবর করতে টেলিগ্রাম আর চিঠিই ভরসা। কখনো পোস্টাপিস, কখনো লোক মারফৎ- এভাবেই চিঠিরা আনাগোণা করে।মা পাল্টা চিঠিতে একগাদা উপদেশ লিখে পাঠিয়েছিলেন। চিঠির বাহক রইস মিয়া, ঊনাদের পরিবারের খাস লোক। জুতা সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ সব রইস মিয়ার দখলে। চাষের দিনে কামলাদেরও ও'ই সামলায়। রইস মিয়ার সাথে একটা কলার কাঁদি। বাংলা কলা। বাড়ির গাছের। একটা টিফিন ক্যারিয়ার। সেখানে মায়ের হাতের সর্ষে ইলিশ, হাঁসের মাংস আর শুঁটকির সালুন। যাক, খাদ্যা সংকটের একটা সমাধান হলো। জ্বাল দিয়ে দিয়ে একসপ্তাহ-র বেশী চালিয়ে নেবেন জলিল সাহেব।

 

লিস্ট এখানেই শেষ নয়। সাথে তিনটা প্লাস্টিকের সস্তা বয়ামে আচার। আম, জলপাই আর চালতা। পূব পাড়ার রমিজ হুজুরের পুরা প্যাকেজটাও আছে। এইটা বিশেষ প্যাকেজ। রমিজ হুজুর এলাকার গর্ভবতি নারীদের মঙ্গলের স্বার্থে চার আইটেমের একটা প্যাকেজ চালু করেছেন।এখানে আছে  -


১। তেলপড়া- এইটা সর্ষের তেল। পেটে মাখতে হয়। 
২। পানিপড়া- প্রতিদিন ভোর বেলা ফজরের নামাজ পড়ার পরে- পশ্চিম দিকে তাকিয়ে তিন ঢোঁকে খেতে হয়। তিনবার পড়ার জন্য দোয়া আছে একটা-
আল্লাহুম্মা শাফি,
আল্লাহুম্মা মাফি,
আল্লাহুম্মা কাফি।
আল্লাহ্ই রোগ হতে উপশম দানকারী, আল্লাহ্ই মাফ করনেওয়ালা, আল্লাহ্ই যথেষ্ট। 
৩। এরপর আছে একটা ঢ্যাবড়া সাইজের তাবিজ। এইটার মধ্যে গোটা পাক-কালাম লেখা আছে। জ্বীন-পরীর আছর থেকে বাঁচতে এই তাবিজের বিকল্প নেই। 
৪। আর শেষ আইটেমটা একটু ব্যাতিক্রম। সাগুর লাড্ডু। হুজুরের বেগমসাহেবা নিজ হাতে এই লাড্ডু বানান। এরপর এইটার উপর দোয়া পড়া গোলাপজল ছিটানো হয়।

 

সবমিলিয়ে ঊনপঞ্চাশ টাকা বার আনা। হুজুরের হাদিয়া  বেশী। যে যুগে সাড়ে চারশ টাকায় একটা গরু পাওয়া যায়, সেই যুগে  ঊনপঞ্চাশ টাকা একটু  বেশীই।

শ্বাশুড়ির সব উপহার একদিন রাতুলের মায়ের কাছে পৌঁছায়।  এইসময়ে মেয়েদের আচার খাওয়াটা নিয়ম। পিঠে রোদ মেখে রাতুলের মা প্রতিদিন সকালের নাস্তার পর বাড়ীর উঠানে গিয়ে বসেন। স্টিলের বড় প্লেটে পাঁচ-সাতরকমের আচার। এরপর আচার খেতে খেতে কুশিকাঁটা দিয়ে বাচ্চার সোয়েটার বুনতে থাকেন। সকালের নরম রোদের তেজটা না বাড়া পর্যন্ত রাতুলের মায়ের রুটিন এটুকুই- আচার খাওয়া আর সোয়েটার বোনা। রাতুলের বাবার জন্য ঊনি একটা সারপ্রাইজ রেখেছেন। মানুষটাকে চমকে দেওয়ার তাঁর খুব ইচ্ছা। তাই ঊলের একটা জিনিস বুনেছেন- সেটা যে আসলে কী, এখনো কেউ জানতে পারেনি। বেশ গোপনে সেরেছেন কাজটা। ছোটবোনদের কেউ দুলাবাবুর কানে গোপন খবরটা পৌঁছে দিতে পারে- সে ঝুঁকি এড়াতেই।

