পোস্টস

গল্প

ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি

৭ নভেম্বর ২০২৪

নাদিম মোস্তফা

 

 "ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি"

অনেক বছর আগে একটি ছোট গ্রামে একটি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি থাকতেন, যার নাম ছিল দুর্বিন। তিনি ছিল একটি উদাহরণ, যার কাছ থেকে গ্রামের মানুষ জীবনের নানা বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ নিত। দুর্বিন খুবই সৎ এবং বিচারিক ছিলেন, আর তাঁর বুদ্ধিমত্তার জন্য অনেকেই তাঁর কাছে আসত সমস্যা সমাধান করার জন্য।

গ্রামটিতে একদিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গ্রামে এক তরুণ ছেলে, সিদ্ধার্থ, যে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং কিছুটা অহংকারী ছিল, সে গ্রামের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার জন্য একদম নতুন পথে হাঁটতে হবে—তাকে কিছু বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেগুলোকে সফল করতে হবে। একদিন সিদ্ধার্থ এক পুরনো গল্প শোনে, যেখানে এক ব্যবসায়ী অত্যন্ত ধনী হওয়ার জন্য একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং সেই ঝুঁকির ফলে তার ভাগ্য বদলে গিয়েছিল। সিদ্ধার্থ ভাবল, যদি সে সেই পথ অনুসরণ করে, তাহলে তার জীবন বদলে যাবে।

সিদ্ধার্থ সিদ্ধান্ত নিল, সে তার ছোট ব্যবসা বন্ধ করে এবং একটি বড় রিস্ক নিবে—একটি নতুন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, যেটি কোনো একসময় খুবই জনপ্রিয় হবে। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত দ্রুত, আর তিনি তার ব্যবসার পরিকল্পনা বা বাজারের চাহিদা সম্পর্কে কোনো গবেষণা করেননি।

একদিন, সে দুর্বিনের কাছে গিয়ে বলল, "মাস্টার, আমি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি, যা পুরো গ্রামকে চমকে দেবে। আমি বড়লোক হবো, আপনি দেখবেন!"

দুর্বিন তাকে ধীরে ধীরে প্রশ্ন করলেন, "তুমি কি বাজারের প্রয়োজন বুঝে ব্যবসা শুরু করছ? তুমি কি গ্রামবাসীর চাহিদা বা উৎপাদন খরচ সম্পর্কে জানো?"

সিদ্ধার্থ উত্তর দিল, "না, মাস্টার, আমি শুধু জানি যে, এই পণ্যে অনেক লাভ হবে। আমি ঝুঁকি নেব এবং সেটা সফল করব।"

দুর্বিন মাথা নেড়ে বললেন, "ঝুঁকি নিতে হবে ঠিকই, কিন্তু মাথা ছাড়া ঝুঁকি গ্রহণ করা বিপদ ডেকে আনে। তুমি যখন নিশ্চিত না যে বাজারে তোমার পণ্যের চাহিদা আছে, তখন বড় ঝুঁকি নাও। তুমি যদি ব্যর্থ হও, তখন তা শুধরানো কঠিন হবে।"

কিন্তু সিদ্ধার্থ নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিল। সে দুর্বিনের পরামর্শ না মেনে তার ব্যবসা শুরু করল। প্রথমে তার পরিকল্পনা অনেক উত্তেজনা এবং আশা নিয়ে এগোচ্ছিল, কিন্তু খুব দ্রুতই তার মুখোমুখি হতে হলো বিপদের। তার পণ্যটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়নি। বাজারে পণ্যের জন্য কোনো চাহিদা ছিল না। সে আরও বেশি অর্থ খরচ করে, কিন্তু ফলাফল হলো ন্যূনতম।

শীঘ্রই তার সব সঞ্চয় এবং ঋণ পূরণ করতে শুরু করে, কিন্তু সে কোনো লাভ পাচ্ছিল না। গ্রামবাসীরা তার নতুন পণ্য নিয়ে কথা বলতে শুরু করল, কিন্তু সবাই হতাশ ছিল। এক সময়, সিদ্ধার্থ বুঝতে পারল যে, তার সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলে গেছে এবং সে পুঁজির মধ্যে পড়েছে।

হতাশ হয়ে একদিন, সে আবার দুর্বিনের কাছে গিয়ে বলল, "মাস্টার, আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। আপনার পরামর্শ মেনে চললে হয়তো এত বড় ভুল করতাম না।"

দুর্বিন সহানুভূতির সাথে বললেন, "দুঃখিত শুনে, সিদ্ধার্থ। আমি জানি, তুমি চেষ্টা করেছ। কিন্তু জীবন এমনই—ঝুঁকি নিয়ে কিছু করতে হলে, আগে তার সম্ভাবনা এবং বিপদ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একে ধীরে ধীরে চিন্তা করে এবং পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। কিন্তু তুমি শুধু গতির মধ্যে চলে গেছো, বুঝতে চেষ্টা করোনি কি কিছু ভুল ছিল।"

সিদ্ধার্থ কাঁপতে কাঁপতে বলল, "এখন আমি কী করব, মাস্টার? আমার সবকিছু প্রায় শেষ হয়ে গেছে।"

দুর্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, "তোমার হারানো সব কিছু ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। কিন্তু তুমি যদি ধৈর্য্য রাখো, ব্যবসার জায়গায় ফিরে গিয়ে তোমার ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করো, তুমি আবার নতুন করে শুরু করতে পারো। আমি জানি তুমি চেষ্টা করেছিলে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—বিভিন্ন পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা নেওয়া।"

সিদ্ধার্থ পরবর্তী কয়েক মাস ধরে পুনরায় চেষ্টা করতে শুরু করল। সে ধীরে ধীরে তার ব্যবসার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলো এবং আস্তে আস্তে আবার লাভ পেতে শুরু করল। কিন্তু এবার তার পথ ছিল আরও স্মার্ট এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ। সে নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং দুর্বিনের পরামর্শ অনুসরণ করে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করল।

শেষে, সে বুঝতে পারল যে, জীবনে সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সময় এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্তই সফলতার মূল চাবিকাঠি। আর সেই শিক্ষা তাকে তার জীবনের বড় পরিবর্তন এনে দিল।