২০০৮ সালের কথা। নাসির উদ্দিন খানের বয়স তখন ১৮ বছর। সে ছিল গ্রামের এক সাধারণ ছেলে, কিন্তু হৃদয়ে ছিল গভীর আবেগ আর ভালোবাসা। সেই বছরেই সে শ্রাবণী নামে এক মেয়েকে ভালোবাসতে শুরু করে। শ্রাবণী ছিল অন্য রকম—একদিকে দুষ্টু, অন্যদিকে স্নিগ্ধ; তার চোখে ছিল এক গভীরতা, যা নাসিরের মনের গভীরে গিয়ে বসে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা খুব সহজ ছিল না। কারণ শ্রাবণীর পরিবার একটি পুরনো জমিদার বাড়িতে থাকত, যে বাড়িটি নিয়ে অনেকের মুখে শোনা যেত ভৌতিক কাহিনি।
নাসির ও শ্রাবণীর সম্পর্ক বাড়তে লাগল। কিন্তু যতই তারা কাছাকাছি আসতে থাকে, ততই যেন কিছু অদ্ভুত ঘটনা তাদের সম্পর্কের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শ্রাবণী কখনো হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করত, কখনো অদ্ভুতভাবে হাসত, যা নাসিরকে ভীষণভাবে চিন্তিত করে তুলেছিল। একদিন নাসির জানতে পারে, গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা বলে, "শ্রাবণীর বাড়ির ভেতরে কোনো অশরীরী আত্মা রয়েছে, যে তাদের পরিবারকে বছরের পর বছর ধরে ভোগাচ্ছে।"
এই কথাটা শুনে নাসিরের মন বিষণ্ন হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, তার ভালোবাসার পথ সহজ হবে না। তবুও সে সাহস করে শ্রাবণীর বাড়ির ভেতরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমবার যখন সে সেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে, তখন তার শরীর হিম হয়ে যায়। বাড়ির দেয়ালে যেন এক অদ্ভুত ছায়া তার দিকে চেয়ে আছে। প্রতিটি পদক্ষেপে সে অনুভব করে, কেউ যেন তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে। তার কাঁধের ওপর দিয়ে হঠাৎ এক ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়, যা তাকে ভীষণ ভীত করে তোলে।
একদিন, শ্রাবণীর বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর নাসিরের সামনে একটি ছায়ামূর্তি আবির্ভূত হয়। ছায়ামূর্তিটি ছিল একজন যুবতীর, যে নাসিরের দিকে চেয়ে আছে। মূর্তিটি ধীরে ধীরে তার কাছে আসতে থাকে, আর নাসির বুঝতে পারে যে এটি সেই আত্মা, যার জন্য শ্রাবণী এতদিন অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। মূর্তিটি তখন এক অদ্ভুত ভাষায় ফিসফিস করে বলে, “আমার নাম শিরিন, আমি এই বাড়ির একসময়কার বাসিন্দা ছিলাম। আমাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আর আজ পর্যন্ত আমার আত্মা এই বাড়ির ভেতরে বন্দী হয়ে আছে। ভালোবাসার মানুষকে কাছাকাছি আনতে আমি কাউকে দিতে পারব না।”
শ্রাবণীর ঠাকুমার কাছে গিয়ে নাসির জানতে পারে এই আত্মার ইতিহাস। অনেক বছর আগে, শিরিন নামের এক যুবতীকে জমিদারের কিছু লোক নির্মমভাবে হত্যা করে। কারণ সে জমিদারের ছেলেকে ভালোবাসত। তার আত্মা এই বাড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে আছে এবং কারো ভালোবাসার সম্পর্ক সহ্য করতে পারে না। নাসির বুঝতে পারে, তাকে শিরিনের আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে সে তা করবে, তা নিয়ে সে দোটানায় পড়ে যায়।
সে একজন পুরোহিতের কাছে যায়। পুরোহিত তাকে জানান, “শিরিনের আত্মা তখনই মুক্তি পাবে, যদি তার শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করা যায়। তার ইচ্ছা ছিল যে, তাকে তার প্রিয় মানুষের পাশে কবর দেওয়া হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তার আত্মা এত দিন ধরে তাই প্রতিশোধ নিচ্ছে।”
নাসির তখন শিরিনের কবর খুঁজে বের করে এবং তার প্রিয় মানুষের কবরের পাশে শিরিনকে সমাধিস্থ করে। এতে শিরিনের আত্মা শান্তিতে মুক্তি পায়, আর তার প্রভাব থেকে শ্রাবণীও মুক্ত হয়।
শ্রাবণী ও নাসিরের মাঝে আর কোনো বাধা থাকে না।