এদিকে বাহুতে ঢ্যাবড়া তাবিজ দুলিয়ে রাতুলের মা যখন সোয়েটার বুনে যাচ্ছিল, তখন জলিল সাহেবের মনে নানা রকমের মিশ্র অনুভূতি। বাবা হবেন প্রথমবারের মত- সেই থ্রিল। ভাবতেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এরপরে খানিক অজানা ভয়- সবকিছু যাবেতো ঠিকঠাক মতো? রাতুলের মা পারবেতো সব সামলাতে? সংসারের খরচ বাড়বে, ভালা মানের দুধ কিনতে হবে- ডানো নইলে রেড কাউ।বাচ্চার জামা-কাপড়, খেলনা আর দু'দিন পরপর ডাক্তারের চেম্বার। সেইসাথে আছে আরেকটা আফসোস। সন্ধের তাসের আড্ডাটা গেলো। রাতুলের মাকে লুকিয়ে দিনে দু'টো ট্রিপল ফাইভ সাঁটানো কিংবা মাসে শুরুতে দশটাকার হাউজি খেলা আর হবেনা। "ঢাকা টু খুলনা- ঢাকা আচে খোল না; আসাম টু পাবনা- আশা করলে পাবে না।" এমন সব অদ্ভূত ছন্দে হাউজিমাস্টার ডেকে যায় নাম্বারগুলো। গোল্লা দিতে দইতে হিসেব মিলিয়ে একসময় কেউ জিতে নেয় বাম্পার । সমবায় অফিসার মতিনের মতো। আর বেশীরভাগই জলিল সাহেবের মতো সব হারিয়ে ঘরে ফেরে। তবে সব হারিয়ে ঊনার মত মন ফুরফুরে কারো থাকেনা। অবশ্য ঊনার রাগও আছে একটা। বসের উপর। তিনদিনের ছুটি চেয়েছিলেন, পাননি। ওটা পেলে বৌদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি বন্ধ টার সাথে মিলিয়ে একটা নৈমিত্তিক ছুটি মেরে দিতেন। নয়দিনের মামলা শেষ। কিন্তু হলো না। বউটা অপেক্ষা করে থাকে।

 

রাতুলের বউটা শ্বাশুড়ির মতো গৃহিনী নয়। চাকরি করে। মাস্টার। একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায়। আর সন্ধ্যায় দুইটা টিউশনি। সব মিলিয়ে হাজার বার পায়। এর মধ্যে দশ হাজারই ডিপিএস করতো। করার কারণও আছে। সেটা শুধু ঊনি জানেন।বউমা বলেছিল ঊনাকে। যা'ই হোক- সে কারণতা এখন মিটে গেছে, মেয়েটা মা হচ্ছে। রাতুলও একটা ডিগ্রি কলেজে কেমিস্ট্রি পড়ায়। সাথে তিনটা ব্যাচ। কলেজ শুরুর আগে দুইটা- কলেজ ছুটির পরে একটা। কলেজের এমপিও তে নাম আছে- তাই সবমিলিয়ে ভাল রোজগার করে। কিন্তু রোজগার করলেই কি হয়? জলিল সাহেব আপনমনে মাথা নাড়েন। তিনি ভাল রোজগার করতেন। শিক্ষা অফিসে কেরানীর চাকরি।  বেতন যা'ই হোক, তার সাথে হালকা চা নাস্তার পয়সা পেতেন। ফাইল নাড়াচাড়ার ঐ টাকাটাকে উপরি বলতে ঊনি নারাজ। সবাই খুশি হয়ে দিত বলেই নিতেন। আর যেদিন কেউ বেশী খুশি হয়ে যেত, সেদিন জলিল সাহেব চলে যেতেন ইলিশের আড়তে। ঝাঁকা ভরে পাঁচ-সাত হালি ইলিশ না কিনে তিনি ফিরতেন না। রাতুলের মা দেখে রেগে যেত । কিন্তু তারপর দেখা যেত দু'জন মিলে উঠোনে বসে মাঝরাত্তির পর্যন্ত ইলিশ কুটছেন কুপি জালিয়ে। আকাশে চাঁদ। সেই আলোতে কুপির আলো মলিন। মাছ সব ভেজে তুলতে তুলতে ভোর হয়ে যায়।

