Posts

গল্প

"অদৃশ্য বন্ধুর রহস্য"

November 10, 2024

MD ROHAN SHA

114
View

রাত তখন ঠিক ১২টা বাজে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, আর সেই আলো যেন ছড়াচ্ছে গভীর নির্জন বনের ভেতর। বনের এক কোণে পুরোনো এক বাড়ি, চারপাশে ঘন জঙ্গল। বাড়িটা ছিল জনমানবহীন, তবে কয়েক মাস আগে শহর থেকে রায়হান এসে এই বাড়িতে থাকতে শুরু করেছে। সে আসলে শহরের কোলাহল থেকে দূরে এসে একা কিছুদিন থাকতে চেয়েছিল, কারণ তার জীবনে চলছিল নানা জটিলতা আর অবসাদ। এই নির্জন বাড়িটাই তার আশ্রয়স্থল।

কিন্তু আজ রাতটা ছিল একটু অন্যরকম। এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল রায়হানের মনে। বারবার মনে হচ্ছিল কেউ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ খুব কাছে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালো, কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। হঠাৎ করেই দরজায় মৃদু শব্দ হলো। সে ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু সাহস করে দরজা খুলল। দরজা খুলতেই দেখল, সামনে একটা কাগজের টুকরো পড়ে আছে।

কাগজটা হাতে নিয়ে সে দেখল, তাতে লেখা, “তুমি কি আমার বন্ধু হতে চাও? যদি চাও, তাহলে কাল রাত ১২টায় বনের মাঝখানে এসো।”

রায়হানের গা শিরশির করে উঠল। কেউ কি মজা করছে, নাকি এটি সত্যিই একটি রহস্য? সে ঠিক করল, আগামী রাতে সে যাবে এবং দেখবে আসলে কী ঘটছে।

পরদিন রাত ১২টা বাজতেই, রায়হান নিজের সাহসকে সংযত করে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে গেল। পুরো জায়গাটা ছিল অন্ধকারে মোড়া, কেবল পূর্ণিমার আলোয় কিছুটা আলোর রেখা ছড়াচ্ছিল। হঠাৎই রায়হান অনুভব করল, পাশেই যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে চমকে উঠল এবং দেখল, সামনে একজন ছোট্ট ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির মুখে অদ্ভুত এক মিষ্টি হাসি, কিন্তু তার চেহারায় গভীর বিষণ্ণতার ছাপ।

রায়হান জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কে? আমাকে এখানে কেন ডেকেছ?”

ছেলেটি শান্ত কণ্ঠে বলল, “আমার নাম আরিয়ান। বহু বছর আগে আমি এই বাড়িতেই থাকতাম। একদিন আমি হারিয়ে যাই, কেউ আমাকে আর খুঁজে পায়নি। আমার কোনো বন্ধু ছিল না, আর তাই আমি বন্ধু খুঁজছি।”

রায়হান বুঝতে পারল, এই ছোট্ট ছেলেটি আসলে এই পৃথিবীর নয়। তার মনটা কেমন ভারী হয়ে গেল, কিন্তু সে বলল, “আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। কিন্তু তুমি তো আর আমাদের দুনিয়ায় নেই। তুমি কীভাবে এখানে আছো?”

আরিয়ান একটু হাসল এবং বলল, “ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের টানে আমি এখানেই থেকে গেছি। শুধু একটি বন্ধু চেয়েছিলাম, যে আমার সাথে কথা বলবে, আমার কথা শুনবে।”

এরপর রায়হান আরিয়ানকে বলল, “ঠিক আছে, আমি প্রতিদিন রাতে এখানে আসব এবং তোমার সঙ্গে গল্প করব।”

তারপর থেকে, রায়হান প্রতিদিন রাত ১২টায় সেই জায়গায় এসে আরিয়ানের সঙ্গে গল্প করত। একসময় তার নিজের একাকীত্বও কমে আসতে লাগল। তার জীবন যেন পরিবর্তিত হয়ে গেল; বিষণ্ণতা কেটে গিয়ে তার মনে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এলো।

একদিন রাতের শেষ গল্প বলার পর আরিয়ান বলল, “তোমার বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ, রায়হান। এবার আমার যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি শান্তি পেলাম, এবার মুক্তি পেতে চাই।”

রায়হানের মন খারাপ হয়ে গেল, সে আরিয়ানের হাত ধরতে চাইল, কিন্তু তার হাত যেন ধরা দিল না। ধীরে ধীরে আরিয়ান মিলিয়ে গেল রাতের অন্ধকারে, কেবল রেখে গেল এক স্মৃতি আর বন্ধুত্বের মধুর অনুভূতি। রায়হান জানত, সে আর কখনো এই বন্ধুকে দেখতে পাবে না, কিন্তু আরিয়ানের স্মৃতি তাকে সারাজীবন একাকীত্ব থেকে মুক্তি দেবে।


---
 

Comments

    Please login to post comment. Login