পোস্টস

গল্প

কষ্ট

১০ নভেম্বর ২০২৪

Mohsin Bai

 

রিয়াজ একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পড়াশোনায় বেশ ভালো হলেও পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে খুব কম বয়স থেকেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তার মা অসুস্থ, আর ছোট বোনের পড়াশোনা চালানোর জন্য তাকে টিউশনি করতে হয়। বাবাকে সে খুব ছোটবেলায় হারিয়েছে, তাই সংসারের সমস্ত ভার তার কাঁধে।

রিয়াজের ইচ্ছা ছিল উচ্চশিক্ষা নিয়ে বড় কিছু করবে, মাকে আর ছোট বোনকে নিয়ে একটি সুন্দর জীবন গড়ে তুলবে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার এই স্বপ্নগুলো যেন বারবার মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। সারাদিন ক্লান্ত শরীরে কাজ করে, রাতে টিউশনি শেষে যখন ঘরে ফেরে, তখন ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। কিন্তু তবু তার মুখে কোনো অভিযোগ নেই।

একদিন টিউশনির পথেই রিয়াজ হঠাৎ দেখে, একটা ছোট মেয়ের হাত ধরে তার মা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখে তীব্র কষ্টের ছাপ, চোখে অশ্রু। রিয়াজ বুঝতে পারে, সংসারে তার নিজের কষ্টের চেয়ে অন্যের কষ্ট বেশি তীব্র।

এরপর থেকে রিয়াজ আর নিজের কষ্টকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। প্রতিদিন নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে পরিবারের জন্য কাজ করতে থাকে। এমনকি নিজের পড়াশোনাও এক পর্যায়ে ছেড়ে দিতে হয়, কারণ তার কাছে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখাই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

একদিন তার মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন রিয়াজ চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত সবকিছুই করে। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। মা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাকে বলেছিল, "বাবা, তোর কষ্ট আমি দেখেছি। আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু তুই হাল ছাড়িস না। তোর স্বপ্ন তুই পূর্ণ করবি।"

মায়ের এই কথাগুলো রিয়াজের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর সে আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়, অনেক পরিশ্রম করে উচ্চশিক্ষা শেষ করে। একসময় ভালো চাকরি পায়, আর তার বোনকেও প্রতিষ্ঠিত করে।

রিয়াজের জীবনের সেই কষ্ট তাকে জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছিল। আজ সে সুখী, কিন্তু তার মায়ের সেই কথাগুলো আজও তার মনে বাজে—কষ্ট কখনোই শেষ হয় না, কিন্তু তা মানুষকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।