পোস্টস

গল্প

বন্ধুত্বের অপেক্ষা

৮ নভেম্বর ২০২৪

রিফাত সিদ্দিকী

সুমিত আর নীলা খুব ভালো বন্ধু। সেই বন্ধুত্ব কলেজের প্রথম দিন থেকে। দুজনেই সাহসী, চঞ্চল এবং পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে ভালোবাসে। ক্লাসে কিংবা কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের হাসাহাসি, মজা করা কিংবা একসাথে বসে কফি খাওয়া – সবাই জানতো যে তারা একে অপরের জন্য বিশেষ কিছু। তবে বন্ধুত্বের বাইরে সুমিত কখনো কিছু ভাবেনি। তার কাছে নীলা শুধু একজন খুব কাছের বন্ধু, কিন্তু নীলার মনের গভীরে এক অজানা অনুভূতি, যা ক্রমেই প্রেমে পরিণত হচ্ছিল।

নীলা অনেক দিন ধরে সুমিতকে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু ভয় পাচ্ছিল সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে। সে ভাবতো, "যদি সুমিত আমার মনের কথা শুনে আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়? যদি সে আমাকে বুঝতে না পারে?" কিন্তু ভালোবাসা একটা এমন অনুভূতি, যা অনেক সময় না বলেও চোখে প্রকাশ পায়।

একদিন সন্ধ্যায় নীলা সাহস করে সুমিতকে নিয়ে পার্কে চলে যায়। তারা দুজনেই চুপচাপ বসেছিল। চারপাশে হালকা বাতাস বইছিল, পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ, আর সন্ধ্যার নরম আলো সবকিছু যেন আরও আবেগময় করে তুলেছিল।

নীলা কথা শুরু করল, "সুমিত, আমরা অনেকদিন ধরে বন্ধু, তাই না?"

"হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তুমি তো আমার সব থেকে ভালো বন্ধু।" সুমিত হেসে বলল।

নীলা একটু থেমে বলল, "আমাদের বন্ধুত্বের বাইরেও কখনো কিছু ভেবেছো?"

সুমিত একটু চমকে উঠল। সে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, "কী বলতে চাইছো তুমি? বন্ধুত্বের বাইরেও আবার কী আছে?"

নীলা একটু হেসে বলল, "আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, যদি এই বন্ধুত্বটা আরেকটু গভীর কিছু হতো?"

সুমিত কপাল কুঁচকে বলল, "মানে? তুমি তো আমার খুব কাছের বন্ধু। বন্ধুত্বের বাইরে আর কী হতে পারে?"

নীলা বুঝতে পারলো, সুমিত হয়তো তার অনুভূতিগুলো বুঝছে না। সে আস্তে আস্তে বলে, "ধরো, আমাদের বন্ধুত্ব যদি প্রেমে রূপান্তরিত হতো, তুমি কী ভাবতে?"

সুমিত একটু চুপ হয়ে গেল। সে কিছুক্ষণ নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, "নীলা, তুমি এমন কিছু বলছো যা আমার জন্য খুব অপ্রত্যাশিত। আমি কখনো তোমার দিকে সেভাবে ভাবিনি। তোমার সাথে আমার একটা সহজ-সরল বন্ধুত্ব আছে, আর আমি সেটাকে বেশি কিছু ভাবিনি কখনো।"

নীলা হতাশ হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল যে সুমিত সত্যিই তার অনুভূতিগুলোকে বুঝতে পারছে না। নীলা ভাবলো, "কেন সে বোঝে না? আমার মনের কথা কি এতটাই কঠিন? আমি কি তাকে ভালোবাসার অনুভূতিটা বোঝাতে পারছি না?"

কয়েক দিন তারা দুজনেই একে অপরের সাথে ঠিক মতো কথা বললো না। নীলা একটু দূরত্ব বজায় রাখতে লাগলো, আর সুমিত সেই পরিবর্তনটা অনুভব করল। সে ভাবতে লাগলো, "কেন নীলা হঠাৎ এভাবে আচরণ করছে? ও কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে? আমি কি ভুল করলাম?"

একদিন সুমিত সিদ্ধান্ত নিল যে সে নীলার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে। সে নীলাকে নিয়ে কফি শপে গেল এবং বলল, "নীলা, আমি তোমার সাথে খোলামেলা কথা বলতে চাই। তুমি আমাকে যা বলেছিলে, তা আমি খুব ভেবেছি। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কিভাবে আমার এই অনুভূতি তৈরি করা উচিত। কিন্তু আমি তোমার প্রতি আমার বন্ধুত্বের অনুভূতিকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করতে চাই কিনা, তা নিয়ে আমি সংশয়ে আছি।"

নীলা একটু খুশি হল যে সুমিত অন্তত কিছু ভাবতে শুরু করেছে। সে শান্ত গলায় বলল, "সুমিত, ভালোবাসা জোর করে হয় না। আমি শুধু তোমাকে এটা বলতে চেয়েছিলাম যে আমি তোমাকে অন্যভাবে দেখি, আর যদি তুমি সেটা না দেখো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। তোমার বন্ধুত্ব আমার কাছে সব কিছু, আমি কখনো চাইনি এটা নষ্ট হোক।"

সুমিত কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, "তাহলে তুমি কি আমাকে সময় দিতে পারবে? আমি বুঝতে চাই যে সত্যিই এই অনুভূতিটা কী।"

নীলা হাসলো এবং বলল, "অবশ্যই, সময় নাও। কিন্তু যাই হোক না কেন, আমাদের বন্ধুত্বটা যেন কখনো নষ্ট না হয়।"

সুমিত মাথা নাড়ল, এবং তারা আবার আগের মতো হাসতে আর গল্প করতে শুরু করল। কিছু সময় পরে, সুমিত তার মনের কথা খুঁজে পেতে শুরু করল এবং বুঝতে পারল যে, হয়তো নীলার সাথে তার বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু আছে। সময়ের সাথে তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে এক নতুন মোড় নিতে লাগলো – যেখানে বন্ধুত্বটা একদিন প্রেমে রূপ নিল।

নীলা হাসিমুখে ভাবল, "প্রেম মানে আসলে অপেক্ষা আর বোঝার ব্যাপার, যেখানে শুধু অনুভূতির সাথে ধৈর্য আর বিশ্বাসও থাকতে হয়।"