পৃথিবীর শুরু থেকেই নানা সভ্যতার প্রকাশ ঘটেছে।পুরাতন সভ্যতার বিলুপ্ত ঘটেছে নতুন সভ্যতার আগমনে । ইতিহাসে একেক সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটেছে একেক কারণে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে প্রায় সভ্যতারই বিলুপ্তির জন্য দায়ী অন্য বা পাশের কোন অঞ্চল থেকে সেই সভ্যতার ওপর আক্রমন।অনেক সভ্যতা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে আবার অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে খরা,বন্যা,খাদ্যভাব,জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে।এগুলো যদিও বাহ্যিক দিক কিন্তু অভ্যন্তরীন কিছু কারণও আছে যার ফলে সেই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়েছে।এগুলো হলোঃ বিলাসিতা,অলসতা,অহংকার, অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে যাওয়া, অযোগ্য নেতৃত্ব,অশ্লীলতা,ব্যাভিচার বেড়ে যাওয়া এছাড়াও অনৈতিকতার মতো গুণ ও সদগুণগুলোর অভাব। যে সব সভ্যতা অনেক সমৃদ্ধ ছিল সেগুলোর জন্যও একই নিয়ম খেটেছে যে, প্রাথমিক অবস্থায় সভ্যতা যেমন ছিল অর্থাৎ অনুন্নত ছিল এরপর মাধ্যমিক অবস্থায় সভ্যতা তার চুড়ান্ত উন্নতি লাভ করে এবং শেষ পর্যায়ে সেই উন্নতিগুলো আবার অবনতির কারণ হয়।বিলাসিতা বেড়ে যাওয়াই তারা আর কর্মঠ থাকে না,সামান্য অবস্থা থেকে উচ্চ অবস্থায় উন্নীত হওয়ায় তাদের মধ্যে অহংকার দানা বাঁধে। আর বিলাসিতার সাথে শুরু হয় আরাম প্রিয়তা,বিনোদন প্রিয়তা ফলে এরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্য নেতা উপহার দিতে পারে না। আর যোগ্য নেতার অভাবে সভ্যতা আবার পতনের মুখে ধাবিত হয়।অশ্লীলতা-ব্যাভিচার তাদের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়। তারা জীবনে কষ্টকে ধারন করতে জানে না। বিনোদনকেই জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়।অন্যদিকে অশ্লীল বিনোদনের মাধ্যমে তারা চারিত্রিক মাধুর্য হারিয়ে ফেলে এবং বিলুপ্ত ঘটে তাদের কর্মক্ষমতা,চিন্তাক্ষমতার।এভাবেই তারা নিজেরাই পতনের দিকে ধাবিত হয়।
এখানে আমরা স্পেনের দিকে লক্ষ্য করতে পারি,প্রথমে যখন মুসলমানরা স্পেন জয় করেছিল তখন তারা ছিল কষ্টসহিষ্ণু, বীর।তারা ভোগ বিলাসিতা,আমোদ প্রমোদে মত্ত ছিল না।এরপর শুরু হতে থাকে স্পেনের উন্নতি।জ্ঞান বিজ্ঞানের দিক দিয়ে কর্ডোভা হয়ে ওঠে মুসলমানদের গর্ব।এরপর আস্তে আস্তে অহংকার, বিলাসিতা এবং অযোগ্য নেতৃত্বে নামক উইপোকা আক্রমণ করে স্পেনে।যা স্পেনের রাজত্ব মুসলমানদের থেকে হারানোর কারণ বললে ভুল হবে না।কিন্তু এখানে যে অশ্লীলতা আর ব্যাভিচার ভুমিকা রেখেছে সেটা বললেও ভুল হবে না।অশ্লীলতা ও ব্যাভিচার যে কেমন ভুমিকা রেখেছে একটা ঘটনার মাধ্যমেই সেইটা বোঝা যাবে;
যখন স্পেন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করছিলো তখনই খ্রিষ্টানদের সেনাপতির পাঠানো গুপ্তচর স্পেনবাসীদের সম্পর্কে যা অবগত করেছিল তা হলো এমন, এখন স্পেন জয় করা অসম্ভব কারণ স্পেনে প্রবেশের পথে গুপ্তচর দেখে এক তরুণ কান্নাকাটি করছে কান্নার কারণ জানতে চাইলে তরুণ বলেছিল, মোট দশটি তীরের নয়টি নিশানাবস্তুতে আঘাত করলেও একটি তীর লক্ষ্যচ্যুত হওয়াই সে কান্না করছে।ঘটনাটি শুনে সেনাপতি বিচলিত হয়ে পরে।এরপর সেনাপতি সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করে যার মাধ্যমে একটি জাতির ধ্বংস অনিবার্য। মহাবীর সালাহউদ্দীন আয়ুবী একবার বলেছিলেন,"কোন জাতীকে ধ্বংস করতে হলে তাদের যুবসমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দাও"।সেই সেনাপতিও একই কাজ করেছিল।যখন এই অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হলো তখন আবার গুপ্তচর স্পেনবাসীদের সম্পর্কে যে খবর এনেছিল সেটি এরুপ যে, গুপ্তচরটি স্পেনে প্রবেশের পথে আবার এক যুবক কান্নারত অবস্থায় দেখতে পেলে কান্নার কারণ জানতে চাইলে যুবক বলেছিল, সে এক তরুনীর জন্য কান্না করছে যাকে সে পছন্দ করে।গুপ্তচরের কথা শুনে সেনাপতি বলেছিল, এখনই উপযুক্ত সময় আক্রমণ করার।
অর্থাৎ কোন জাতী,দেশ,সভ্যতা ধ্বংসের জন্য এইটাই যথেষ্ট যে,তাদের মধ্যে অশ্লীলতা ও ব্যাভিচার বিস্তার ঘটিয়ে, বিনোদন নামক স্লো পয়জনের মাধ্যমে তাদের বিলাসিতাই ডুবিয়ে রেখে তাদের কর্মক্ষমতা,চিন্তাক্ষমতা,ধৈর্যের বিলুপ্ত ঘটানো।এছাড়াও ঐক্যের অভাব,অরাজকতা,ন্যায় নীতির অভাবই সভ্যতাকে ধীরে ধীরে চোরাবালির গভীরে ডুবিয়ে নিয়ে যায়। সভ্যতার শেষ প্রান্তে এসে সেই সভ্যতার জনগণ অহংকারী হয়ে ওঠে,নিজের সভ্যতার উন্নতি দেখে তখন তারা ভাবে সভ্যতার আর কোন উন্নয়নের প্রয়োজন নেই এখন শুধু এই উন্নতিগুলো ভোগের সময়। তারা যে বিলুপ্ত হতে পারে এইকথা তাদের চিন্তাতেও আসে না।
বর্তমানে আমাদের অবস্থাও এমন আমরা উন্নতির শীর্ষে,বিলাসিতায় মগ্ন আমাদের জীবনযাত্রা,চিন্তাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে ধীরে ধীরে।আমরা বিলাসিতাকেই জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে। আমরা হয়ে পরেছি অলস।আমাদের উন্নতির অহংকার আমাদের পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ উন্নতির চূড়া থেকে লাফ দিয়ে কখন যে, মাটিতে পতিত হয়ে মারা যাব এগুলোর চিন্তা আমাদের নেই। অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনৈতিকতা,অনৈক্য।
এখন আমার প্রশ্ন আর কতদিন আমরা টিকে থাকতে পারব?