পোস্টস

ফিকশন

নীল আকাশের সংকেত

৯ নভেম্বর ২০২৪

রিফাত সিদ্দিকী


---

পরিচ্ছেদ ১: প্রভাতের আলো

পৃথিবী তখন ২১৪৭ সাল। উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে পৃথিবী অনেকটা পাল্টে গেছে। কিন্তু প্রকৃতির রহস্যের সমাধান সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এই যুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণ বিজ্ঞানী আদিত্য। তার জীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক, তবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান তার প্রাণের অণুপ্রেরণা।

একদিন সকালে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অদ্ভুত একটি পরিবর্তন দেখা গেল। আদিত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো—নীল রঙের অদ্ভুত আলোর রেখা পৃথিবীকে ঘিরে ধরে আছে। এ আলোর উৎস কোনো গ্রহ বা তারা নয়; বরং এটি ভিন্ন একটি গ্যালাক্সি থেকে এসেছে বলে মনে হচ্ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণাগারে এটি নিয়ে বিশদ গবেষণা শুরু হয়।

পরিচ্ছেদ ২: সংকেত

আদিত্য তখন তার গবেষণাগারে বসে ছিল। হঠাৎ তার কম্পিউটারের স্ক্রিনে এক অদ্ভুত সংকেত ধরা পড়ে। সংকেতটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছিল এবং এটিকে ডিকোড করা যাচ্ছিল না। সংকেতটি ছিল একধরনের ধ্বনি, যা কোনো মানুষ বা যান্ত্রিক প্রযুক্তি থেকে আসে নি। আদিত্য এটিকে বিশ্লেষণ করতে বসলো। দুই দিন নিরলস পরিশ্রম করার পর, অবশেষে সে সংকেতের কিছু অংশ ডিকোড করতে সক্ষম হয়।

সংকেতটির ভেতরে ছিল কিছু ছবি—বিভিন্ন গ্যালাক্সির, নক্ষত্রের, এবং কিছু ভিনগ্রহী জীবনরূপের। এ ধরনের তথ্য পৃথিবীতে আগে কখনো পাওয়া যায় নি। আদিত্য বুঝতে পারলো এটি একটি এলিয়েনদের সংকেত। তবে কেন তারা হঠাৎ পৃথিবীর দিকে বার্তা পাঠাচ্ছে, তা ছিল অজানা।

পরিচ্ছেদ ৩: অনুপ্রবেশ

পরবর্তী কিছু দিন আদিত্য ও তার দল সেই সংকেত নিয়ে কাজ করছিল। এক রাতের বেলা আদিত্য দেখলো, তার ল্যাবের কম্পিউটারের স্ক্রিনে এক রহস্যময় এলিয়েন ফিগার ভেসে উঠেছে। ফিগারটি আসলে একটি হলোগ্রাফিক ছবি ছিল, এবং সেই এলিয়েনের চোখ ছিল নীল, ঠিক পৃথিবীর চারপাশে থাকা নীল আলোর মতো।

“আমাদের পরিচয় জানতে চেয়ো না,” ফিগারটি বলে উঠলো। “আমরা দূর গ্রহের একটি সভ্যতা। আমরা একটি জিনিসের সন্ধানে এসেছি—‘জীবনের শক্তি’। তোমাদের গ্রহের জলবায়ু ও প্রকৃতি আমাদের এই শক্তি অর্জনের উপযোগী। কিন্তু আমাদের আসার উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।”

আদিত্য কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও সাহসী ছিল। সে জিজ্ঞাসা করলো, “কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে হবে?”

ফিগারটি বললো, “আমাদের জন্য একটি পথ তৈরি করতে হবে, যাতে আমরা তোমাদের গ্রহের ওপর আমাদের জৈবিক গবেষণা চালাতে পারি।”

পরিচ্ছেদ ৪: দ্বিধা ও সিদ্ধান্ত

এলিয়েনদের প্রস্তাব আদিত্যকে দ্বিধায় ফেলে দিলো। পৃথিবীর নিরাপত্তা নিয়ে সে চিন্তিত ছিল, তবে একই সাথে এমন বড় আবিষ্কারের সম্ভাবনায় আকৃষ্টও ছিল। বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছিল। কেউ মনে করছিল এটি পৃথিবীর জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, আবার কেউ ভাবছিল এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তারা এলিয়েনদের সাথে একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। চুক্তি অনুযায়ী এলিয়েনরা পৃথিবীতে পরীক্ষার জন্য সাময়িক অবস্থান করবে, তবে কোনভাবেই তারা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদ ৫: সম্মিলিত গবেষণা

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে এলিয়েনদের বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে এসে আদিত্য ও তার দলের সাথে কাজ শুরু করে। তাদের সঙ্গে ছিল বিভিন্ন উন্নত যন্ত্রপাতি, যা পৃথিবীতে এখনো আবিষ্কার হয়নি। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য, মাটির গঠন, এবং বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে লাগলো।

আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এলিয়েনরা পৃথিবীর পানি, বিশেষ করে সাগরের লবণাক্ত পানির প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের মতে, এই লবণাক্ত পানির ভেতরেই সেই "জীবনের শক্তি" রয়েছে, যা তাদের গ্রহের জন্য অপরিহার্য।

পরিচ্ছেদ ৬: সংকট ও আশা

এলিয়েনদের গবেষণার কয়েক সপ্তাহ পর পৃথিবীর সাগরের পানির মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমতে শুরু করে। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আদিত্য সন্দেহ করলো, সম্ভবত এই পরিবর্তন এলিয়েনদের ক্রিয়া-কলাপের ফল। সে বিষয়টি নিয়ে এলিয়েনদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানায়, তারা একটি ভুল অনুমান করেছিল। "জীবনের শক্তি" সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা পৃথিবীর সাগরের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছে।

এই সংবাদ আদিত্যকে ভয় পেয়ে গেলেও, এলিয়েনরা জানালো যে, তারা সমস্যার সমাধান করতে একটি বিকল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তারা পৃথিবীর পানির ক্ষতি মেরামত করতে সক্ষম।

শেষ পরিচ্ছেদ: বিদায়ের আলো

এলিয়েনরা তাদের চুক্তি অনুযায়ী আদিত্যকে আশ্বস্ত করে যে, তাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর ক্ষতি মেরামত করে দেয়া হবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাদের গবেষণার সব তথ্য আদিত্যকে দিয়ে জানায় যে, তারা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। বিদায়ের সময় এলিয়েনরা একটি বার্তা রেখে যায়, “তোমাদের গ্রহে আমাদের প্রয়োজন নেই, কিন্তু তোমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করো। এখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যই তোমাদের সুরক্ষা।”

এবার নীল আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসে, এবং পৃথিবী আবারও স্বাভাবিক হয়। এলিয়েনরা চলে যায়, কিন্তু আদিত্যর কাছে থেকে যায় তাদের দেওয়া কিছু গবেষণা উপকরণ, যা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।


---

গল্পের শেষ।