Posts

গল্প

যীশু খ্রিষ্ট – একটি গল্প

November 8, 2024

সুজন ঢালী রাসেল

Original Author উইকিপিডিয়া, ও ইন্জিল থেকে অনুপ্রেরণা প্রাপ্ত

171
View

**যীশু খ্রিষ্ট – একটি গল্প**

এক শহরে এক নবজাতক জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যার নাম রাখা হয়েছিল যীশু। এই শিশুর জন্মটি ছিল বিশেষ, কারণ তাঁর জন্মের সঙ্গে জড়িত ছিল এক মহাশক্তি, এক প্রাচীন প্রতিশ্রুতি যা বহু বছর আগে আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছিল। সেই নবজাতক, যীশু, যে বড় হয়ে উঠবেন মানবতার ত্রাণকর্তা, তাঁর জন্মের সংবাদ পৃথিবীজুড়ে পৌঁছেছিল।

যীশুর জন্মের সময়, বেথলেহেম শহরে একটি অবলম্বন ছিল, যেখানে মেরি, যীশুর মা, ও তাঁর পিতা যোশেফ ছিলেন। তাঁরা ছিলেন সাধারণ মানুষ, কিন্তু যীশুর জন্মের মধ্যে ছিল ঈশ্বরের বিশেষ পরিকল্পনা। কিছু দূরের খ্রিস্টানরা, যাদের বলা হয় তিনটি জ্ঞানি, একটি তারার মাধ্যমে জানতে পারেন যে পৃথিবীতে এক মহা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁরা সেই শিশুকে দেখতে বেথলেহেমে এসেছিলেন এবং তাঁকে উপহার প্রদান করেন।

যীশুর শৈশব ছিল সাধারণ, তবে তাঁর মধ্যে ছিল এক গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান। তিনি খুব ছোট থেকেই মানবতার জন্য এক মহান বার্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রেম, দয়া, এবং সত্যের কথা বলতেন। তাঁর শিক্ষা ছিল যে মানুষ একে অপরকে ভালবাসুক, যেভাবে ঈশ্বর তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি তাঁর বার্তা প্রায়শই গুণবন্ত ভাষায় প্রকাশ করতেন, যেমন, "যে তোমাকে এক গুণ মারে, তুমি তাকে দু'গুণ ভালোবাসো।" তিনি সকলকে বলতেন, "আপনি যে ভাবে অন্যদের সাহায্য করবেন, আল্লাহও আপনাকে সেই একই ভাবে সাহায্য করবেন।"

যীশু ছিলেন এক প্রজ্ঞাময় শিক্ষক, এবং তাঁর আশেপাশে অনেক মানুষ তাঁর শিখানো পথে চলতে চাইত। তিনি অসুস্থদের সুস্থ করতেন, অন্ধদের দৃষ্টি দিতেন, এবং মৃতদের জীবিত করতেন। একদিন, যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একটি বড় ঝিলমিল সাগরের পাশে হাঁটছিলেন, যখন তাঁরা দেখেন এক প্রচণ্ড তুফান বয়ে চলেছে। তারাও ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু যীশু শান্তভাবে বললেন, "ভয় পাওয়ার কিছু নেই।" তারপর তিনি তুফান থামিয়ে দিলেন, এবং সাগর শান্ত হয়ে গেল। তাঁর শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন, "এটি কীভাবে সম্ভব?!" তখন যীশু হাসি দিয়ে বললেন, "যে ঈমান রাখে, তার জন্য কিছুই অসম্ভব নয়।"

এমনকি যীশু খ্রিষ্টের শিক্ষা অনেকের পছন্দ হয়নি। তাঁর বার্তা সমাজের প্রতিষ্ঠিত কাঠামো ও নীতি-নির্দেশনা ভাঙছিল। তখনকার ধর্মীয় নেতারা তাঁকে মিথ্যা, বিপথগামী হিসেবে মনে করতেন। তারা এই ভেবে ভীত ছিলেন যে, যীশু যদি তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন, তবে তাদের ক্ষমতা সংকুচিত হতে পারে। তাই তাঁরা তাঁকে বন্দি করে, ক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে হাজির করেন।

এখন, যীশু জানতেন, তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে তাঁকে এক কঠিন পথে হাঁটতে হবে। তাঁর শিষ্যদের বললেন, "এটি আমার পথ, এবং আমি এর মধ্যে দিয়ে যাব।" তিনি জানতেন, তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে মানবজাতির জন্য এক মহামানবিক ত্যাগ হবে। যীশুকে রোমান শাসক পিলাতুসের সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল, এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্রুশে চড়ানো হয়।

তবে, যীশুর মৃত্যু শেষ নয়। তিনি তিন দিন পর পুনরুত্থিত হন, যা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে এক নবজীবনের উৎসবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যীশুর পুনরুত্থান ছিল ঈশ্বরের শক্তির প্রমাণ, এবং এটি পৃথিবীজুড়ে শাস্তি, দুঃখ ও মৃত্যুর উপর চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করে।

যীশু খ্রিষ্টের শিক্ষা এবং তাঁর জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি আজও পৃথিবীজুড়ে মানুষের হৃদয়ে উজ্জ্বল। তাঁর বার্তা ছিল "প্রেম" এবং "ক্ষমা", যা আজও আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রেরণা দেয়। তিনি আমাদের শেখান, “প্রেমই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধর্ম।” এবং "আপনি যদি আপনার শত্রুদের ভালোবাসেন, তবে পৃথিবীটি সত্যিকারের শান্তিতে পরিণত হবে।"

এভাবেই, যীশু খ্রিষ্টের জীবন ছিল এক অনুপ্রেরণা, এবং তাঁর শিক্ষা এখনো প্রতিটি হৃদয়ে জীবিত।

**শেষ।**

এই গল্পে আমি যীশু খ্রিষ্টের জীবনের কিছু মূল দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাঁর শিক্ষাগুলি আমাদের মানবিক দিককে শুদ্ধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিশারী।

Comments

    Please login to post comment. Login