পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

ছিপ ও পুঁটিমাছ

৯ নভেম্বর ২০২৪

borhun uddin

 

- মা, মা, কোথায় তুমি?

- এইতো বাবা আমি বাহিরে। কখন এলে তুমি?

- এখন এসেছি। এদিকে আসো।

- আসছি।

বলে মা ছন্টুর কাছে আসছে। আর ছন্টুর এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। স্কুল থেকে এসে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে মাকে ডাকতে থাকবে। মনে হয় কতদিন মাকে দেখেনি। মা জানে ছেলের এমন অভ্যাস। কি আর করা। আজ বৃহস্পতিবার। হাফবেলা স্কুল, ছুটি হয়েছে তাড়াতাড়ি। কাঁধের ব্যাগ খুলে বিছানার উপর রেখে দিল। তারপর মা এসে সব গুছিয়ে রাখল। মা বললঃ তুমি মুখহাত ধুয়ে খেতে আসো। এরপর ছন্টু খাবার টেবিলে বসেই খোঁজা-খুঁজি শুরু করলো কিন্তু কথাও পেলো না। মা বুঝতে পেরে বললঃ আজ নেই। আজ বাজারে তোমার বাবা পুটিমাছ পায়নি।

- তাহলে আমি কি খাবো।

- যা আছে তাই দিয়ে খেয়ে উঠো।

কিন্তু ছন্টু খাবার টেবিলে বসেই রইলো। খাবার তার মুখের ভেতর যাচ্ছেই না। পুটিমাছের মচমচে ভাজি ছন্টুর প্রিয়। কিন্তু আজ সেটি নেই। রুই মাছের দোপেয়াজা দিয়ে একটু খেয়ে উঠল। কিন্তু মন খারাপ  করে বসে আছে। হঠাৎই মনে পড়ল পুটিমাছতো আমাদের পুকুরেই আছে। কিন্তু কি করে ছন্টু ধরবে। যেই ভাবা সেই কাজ, মাথায় বুদ্ধি চলে এলো। কিন্তু ছন্টুর তো নেই। ছন্টু তার পাড়ার ছেলে ফন্টুর কাছ থেকে মাছ ধরার ছিপ নিয়ে আসলো। এরপর সামান্য ময়দা দিয়ে মাছ ধরার টোপ বানালো। তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে এসে বসলো পুকুর পাড়ে। তারপর বরশির মাথায় ময়দা লাগিয়ে পানিতে ছুঁড়ে দিল।

পুটিমাছের দল দেখতে পেলো পানির ভেতর ময়দা ঝুলে আছে। ওদের মধ্যে একটা কৈ মাছ ছিল। চালাক কৈ পুটিমাছদের বললঃ তোমরা এখানেই থাকো। এটা আমাদের জন্য ফাঁদ। যা করার আমিই করবো। এইবলে সে টোপের কাছে এসে আস্তে আস্তে ঠুকিয়ে ময়দা গুলো খেয়ে ফেলল। পানির উপর বরশির ফাঁতা নড়েচড়ে উঠল। ছন্টু বরশী তুলে দেখে টোপ নেই। টোপ লাগিয়ে আবার পানিতে ছুঁড়ে মারে। এভাবেই বেশ কিছু সময় চলে যায়। কিন্তু ছন্টু একটি মাছ ও পায়না। এরপর ছন্টু বুদ্ধি করে বরশীর মাথায় সামান্য তুলা পেচিয়ে তার উপর ময়লা লাগিয়ে পানিতে ছুঁড়ে দিল। এবার কৈ মাছ এসে টোপের ময়দা খেতে লাগলো। একটু পরে তুলা বেরিয়ে পড়লো। কৈ ওটাকে ময়দা ভেবে ঠোকাতে শুরু করল। এক সময় কৈ আটকা পড়ে গেল। এরপর নিজেকে ছাড়াতে যখনি বরশি টেনে নিচ্ছিল। তখনি ছন্টু ছিপ টেনে উপরে উঠালো। ছন্টু দেখলো একি এতো পুটিমাছ নয়, এটা কৈ মাছ। 

কিন্তু ছন্টু তো পুটিমাছ ধরতে এসেছে। এরপর ছন্টু আবার বরশি ফেলে। এবার পুটিমাছ ধরা পড়ে। এভাবেই পরপর বরশি ছুঁড়ে অনেকগুলে পুটিমাছ ধরে ফেললো। 

পাত্রে করে কিছু আনতে দেখে মা বললঃ ছন্টু, ওগুলো কি বাবা।

- মা, এগুলো আমাদের পুকুরের মাছ। বরশি ফেলে ধরেছি।

মা আপ্লূত হয়ে বললঃ খুব ভালো করেছ বাবা। তুমি তো নিজে চেষ্টা করতে শিখেছ। মা আদর করতে থাকে ছন্টুকে। এরপর ছন্টু মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে থাকে।