Posts

গল্প

নরসিংদীর সেই সুচিত্রা সেন

November 10, 2024

Ibadat

Original Author Nazmun Nahar

157
View

স্বপ্নার সাথে নিরার বন্ধুত্ব বড় আকস্মিক ভাবে হয়েছিল। ওদেও স্কুলে ভিতর সবুজ ঘাসে ভরা একটি বিশাল মাঠ ছিল। ওখানে স্কুলের এসেম্বলী হত। মাঠের চারিদিক ঘিওে ছিল বিশাল স্কুল বিল্ডিং সেই সাথে টানা বারান্দা। নিচ তলা আর দোতলার বারান্দায় টিফিন আওয়াওে থাকত ছাত্রীদেও গুন্জন মুখরিত। নিচ তলায় বারান্দার সাথে চারিদিকে ঘিওে ছিল দুস্তরের ছোট সিড়ি। ওরই একটাতে বসে নিরা অন্য মেয়েদেও খেলা দেখছিল। হঠাৎ ওর সামনে বাদামে ঠোঙা সমেত একটা হাত এগিয়ে এল। নিরা চেয়ে দেখে সেই মেয়েটি। সুচিত্রা সেন নামে যে মেয়েটি  স্কুলে বেশ সুপরিচিত। হ্যা মিথ্যা বলবনা। সুচিত্রা সেনের সাথে ওর অসম্ভব মিল ছিল। পার্থক্য শুধু চিবুকের তিল।স্বপ্নার চিবুকে তিল ছিলনা।মিষ্টি হেসে বলল নাও বাদাম খাও।। নিরা বলল আমিত বাদাম খাই না। স্বপ্না তার হাতটা আবার নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে নিতে বলল . কি নাম তোমার। গোবেচারী নিরা তার নাম বলে প্রশ্ন করল তোমার নাম কি।
আমি স্বপ্না...
এরপর থেকে শুরু হল তাদের একসাথে চলা। তাদের একসাথে দেখ যেত স্কুলের মাঠে । দোতলার বারান্দায়। কিংবা পানি খাওয়ার জায়গায় সেই চাপা কলের পাশে। সবাই তাদের দোপাটি ফুল বলে ডাকত। দোপাটি ফুলের বৈশিস্ট আমার জানা নেই। সে যাই হোক। 
্ওদেও স্কুলের সামনে দিয়ে চলে গেছে নরসিংদি টু ঢাকার বিশার হাই ওয়ে। দুর থেকে পিচ ঢালা পথ টাকে কালো বর্ণ মনে হত। স্বপ্না আর নিারা একটা ক্লাসের বিরতীতে বারান্দার রেলিং এর ফাক দিয়ে দুরে রাস্তার দৃশ্য দেখছিল আর কøাস পারফরমেন্স নিয়ে গল্প করছিল। এমন সময় পরের ক্লাসের আপাকে আসতে দেখে দুজন্ইে ভোদৌড়।
ওই হাইওয়ের দুপাশে জুড়ে ছিল বিশাল বিশাল বৃক্ষ। ভর দুপুরে ্ওসবের ছায়্য়া দাড়িয়ে পথিক কিংবা রিকশাওয়ালাদেরকে অপেক্ষা করতে দেখা যেত। গাছে গাছে অসংখ্য নাম না জানা পাখির বাসা।সারাদিন কিচির মিচির লেগে থাকত।ওরই নিচে। স্কুল পালানো একজোড়া কিশোর কিশোরী দের দেখা যেত। ্ওই সরকারী স্কুলের পাশে একটা বয়জ স্কুল ছিল।শতবর্ষের পুরোনো স্কুল। দুই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদেও মধ্যে নিজ নিজ স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে ছিল প্রচন্ড প্রতিযোগীতা । সে পরীক্ষার ফল হোক অথবা সাংস্কৃতিক খেলা ধুলা হোক। কোন কিছুই বাদ যেত না। ঘটনা একটা গার্লস স্কুলে ঘটেছে তো বাতাসের গতিতে তা বয়েজ স্কুলে পৌছে যেত। একই ব্যাপার বয়জ স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল।এদের স্কুলে বিজ্ঞানের সূর্য স্যার ছিল  তো  ওদের স্কুলে নারান স্যার। এখানে ইংরেজীর মানব স্যার তো ওখানে উপেন্দ্র স্যাার। 
