নোবেলজয়ী হান কাং এর কবিতা
ভাবঅনুবাদ: এস এম শাহনূর
"ঐতিহাসিক যন্ত্রণাবিদ্ধ বিষয়ের সঙ্গে মুখোমুখি করা ও মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে উন্মোচনকারী প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্যের জন্য" হান কাঙ ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনিই সাহিত্যে প্রথম এশীয় নারী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং কিং দে-জুংয়ের পর দ্বিতীয় দক্ষিণ কোরীয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ১৯৭০ সালের ২৭শে নভেম্বর গোয়াংজু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাস দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করেন। এটি প্রথম কোরীয় ভাষার উপন্যাস হিসেবে ২০১৬ সালে কথাসাহিত্যে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার অর্জন করে।
আয়নায় দেখা শীতকাল
(Winter Through a Mirror)
একটা শিখার কেন্দ্র বিন্দুতে তাকিয়ে দ্যাখো।
দেখবে- নীলাভ হৃৎপিণ্ডাকৃতির চোখ
সবচেয়ে উষ্ণতম উজ্জ্বল বস্তুটা
ঘিরে আছে নয়ন তারার চারপাশ।
কমলা রঙের আভার মতো অন্তরের শিখা
যে কিনা সবচেয়ে বেশি দপদপ করে
জ্বলতে জ্বলতে আবারও ঘিরে রাখে,
বাইরের আধা-স্বচ্ছ শিখাটাকে চৌপাশ থেকে।
আগামীকাল প্রত্যুষে, যেই সকাল হবে
তখন বিদায়ী আমি দূরবর্তী নগরের উদ্দেশ্যে
তাই আজ সকালে কেনো জানি
একটা শিখার নীলাভ চোখ
দৃষ্টি ফেলছে আমার নয়নসীমানার বাহিরে!
ঘুরন্তচেয়ার নৃত্য
(Wheelchair Dance)
চোখের জল ফেলা অভ্যাস হয়ে গেছে।
কিন্তু সেটা ডুবাতে পারেনি আমায়।
ইদানিং দুঃস্বপ্নও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এমনকি একটি বিনিদ্র রজনীও পারেনা
আমার শরীরের তপ্ত ধমনির দখল নিতে।
চেয়ে দেখো। নৃত্যরত আমি।
একটি জ্বলন্ত ঘুরন্তচেয়ারে কাঁধ ঝাঁকাচ্ছি।
ওহ্, তীব্র জোরেশোরে।
কোনো তন্ত্রমন্ত্র নেই, নেই কোনো গোপন কৌশল
নিছক যে কিছুই আমার পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারেনা।
কোন নরক, কোন অভিশাপ -সমাধি পারেনা;
আমার সত্তাকে আচমকা মুছে দিতে, না
সেই নোংরা বরফ বা শিলাবৃষ্টির মতো ছুরি-ব্লেডস।
চেয়ে দেখো। সংগীত করছি আমি। ওহ্
ঘুরন্তচেয়ার জ্বলছে তীব্র অনল শিখায়।
এটাই ঘুরন্তচেয়ার নৃত্য।
অনুবাদক পরিচিতি:
আন্তর্জাতিক কবি, বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক এস এম শাহনূর ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন বল্লভপুর গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও গল্প লেখায় হাতে খড়ি। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন প্রতি পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এমএসএস) এবং মেরিন এন্ড ওয়ারফেয়ার একাডেমি অব চায়না থেকে উচ্চতর প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। গবেষণাধর্মী, ভ্রমণ, জীবনী, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কবিতাসহ তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এর অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক অ্যান্থলজি THE BOOK OF HYPERPOEM এর তিনি একজন বাংলাদেশী কবি। বিশ্বের ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা এবং দেশ বিদেশের নানান পত্রিকা ও সাময়িকীতে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। শিশু অধিকার বিষয়ক কবিতা ও নিজস্ব সংস্কৃতিকে মৌলিক লেখার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করায় আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব মিলফোর্ড- ইউএসএ, তাঁকে (আন্তর্জাতিক সাহিত্যে) সম্মানসূচক ডক্টরেট (ডি লিট) ডিগ্রি প্রদান করেন। সৃষ্টিশীলকর্মে নিবেদিত এ তারুণ্যের কবি বর্তমানে জাতীয় দৈনিক ঐশী বাংলা’র সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।