Posts

গল্প

পোনারা

May 12, 2024

Omar Khan

Original Author ওমুফা

তখন আমি ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি। আমার নানা বাড়ির সামনেই ছোট্টপুকুরে নানা মাছ চাষ করতো। শোল, গজার আরও কী কী যেন! ছোট্ট পুকুরটায় অনেক মাছ। বর্ষায়  উঠান ভর্তি পানি, রাস্তায় নৌকা চলে। আমরা রাস্তার নৌকায় চড়ে যাই স্কুলে। স্কুলে ক্লাস হয় না। বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড পানিতে থৈ থৈ করে, তবু যাই! বোর্ডে নিজেদের নাম লিখে রাখি, অনেক দিন দেখা হয় না এমন একজনের নাম দেখে মন খুশি খুশি লাগে। ইচ্ছা করে শুধুমাত্র তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখে রাখি। লেখা হয় না, কথা লুকিয়ে রাখি। 
আসার সময় পিচগালা রাস্তার স্বচ্ছ পানি দেখে ভারী অবাক লাগে। এত শীতল এত নরম পানি! জুতা খুলে হাটু পানিতে হাঁটি। হাঁটতে হাঁঁটতে বৃষ্টি শুরু হয়, আমরা দৌড়ে দাঁড়াই কোনো টং দোকানের শাটারের নিচে। সেই দোকানের টিভিতে চলে মান্না-ডিপজলের 'আম্মাজান' সিনেমা। একসময় মুভি শেষ হয়, হাতে রাখা মধুবনের চানাচুরের প্যাকেট খালি হয়, শেষ হয় না বৃষ্টি। খানিকক্ষণ বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকি, হাত বাড়াই বৃষ্টিতে। তারপর দোকানীর থেকে পলিথিনে ঢোকাই বই। তারপর 'আম্মাজানের আঁচলপানে বেহেস্তেরই ছায়া' গাইতে গাইতে দৌড়! সেই দৌড়ে কত আছাড় খাই, কত নোংরা পানি ঢুকে মুখের ভেতর সেই খবর কেউ কোনোদিন রাখি না। কলোনীর মাঠে ফুটবল খেলে কাদায় মাখামাখি করে যখন বাড়ি ফিরি তখন আসর ওয়াক্ত।
দাদী দুয়ারে বসে পান খায়, পিক ফেলে সিঁঁড়ির ওপারে পানিতে। পিকের লাল আবরন ছাড়াতে থাকে অনেক দূর। প্রতেকবার পিক ফেলে দাদী আম্মাকে ডাকে, আমাকে খাবার দিতে বলে। আমি তখন ব্যস্ত বরশি নিয়ে। 
আমি স্টুডেন্ট বোঝানোর জন্য যেমন পড়ার টেবিলে বই আছে তেমন খাবার প্লেট সামনে নিয়ে দুই লোকমা খেয়ে চলে যাই নানুদের লিচু গাছের উপর। জামা আর প্যান্টের ভেতর থাকে ভাজা বাদাম। 
আমি বরশি ফেলে শুয়ে থাকি লিচু গাছের ডালে।  একসময় পোনার ঝাঁক দেখা যায়, আমি নিশ্চিত পোনার ঝাঁকের সাথেই আছে বড় একটা শোল মাছ। মা মাছ! 
মাছটা ধরাও পড়ে আমার বরশিতে, আমি নাচতে নাচতে চলে যাই বাড়ি। বড় সবুজ রঙের বালতিতে জিয়িয়ে রাখি দশ বারো ইঞ্চির একটা শোল মাছ। একটু পর পর এসে দেখে যাই মাছটা, মাঝে মাঝে কী মনে করে সে বালতির মধ্যে ঝাপটাঝাপটি করে। সেই ঝাপটার শব্দ সেদিন খুব আনন্দের হলেও এখন বুঝি একাকীত্বের ঝাপটাঝাপটি কতটা নির্মম! 
সেই অজস্র নিষ্পাপ, অবুঝ, দিকভ্রান্ত পোনাগুলির পিঠে চড়ে হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে গেল আমার বন্ধু, আমার স্কুল, আমার পানিতে ডোবা রাস্তা, ব্ল্যাকবোর্ড। সব... সবকিছু...
আমি এখন ছোট্ট বালতির ভেতর ছটফট করি আমার দিকভ্রান্ত স্মৃতির পোনারা কোথায় আছে কেমন আছে জানার জন্য। 
কেউ একজন আসে হঠাৎ আমার ছটফটানি দেখে তারপর আবার ব্যস্ততার ঢাকনায় ঢেকে দেয় আমার জীবনের বালতি, আমি আবার ছটফট করি, করতেই থাকি। 

-- পোনারা

Comments

    Please login to post comment. Login