পৃষ্ঠা-১
অভ্র আর অবনীর সম্পর্ক ছিলো ছয় বছরের। স্কুল জীবনে পড়ার সময়ে তাদের দেখা হয়েছিল, একে অপরের প্রতি টান এতটাই গভীর ছিলো যে, তারা চিরকাল একসঙ্গে থাকবে বলেই স্বপ্ন দেখতো। এভাবেই চলছিলো তাদের দিনগুলো ।
স্কুল থেকে কলেজ জীবনে পা রাখলো দুজনে। দুজন দুজনের থেকে আলাদা হয়ে গেলো পড়ালেখা রং তাগিদে। হঠাৎ একদিন অভ্র জানতে পারলো অবনীর বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হয়েছে ।ছেলে সরকারি চাকরি করে । অবনী অভ্রকে শেষ মুহূর্তে সব জানালো কিন্তু অভ্র পড়াশোনা শেষ তো দূরের কথা এখনো কলেজ জীবন পার করেনি । অবনীর পরিবারকে সে রাজি করার আশায় হাজার চেষ্টা করতে মরিয়া হয়ে উঠলো । কিন্তু কোনো চাকরি সে জোগাড় করতে পারছিল না কে দিবে এই বয়সে চাকরি ,একটা সময় তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়। অবনী এখনো কাছে থাকার পরেও, এই আর্থিক অনিশ্চয়তা তাদের সম্পর্কের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয়।
অবনীর পরিবার বারবার তাকে বিয়ে করতে বলছিল। একদিকে পরিবার আর অন্যদিকে অভ্র এর সাথে ভালোবাসা—দু'দিকে টান পড়ছিল তার। একদিন অবনী বাধ্য হয়ে পরিবারের ইচ্ছাতেই অন্য একজনের সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়। অভ্র সাথে দেখা করে শেষবারের মতো বিদায় জানায় সে, বলেছিল, "আমি চাই না তোমার জন্য আমার কোনো ক্ষতি হোক। তোমার ভালো হবে, এটুকুই আশা রাখি।"
কয়েক বছর পরে,একদিন অভ্র চুপচাপ শহরের একটি পার্কের বেঞ্চে বসে ছিলো। তার পাশে হঠাৎ ই একটা ছোট্ট ছেলেকে দৌড়াতে দেখে সে চমকে ওঠে। ছেলেটির মুখে চেনা হাসি, অদ্ভুত সুন্দর চোখ। কিছুক্ষণ পরেই ছেলেটির মা এসে তাকে কোলে তুলে নেয়। অবাক অবাক হয়ে দেখে, সেটা অবনী। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অবনী একটু হাসে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “কেমন আছো?”
অভ্র একটু মৃদু হেসে বলে, “ভালো আছি। তুমিও তো ভালো আছো দেখছি।”
কথাগুলো বলার সময় অভ্র এর মনে পড়ে সেই ছয় বছরের কথা, যেখানে তাদের স্বপ্নগুলো জমা ছিল। আজ অবনীর মুখে সন্তুষ্টির ছাপ দেখে সে বুঝতে পারে, কিছু ভালোবাসা থেকে যায় অতীতের ছায়া হয়ে।