Posts

গল্প

স্মৃতির সরোবর

November 1, 2024

MD Raihan

90
View

অনেক বছর পর গ্রামের মাটিতে পা রাখল তৃষা। ঢাকার ব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা তৃষা ছুটি নিয়ে এসেছে তার শৈশবের গ্রামে। সেখানে এসে সরোবরের ধারে দাঁড়াতেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল। শিশুর মতো আনন্দ, খেলাধুলা, আর বন্ধুদের সাথে কেটেছে কতসব দিন—সব মনে পড়ে গেল।

সাধারণ একটি সরোবর, কিন্তু তৃষার কাছে এটি বিশেষ। জলবেষ্টিত পরিবেশ, পাখির ডাক আর বিকেলের সূর্যের আলো যেন তাকে সময়ের পেছনে নিয়ে গেল। মনে পড়ে যায় দাদুর কথা, “জীবনের গতি যেমনই হোক, শান্ত থাকতে হবে।” ঢাকায় চাকরি করার চাপ ও ব্যস্ততায় সে এই শান্তির মানে ভুলে গেছে।

তৃষা তখন হঠাৎ পাশ থেকে একটি চেনা কণ্ঠ শোনে, “তৃষা! তুমি এখানে?” সে ঘুরে দেখে, তার পুরোনো বন্ধু রিহান দাঁড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় একসাথে কত স্মৃতি তাদের। শহরে গিয়ে যোগাযোগ হারিয়ে ফেললেও তাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি মজবুত ছিল। রিহান এখন গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করে।

তাদের মধ্যে পুরোনো স্মৃতির কথা শুরু হয়। রিহান বলে, “তুই কি জানিস, আমি এখানে অনেক কিছু করি? গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াই, বই দেই। তোর মত বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছি, কিন্তু ছোটো কাজের মধ্যেই আনন্দ পাই।”

তৃষা শুনে কিছুটা অবাক হয়। শহরে সবকিছু অর্জন করার পরও সে আসলে কিছু হারিয়ে ফেলেছে। “জানি, বড় কিছু করার পিছনে আমি সব কিছু ফেলে এসেছি। কিন্তু এখানকার মানুষের হাসিতে যে আনন্দ, সেটা কোথাও নেই।”

রিহান মাথা নাড়িয়ে বলে, “গ্রামের মানুষগুলোকে সাহায্য করাটাই আসল সুখের পথ। তারা সরল জীবন যাপন করে। তাদের পাশে থাকলে বুঝতে পারবি, সুখ কোথায়।”

এভাবেই কথা চালিয়ে যেতে যেতে তৃষা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। সে শহরে ফিরলেও গ্রামের জন্য কিছু করতে চায়। আগের জীবনকে রেখে গ্রামে কাজ করতে চায়। তৃষার মনে হয়, এই সরোবরের পাশে বসে সে জীবনের নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছে।

ঢাকায় ফেরার দিন এসে যায়। বিদায় জানাতে গিয়ে তৃষা বলে, “আমি আবার আসবো, রিহান। এই গ্রাম আর তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।”

“তুই এলেই আমাদের আনন্দ হবে। এই গ্রাম তোরই জন্য অপেক্ষা করছে,” রিহান মুচকি হেসে বলে।

তৃষা বুঝতে পারে, জীবনের প্রকৃত সুখ শুধুমাত্র শহরের চাকরিতে নয়, বরং মানুষের জন্য কিছু করতে পারায়। সরোবরের জলরাশির মতোই, জীবনের গভীরে শান্তি আছে।

এভাবেই তৃষা তার জীবনের মানে খুঁজে পায়—মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, আর গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দ।

Comments

    Please login to post comment. Login