 

আজকাল মানুষের আয় বেড়েছে, হাতে আইফোন হয়েছে- কিন্তু ইলিশের সেই আগের স্বাদটা নেই। কী হবে এই ফরমালিন জীবনে? নাতির ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য নিয়ে মনে মনে শংকিত হয়ে ওঠেন জলিল সাহেব। অস্ফুেটে বলে উঠেন- আল্লাহ-মাবুদ! দেইখো।

রাতুলের মা আচার বানায় না। রান্নার হাতটা ভালো হলেও গায়ে অত জোর পান না বড় মাপের রান্না করার। তাই রাতুলের বাপকে সব কাঁচাই কিনতে হয়। একে একে গরুর মাংস, খাসির পায়া, দেশী শিং মাছ আর একজোড়া কবুতর কিনে নেন। বাজারেই সব বেছে কুটে নেন। তারপর প্রাণের একটা আচার কেনেন- রসুনের আচার। জিনিসটা ভাল। তারপর ফলের দোকানে গিয়ে কিনে নেন কমলা আর বেদানা। এইসব খাবার এখন বউমার দরকার। ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম-আয়রণ। বাজারে খুব ভাল আনারস উঠেছে- ওদিকে তাকান না জলিল সাহেব। মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর টনটনা জ্ঞান আছেে। রাতুলের খুব গরুর মাংস পছন্দ। গরুর  সিনার মাংস ওর জন্যই নেয়া। বউয়ের রান্না ভালই, তবে এই বাড়ির রান্নার কারিগর রাতুল নিজে। অবাক ব্যাপার। অবশ্য ভালই হয়েছে। বউটা একটু অসুস্থই- সত্যি সত্যি অসুস্থ। একদিন একটু ব্লিডিং হয়েছিল। ডাক্তার বলেছে পুরো বেডরেস্ট। তাই এখন বউ শুয়ে আছে, রাতুল রাঁধছে।

 

সব ভাবতে ভাবতে উপরে উঠেন জলিল সাহেব। পাঁচ এর বি। পাঁচতলাতে। দরজা খুলে দেয় রাতুল। বউটা বসে আছে খাটে। মুখটা বিষাদে ভরে আছে। জলিল সাহেব কাছে গিয়ে পরম মমতায় ছেলের বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। একে প্রথম বাচ্ছা,তা'ও বিয়ের অনেক দিন পর। খুব মায়া হয় জলিল সাহেবের।একসাথে থাকার সময় মেয়েটা ঊনাকে খুব সমাদর করতো। সকাল বিকাল দুবার চা করে দিত। স্কুলে যাবার আগে আর স্কুল থেকে ফিরে। টিউশনির পয়সা বাঁচিয়ে গত শীতে একটা চাদরও কিনে দিয়েছিল। কাশ্মিরি শাল। হাত বুলাতে বুলাতেই টের পান কেঁদে দিয়েছে শারমিন। 

 

জলিল সাহেবের খুব কষ্ট হয়। ভাবেন অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয়না। রমিজ হুজুরের মেয়ের জামাই এখন প্যাকেজের প্রোপাইটার। একটা প্যাকেজ আনিয়ে দেবেন শারমিনের জন্য। কালকেই একটা মোবাইল করতে হবে- প্যাকেজটা পার্সেল করে দেয়ার জন্য। রাতুলের বউয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আশ্বাস দেন- "সব ঠিক হয়ে যাবে, মা। আমি দোয়া করে দিচ্ছি।" জলিল সাহেবের মেহেদি রাঙানো দাড়ি বেয়েও নামে দু'ফোঁটা অশ্রু।

