**প্রফেট মোহাম্মদ (সা.) – একটি গল্প**
একদিন, মক্কার একটি শান্ত এলাকায় একটি ছোট্ট ঘর ছিল। সেখানে বসবাস করতেন একটি শিশু, যার নাম ছিল মুহাম্মদ। তাঁর পিতা, আবদুল্লাহ, যখন তাঁর জন্মের কিছুদিন আগে মারা গিয়েছিলেন, তখন তাঁর মা আমিনা তাঁকে স্নেহ ও ভালবাসায় বড় করতেন। কিন্তু, দুঃখের বিষয়,
আমিনা মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর পুত্রকে ছেড়ে চলে যান। এরপর, মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রথম অভিভাবক হলেন তাঁর দাদা, আবদুল মুত্তালিব, এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে পালন করেন তাঁর চাচা, আবু তালিব।
তবে, তাঁর শৈশব ছিল কঠিন। তিনি দেখতেন পৃথিবী কতটা অসত্য ও অধর্মের দিকে পরিচালিত হচ্ছে। মক্কার মানুষ তখন নানা মিথ্যা বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। তাঁরা মূর্তিপূজা করত, কুপ্রথায় ডুবে থাকত, আর একে অপরকে অত্যাচার করত। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর হৃদয়ে এমন কোনো লোভ বা হিংসা ছিল না। তিনি বরং সব কিছু থেকে আলাদা, শান্ত এবং সৎ জীবনযাপন করতেন।
বয়স যখন ২৫, তখন তিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন। একদিন, একটি ব্যবসায়ী ট্রিপের জন্য তিনি একজন মক্কান মহিলা খাদিজা বিনত খুয়াইলিদ-এর কাছে গিয়েছিলেন, যিনি খুবই সফল এবং ধনী একজন মহিলা ছিলেন। তাঁর সততা ও দক্ষতা দেখে খাদিজা তাঁকে একজন বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেন। কিছু সময় পরে, খাদিজা নিজে মুহাম্মদ (সা.)-কে বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়ে ছিল অত্যন্ত সুখী, এবং তাঁরা একসাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছিলেন। কিন্তু, মুহাম্মদ (সা.)-এর মনের মধ্যে কখনোই পৃথিবীর ঐশ্বর্য ও প্রলুব্ধক জিনিসগুলোর প্রতি আকর্ষণ ছিল না। তিনি গভীরভাবে ভাবতেন, মানব জাতির উন্নতির জন্য কী করা যায়।
একদিন, মক্কা থেকে কিছুটা দূরে হিরা গুহায় একা সময় কাটানোর জন্য গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক তীব্র রাতে, তিনি আল্লাহর তরফ থেকে একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অনুভব করেন। হঠাৎ, তাঁর কাছে এক অস্বাভাবিক ব্যক্তি উপস্থিত হন, যিনি তাঁকে জানালেন যে তিনি আল্লাহর বার্তা নিয়ে এসেছেন। সেই মুহূর্তে, মুহাম্মদ (সা.) জানলেন, তিনি একজন নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এবং তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা — তাঁর নবুয়তের সূচনা।
এর পর থেকেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বার্তা প্রচার করতে শুরু করলেন। তিনি মক্কায় এসে লোকদের সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করতে লাগলেন। তিনি বললেন, "এটা জানো, আল্লাহ এক।" কিন্তু, তাঁর এই প্রচার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি করেছিল। মক্কার শক্তিশালী নেতারা তাঁকে ভয় পেয়েছিল, কারণ তাঁর শিক্ষা সমাজের কাঠামোকে বিপর্যস্ত করতে পারে। তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করল। কিছু লোক তাঁর কথা শুনতে আগ্রহী হলেও, অধিকাংশই তাঁর বিরোধিতা করল।
তবে, মুহাম্মদ (সা.) কখনও হতাশ হননি। তিনি জানতেন, সত্য সবসময় প্রাধান্য পাবে। তাঁর প্রতি আল্লাহর সাহায্য ছিল, এবং সেই সাহায্যের মাধ্যমে তিনি সব বাধা অতিক্রম করেছিলেন। তাঁর সাহস, ধৈর্য, এবং নিঃস্বার্থ প্রেম ছিল অনন্য।
একদিন, মদীনা শহরে কিছু মানুষ তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিল এবং তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে মদীনা চলে গেলেন, এবং সেখানে ইসলামের নতুন সমাজ গড়ে উঠতে শুরু করল। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ মদীনা ছিল ইসলামের প্রথম কেন্দ্র, যেখানে মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিল।
মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ছিল একটি অনুপ্রেরণার গল্প। তিনি সবার জন্য ছিলেন এক উদাহরণ। তাঁর জীবনের শিক্ষাগুলি আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। তিনি বলেছিলেন, "আমি শুধু মানবতার জন্য এসেছি, যাতে আমি তাদের জন্য শান্তি, ভালোবাসা ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারি।"
এভাবেই মুহাম্মদ (সা.) মানবতার জন্য আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন, এবং তাঁর জীবন আজও পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জীবিত।
**শেষ।**
এই ছোট গল্পের মাধ্যমে আমি চেষ্টা করেছি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র উপস্থাপন করতে। গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে আরও লিখবো।