শীতের সকাল, চারপাশে কুয়াশার চাদর মুড়ানো। প্রভাতী রোদ ভাঙতে না ভাঙতেই রুদ্র ছুটে চলে গিয়েছিল পার্কের দিকে। তার মনের ভেতর একটা উত্তেজনা – আজ তার সুমির সাথে দেখা হবে অনেকদিন পর। দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেল, দূরত্ব, ব্যস্ততা আর নানা কারণে তাদের দেখা হওয়া হয়নি। তবে আজ, এই বিশেষ দিনে, রুদ্র ঠিক করেছে তাকে সব বলবে।
পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা সুমির দিকে তাকিয়ে রুদ্রের বুকের ভেতর হঠাৎ করেই উত্তেজনা আর ভালোবাসার মিশ্র অনুভূতি আছড়ে পড়ে। সুমির চোখে-মুখে সেই চেনা মিষ্টি হাসি, চোখের কোণে কিছুটা লাজুক ভাব। সে এগিয়ে এসে বসলো রুদ্রের পাশে। তারা দু'জনেই কিছুক্ষণ নীরব বসে রইল, শুধু বাতাসের মৃদু শীতলতা আর দুজনের নিঃশ্বাস যেন মিলেমিশে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
রুদ্রের গলায় শব্দ আটকে যাচ্ছিল, কিভাবে সে সুমিকে বলবে যে, সে তাকে কতটা ভালোবাসে। অনেকদিনের পুরনো বন্ধুত্বের এই সম্পর্ককে সে আর বন্ধুত্বের জায়গায় রাখতে পারছে না। এই অনুভূতি আজকাল তাকে ঘিরে রাখে প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ। সেই শীতল সকালে, শীর্ণ কুয়াশায় ঢেকে থাকা পৃথিবীর মাঝে সুমিকে বলার জন্য তার বুকের ভেতর গভীর ভালোবাসা জমা হয়ে আছে।
সুমি কিছুক্ষণ রুদ্রের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থেকে অবশেষে বলল, "তোমার কি কিছু বলার ছিল, রুদ্র?"
রুদ্র কিছুটা নার্ভাস হলেও সাহস সঞ্চয় করে বলল, "সুমি, আমি জানি, আমরা অনেকদিন ধরে বন্ধু, কিন্তু এই বন্ধুত্বের মধ্যে যে অনুভূতিগুলো জমে আছে, আমি তা আর চাপা দিতে পারছি না। আমি...আমি তোমাকে ভালোবাসি, সুমি।"
সুমি কিছুক্ষণ কিছু না বলে রুদ্রের দিকে অপলক তাকিয়ে রইল। তারপর তার ঠোঁটে ফুটে উঠল মৃদু হাসি। "আমিও তো অপেক্ষায় ছিলাম, রুদ্র, কবে তুমি আমাকে এটা বলবে," বলেই সুমি লাজুক চোখে মাটির দিকে তাকাল।
সেই মুহূর্তে রুদ্রের মনে হলো যেন চারপাশের সবকিছু থমকে গেছে। তার পৃথিবী যেন সুমির সেই কথায় পূর্ণতা পেয়েছে। তারা দুজন একে অপরের হাত ধরল, সেই শীতের সকালে, সূর্যের কিরণ তাদেরকে আলতো করে স্পর্শ করল। পৃথিবীটা যেন অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছিল সেদিন।