 

এরপর মা-খালাদের কাছে শোনা কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেন ওদের দুজনকে। নিয়মিত নামাজ-তসবিহ করতে বলেন। তারপর রাতুলের বানানো কনডেন্সড মিল্কের চা। চিকেন রোল আর ম্যাগি নুডলস খেয়ে বিদায় নেন জলিল সাহেব। মাত্র ছসপ্তাহ গেছে- বাকী সময়টা যে কেমন যাবে? চিন্তা হয়। চিন্তায় কপাল কুঁচকান তিনি। রাস্তার সব বিকট শব্দও যেন তাঁর কানে যায় না। ঊনি মশগুল উনার প্রথম নাতির ভবিষ্যৎ চিন্তায়, বংশের বাতি জ্বালার সংশয়ে। মনে মনে একটা ছাগল মানত করে ফেলেন তিনি।

 

বাবা বিদায় নেয়ার পর দরজার খিলটা তুলেই রাতুল বউয়ের পাশে এসে বসে। গায়ের সাথে ঠেস দিয়ে বউয়ের মাথাটা বুকে টেনে নেয় সে। তারপর চীৎকার করে কাঁদতে থাকে দু'জন.....একেবারে হাঁউমাউ করে।  জলিল সাহেবকে বলা হয়নি। ঊনার হাতভর্তি বাজার আর হাসিমুখটা দেখে কথাটা চেপে গেছে দু'জনে। স্বর্গ থেকে পৃথিবীর দিকে রওনা দিয়ে মাঝপথে আবার স্বর্গে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওদের বাবুটা। শারমিনের মিসক্যারেজ হয়েছে। ওদের বাবুটা মারা গেছে গতকাল।

 

এলোমেলো বাতাসে পাতা ওল্টায় শোকেসের উপর রাখা বইটার। নিউজপ্রিন্টে ছাপা সস্তা নীলক্ষেত ভার্শন।বইয়ের নাম "ছোট্ট সোনামনিদের সাড়ে চার হাজার নাম"। এই সাড়ে চার হাজার থেকে একটা নাম বেছে নেয়ার আগেই বাবুটা চলে গেল।

 

বাবুটার কখনো কোনো নাম রাখা হয়নি ।

 

পুনশ্চ: শুরুতেই যা বলছিলাম, এটা গল্পই, তবে জীবন থেকে নেয়া গল্প। কল্পনার প্রলেপগুলো বাদ দিলে জ্বলজ্যান্ত যে গল্পটা আছে সেটা আমার, আমাদের, কিংবা আমাদের মতো আরো অনেকের। এই গল্পের লিখতে লিখতেই মনে পড়ে গেল আমাদের বাবুটাকে। যে বাবুটা ২০১৫ সালের শুরুতে কোনো একটা দিন মারা গিয়েছেল সাত সপ্তাহের ভ্রূণ হয়ে। একদিন ভোরে যাকে টিস্যুতে পেঁচিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাথরুম থেকে বেরিয়েছিল আমার বউ । পরম আদরে বুকে টিস্যুর প্যাঁচানো একটা রক্তের দলা আগলে  অনেক অনেক কেঁদেছিলাম আমরা সেদিন। তারপরে আর দিনটা মনে রাখা হয়নি। আমরা কোনদিন জানতে পারিনি ও ছেলে ছিল নাকি মেয়ে ছিল। বেঁচে থাকলে ওর বয়স আজ দু'বছর হতো। নিশ্চয়ই বাবা বলে ডাকতে পারতো। হাত বাড়ালেই জাঁপ দিতো কোলে। খিল খিল করে হাসতো কারণে অকারণে।
ভাল থেকো আমার বাবুটা, আকাশের তারা হয়ে থেকো। বাবা আর মা-কে মনে রেখো। আমার লক্ষ্মী বাবুটা;  যে বাবুটার কখনো কোনো নাম রাখা হয়নি।)