মানুষের কি কোন কাম-ধান্ধা নাই? এত সময় এরা কিভাবে আড্ডা-গল্প করে কাটাতে পারে? না তা হতেই পারে না। যদি তাই হতো তাহলে আমি এখানে কি করছি? আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আমি একা একটি পার্কে(চাষাঢ়া শহীদ মিনার, নাঃগঞ্জ) বসে আছি। কিন্তু আমি তো জানি, কেন এখানে বসে আছি! একটি মোবাইল কোম্পানীর ব্র্যান্ডিং এর কাজের স্যাম্পল দেখাব, আমার টেকনিশিয়ান আসতে দেরি করছে, আমি আগেই পৌছে গেছি, আর স্যাম্পলগুলো ওর কাছে, তাই তার জন্য অপেক্ষা করছি। তাহলে এখানে(ছবিতে) যারা অবস্থান করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, ফুচকা খাচ্ছেন তাদেরও কোনো না কোনো কাজ আছে নিশ্চই!
কলেজ লাইফে ছোট গল্প, কবিতা লিখতাম, তার কিছু ছাপাও হয়েছিল। ভাবলাম আমার চারপাশে যা দেখছি তা নিয়ে অনুগল্প কল্পনা করা যাক।
যা ভাবা তাই কাজ.....
অনুগল্প- ১ঃ অপেক্ষাঃ
সময় তখনও দুপুরে গড়ায়নি। কলেজ পড়ুয়া এত তরুনী মুখে মাস্ক, মোবাইল হাতে পায়চারী করছে। বারবার মোবাইলটাতে সময় দেখছে। আমি চা পোন করতে করতে খেয়াল করলাম, বড়ই বিরক্তি অনুভব করছে তরুনী। ধরে নিলাম কোনো ছেলে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছে। খানিকবাদে তার মোবাইলে কল এলো। তরুনী হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে পায়চারী করছিল আর রাগত্বঃ স্বরে কথোপকথন করছিল। আমি শিওর হলাম ফোনের ওপাশে ছেলেবন্ধু। আমি চায়ের বিল মিটিয়ে সরে গেলাম।
অনুগল্প-২ঃ ধর্ম ও কর্মঃ
সবে মাত্র যোহরের আযান হলো। আমি পার্কের একটি নীচু প্রাচীরের উপর পা দুলিয়ে বসলাম। আমার সামনে এক ফুচকা বিক্রেতা। পায়জামা-পাঞ্জাবী টুপি পরিহীত পুরোদস্তুর একজন মুসলিম। তার সামনে কোনো কাস্টমারও নাই। কিছুক্ষণ পর দুজন হিজাবী তরুনী বসলো, ফুচকার অর্ডার করলো, তারপর নিজেদের মধ্যে আলাপ- চারিতায় ব্যস্ত হয়ে গেল। দোকানী দ্রুত হাতে তাদের ফুচকা পরিবেশন করলেন। তরুনীরা ফুচকা খেয়ে চলে গেল, দোকানী তার ফুচকা বেচা-কেনা সাময়িক বন্ধ রাখতে গামছা দিয়ে ঢেকে দিলেন। তারপর আমাকে পাশ কাটিয়ে কোথাও যাচেছন, সময় দেখলাম যোহরের নামাজের জামাতের সময় হয়েছে। দোকানী মসজিদে যাচ্ছেন। এরপর দেখলাম অনুগল্প- ১ এ আমার চিন্তাকে মিথ্যা প্রমান করে তরুনীর কোনো ছেলেবন্ধৃ নয় বরং তার সহপাঠি/বান্ধবী এসেছে। বান্ধবীর সাথে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল। আমার ফোনে কল আসায় আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলাম। ফোনে কথা শেষ করে দেখি তরুনী তার বান্ধবীকে নিয়ে আবার পার্কে প্রবেশ করেছে এবং একটি ফুচকার দোকানে বসল।
অনুগল্প- ৩ঃ সেলফীঃ
হাতে হাত রেখে দুই তরুনীর পার্কে প্রবেশ। কোনো সরকারী কলেজের অনার্স পড়ুয়া হবেন, আইডি কার্ডে স্পষ্ট। একজন অনর্গল কথা বলে যাচ্ছেন আর পাশেরজন মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করছেন। কথা বলতে বলতে পুরো চত্বরটি একবার ঘুরে পার্ক থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে জরুরী নির্দেশনা দিয়ে মুখ তুলতেই দেখি লাচ্ছি হাতে আবার তাদের আগমন। একজায়গায় দাড়িয়ে পড়ল, তারপর শুরু......। মোবাইল হাতে দুজনার সেলফী। মিনিটে ১০-১২ টা হবে। আমার নজর সরে গেল অনুগল্প- ২ এর দোকানীর আগমনের দিকে। চারদিকটা দেখে দোকান আবার খুলে বসলেন। আমার ফোনে কাংক্ষিত কল আসল। আমি স্থান ত্যাগ করলাম।