রসায়নের রস বিরস হলেও ভুল একদম সহ্য করতেন না। তাপস বিএসসি বিজ্ঞানের সব বিষয়ে ছিলেন ক্ষুরধার । আহা কি কাল ছিল শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্কেরর। 
সেবার সেই বয়েজ স্কুল আর গার্লস স্কুল এর মাঝে। তাপস বিএসসির প্রিয় ছাত্র মাসুমের কথা চলে আসে। সমস্ত স্কুলে তাকে নিয়ে স্বপ্ন। সে খুব ভাল করবে এসএসসি তে। অথচ প্রিটেস্ট পরীক্ষায় ছেলেটা ভিষন খারাপ করে ফেলল। স্কুলের সকল শিক্ষক মাথায় হাত দিলেন।যাকে নিয়ে এত আশা ভরসা সে প্রথম পজিশন থেকে তৃতীয় পজিশন এ নেমে গেছে। কারন হচ্ছে প্রেম । গার্লস স্কুলেরই এক ছাত্রীর সাথে। সেই গল্পই মেয়েরা জটলা বেধে রসিয়ে রসিয়ে বলে বেড়াচ্ছে।সেদিন স্বপ্নাকে অনেক বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।প্রধান শিক্ষিকা দপ্তরী দিয়ে প্রতি ক্লাসে নোটিস পাঠালেন যে আজ থেকে মেয়েরা টিফিন আওয়ারে দোতলা ও নিচ তলার বারান্দায় দাড়াবে না। যে বলা সেই কাজ । কেউ আর দাড়ায় না।তাহলে কি হবে সব মাছই গু খায় দোষ শুধু কই মাছের হয়।মাসুম ধরা পড়েছে তাই বদনাম তার দোষও তার। ্ওই স্কুলের অন্য ছেলেরা কি কম যায়। বিশেষ কৌশলে ঢিলের সাথে পত্র বেধে দোতলায় ছুড়ে মারত। মাঝে মাঝে যা গিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষীকাদের গায়ে পড়ত। স্বপ্নার মত ওর বোন রতœা তেমন মেধাবী   ছিলনা কিন্তু নিয়মানুবতী ছিল।স্কুল থেকে বাসায় আসতে না আসতে বিকেল গড়াত।রতœা হাত মুখ ধুয়ে চুল বেধে পড়ার টেবিলে বসত।আর স্বপ্না দুষ্টুমি আর খুনশুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকত। মাঝে মাঝে কøাসে খুব ভাল করে ফেললেও বুঝে উঠতে পারত না কিসে কি হল। ্ওর আরেকটা গুন ছিল ভাল গান করতে পারা । এত গুন ¯্রস্টা যাকে দিয়েছে তার কিনা এই পরিনতী!!
আমি যখনকার কথা বলছি তখন ১৯৬৯ সাল । ঢাকায় উত্তাল গন অভ্যথান এ উত্তপ্ত রাজপথ। কালো করে দিপ্ত করা মানুষটা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে বাঙালীদের একত্র করার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে  তিনি  বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে আবির্ভাব হলেন।এমনই এক ঐতিহাসিক সময়ে নিভৃত এক মফস্বল শহরে মানুষ গড়ার কাজে নিবেদিত  তাপস বিএসসি। এখনকার বৈষয়ীক সময়ের মাঝে এমন একজন শিক্ষকের বড়ই দরকার।

মাসুম কে নিয়ে না যতটা গুনজন তাপস বিএসসি কে নিয়ে তার চাইতেও বেশি গুনজন।তিনি নাকি ছাত্রকে স্কুলের এক কক্ষে দরজা ব›ধ করে পিটিয়েছেন। রাতে ছাত্রের একশ তিন-চার ডিগ্রী জ্বর উঠে গেছে। ছাত্রের বাবার এতে কোন অভিযোগ নেই। বরন্চ তাপস বিএসসির হাতে ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়ে বলে গেলেন ”ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত দিয়ে গেলাম আপনার হাতে-পরীক্ষার পর আবার এসে নিয়ে যাব”। 
 

Comments

    Please login to post comment. Login