যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কবীর সরণি আছে,
সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
৩৫ বছর পর প্রকাশ্যে এল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এরশাদের স্বৈরশাসন চলছে। ওই আমলে ১৯৮৯ সালের ২৬ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান কবির ছাত্রশিবিরের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন। বড় আন্দোলন গড়ে তুলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ঝাড়ুপেটা করে শিবির সদস্যদের ক্যাম্পাস ছাড়া করে। সেই থেকে দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিবিরের দৃশ্যমান কোনো কমিটি ফর্ম করতে পারেনি। ওই চেতনার জেরে পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদে থাকা জামায়াত লিডাররাও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সসম্মানে শহীদ কবীর সরণি চিহ্নিত করা আছে।
জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র খুনের এক বর্বরোচিত লিগ্যাসি আছে। শাহ বোরহান উদ্দীন রোকন, মোজাম্মেল হক, হাবীবুর রহমান কবির, কামরুল, শওকত কবীর দীপু, আনন্দ কুমার ঘোষ, জুবায়ের আহমেদ। এবং সর্বশেষ ওই তালিকায় সংযুক্ত হয় ছাত্রলীগ নেতা শামিম মোল্লা। এর মধ্যে কবীর ভাইয়ের অকাল প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ।
জাহাঙ্গীরনগরে শিবির বহাল তবিয়তেই ছিল। আমরা এরইমধ্যে জেনে গেছি গেল রেজিমে শিবিরকে সবচেয়ে বেশি আদর যত্ন করেছে ছাত্রলীগ। হিলমেটের আব্রুতে ঢেকে রাখবার বন্ধুত্ব তারাই দেখিয়েছে। এখন খোলস থেকে বেরিয়ে শিবির প্রকাশ্যে এল এই যা। ওরা দেশের অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে পারলে জাহাঙ্গীরনগরেও পারবে। প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই হয়ত শিবিরের জন্য পরম নির্ভরতার কাঁধ পেতে দেবে। মুক্তিযুদ্ধের একচেটিয়া চেতনাধারী আওয়ামী লীগের এটাও বড় অর্জন।
জাবিতে শিবির রিফর্ম বিষয়ে আমার বড় ভাই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক তাঁর সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বলেছেন, 'জাবিতে দেখলাম শিবির আত্মপ্রকাশ করছে। অন্যান্য ক্যাম্পাসে আত্মপ্রকাশ বা রাজনীতি করলে সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু মনে হয় জাবিতে রাজনীতি করতে পারবে না। কারণ জাবির জীবনধারার সঙ্গে ওদের রাজনীতি কুলিয়ে উঠতে পারবে না। বরং গণপ্রতিরোধের মুখোমুখি হতে পারে।'
অনেকেই বলছেন, জাবির পথটাই বরং শিবিরের জন্য অনেক সহজ ও মসৃণ। ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতির বিরোধী নই। বরং গোপনীয়তা ভেঙে তারা যদি ছাত্রদের কল্যাণে ইতিবাচক রাজনীতি করে তাতে সমস্যা দেখি না। অবশ্য পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সেসময় ছাত্রদল আরেকটা ছাত্রলীগ হয়ে উঠবে নাকি তাদের অগ্রজ কবীর ভাইয়ের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
আপাতত ৩৫ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটাতে পেরেছে শিবির, আমরা এই আলাপেই থাকি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ন্যারেটিভ চেঞ্জ হতে সময় লাগে না।
লেখক: সাংবাদিক
৩০ অক্টোবর ২০২৪