ক.
এর পরে বাদল জাবে বেডরুমে; পিছিটা আগেই অন কইরা আশছে। বাট তার আগে মুনার মাশ্টারের লগে কিছু আলাপ করা দরকার। ড্রয়িং রুমে বইছে ওরা, নিজের রুমেই বইতে চাইছিল মুনা, বাট বাদল আর চম্পা আগেই ঠিক কইরা রাখছিল ডোরোইংরুমের ব্যাপারটা। একটু ড্যাম-শিট করছিল, নেট আওয়ার আধা ঘন্টা বাড়াইয়া দিতেই গোমড়া মুখে হইলেও মুনা কইলো 'ওকে'। বাদল বুঝলো, এন্টিভাইরাছের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল কাম করতেছে ভালোই।
চম্পা, মানে শিরিন বাথরুমে, বের হবে জে কোন সময়ে। শিরিনরে শিরিন ডাকা জাইতেছে না আর; বাদল একদিন শিরিন ডাকতেই মুনার মা আর কামের মাইয়া--দুই জনেই হাজির! তার পর থেকে শিরিন হইয়া গেল চম্পা, কইলো, ভাতার চেঞ্জ করতে পারি না পারি, নামটা পাল্টাবার একটা মওকা পাওয়া গেল! কবে জে আবার নিজের নামের ড্রাইভার আইশা পড়ে, চিন্তায় আছে বাদল।
এনিওয়ে, সেই শিরিন থাকতেই চম্পা এমন, বাথরুমে ঢোকে আর বাইর হয়, কেমনে জে কি করে আল্লা মালুম! দুয়েক জন কলিগের বউ শুনছি বেটার এই ব্যাপারে, বউ বাথরুমে থাকার টাইমে তারা একটু ফুর্তি-ফার্তিও করতে পারে চাইলে।
চম্পা বের হবার আগেই মুনার মাশ্টারের লগে আলাপটা শাইরা ফেলতে হবে বাদলের; পিছিটা ওপেন হইয়া গেছে মনে হয় এতখনে, এছিটাও ছাইড়া আসছে বাদল। এছি যদিও লাগে না এখন, শিত আশি আশি করতেছে। তবু এচি ছাড়ার ফায়দা আছে কিছু, দরজা লাগানোটা তাইলে অড লাগে না আর; নাইলে এই মাগরিবের ওক্তের পরে পরেই দুয়ার দেওয়াটা একটু কেমন কেমন লাগারই কথা। চম্পা অবশ্য অল্টারনেটিভ বুদ্ধিতে চলে; শে দুয়ারে অটো-লকের সিস্টেম বানাইয়া নিছে; তবে না লাগলে দুয়ার খোলাই থাকে, পাল্লার নিচে একটা ঠেকনা দেওয়া থাকে। তাই এছি ছাড়াই ভাল।
ড্রইংরুমে ঢুইকা বাদল কইলো,
--ছরি, ডিস্টাব করি একটু।
মুনা আর ওর মাশ্টার এক লগেই চাইলো বাদলের দিকে। অবাক হইলো বাদল; আরে, মুনা আর ওর মাশ্টারের চেহারায় এতো মিল! পরেই বুঝলো, নাহ্, মিল বেশি নাই; দুইজনেই একটু নাখোশ হইছে, প্রায় শমান; তাই এক রকম লাগতেছিল চেহারা। মুনার মাশ্টার অবশ্য লগে লগেই লুকাইয়া ফেললো তার মন, হাশলো-মোলায়েম, কইলো,
--জি বলেন।
--কি জেন নাম আপনের?
--অপরা।
--হ হ, অপরা। তো কোনটা দিয়া শুরু করলেন? পয়লা দিন না আজকে আপনের?
--হ, আজ পয়লা; বাংলা দিয়াই শুরু করলাম।
--আচ্ছা, গুড। শোনেন অপরা, আপনের পড়ানোটা ম্যাক্সিমাইজ করতে চাই আমি, মানে, একটা ছিস্টেম করছি; আপনে জখন নাই তখনো আপনে পড়াইতেছেন--এমন একটা ছিস্টেম। আই মিন, আপনের এই পড়ানোটারে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানাইয়া ফেলতে চাইছি।
উপরে দেখেন, ছিছি-ক্যাম, টেবিলে আপনাদের দুইজনের কাছাকাছি মাইক্রোফোন লাগানো আছে, টেবিলে জুম করা থাকবে ক্যামেরা, খাতা বা বই পড়ার মতো ক্লিয়ার হবে পিকচার!
অপরার নাখুশি আরো বাড়লো মনে হয়, পাত্তা দিলো না বাদল, হাশা মুখে চাইয়া থাকলো অপরার দিকে। একটু পরেই তারে নাখোশ মনে হইলো না আর, হাশলো অপরাও। কইলো, আমারে একটা কপি দিয়েন, ব্যবশার শম্ভাবনা দেখতেছি :)। আলাপ আর আগাইলো না বাদল।
মুনাকে মনে হইলো, আগাগোড়াই নাখোশ! প্যারেন্টিং জিনিসটা খারাপ না, ভাবলো বাদল। হরদম এনগেজড থাকতে হয়, দখল কইরা রাখে মাইয়া-পোলা, বাট অনেক পাওয়ারফুল লাগে নিজেরে। অপরার কাছে বিদায় নিলো বাদল। কইলো, ঠিক আছে পড়ান, কথা হবে। অপরাও হাশলো আবার।
ডোরোইংরুম থেকে বের হইয়া বাদল দেখলো, টিভির সামনে বশা শিরিন। টিভিতে কি দেখতেছে খেয়াল না কইরা শিরিনকে ডাকলো শে,
--শিরিন।
অর্ধেক মাথা ঘুরাইলো শিরিন, বেখেয়ালে মনে হয়। তারপর মাথা আবার শোজা কইরা বশা থিকা খাড়াইলো, লগে পুরা বডি ঘুরাইয়া চাইলো বাদলের দিকে, কইলো,
--জি, মামা।
--মুনার ম্যাডামরে চা-কফি দাও, লগে বিস্কিট বা মিশ্টি জা আছে দাও।
--পাস্তা বানাইছি মামা, দিমু?
--আচ্ছা দাও।
--জি, দিতেছি।
--আমাদেরো দাও, একটু পরে কফি। না, কফিও এক লগেই দাও, হট পটে দাও। আর দুইটা মগ।
--জি, মামা।
ভিডিও টিউটোরিয়াল জিনিশটা বাদলের পছন্দ। আনারস দিয়া ওয়াইন বানাইছে বাদল, ফোনের ভাংগা টাচিস্ক্রিন বদলাইতে শিখছে নিজে নিজে-- এগুলি ভিডিও টিউটোরিয়ালের দৌলত। চম্পাও ভিডিও টিউটোরিয়ালের ফ্যান। ছোট কইরা 'ভিটি' কয় চম্পা-বাদল। জিন্দেগির বহু ছেক্টরেই হেল্প করতে পারে এই জিনিশ।
বেডরুমে ঢুইকা গেল বাদল; ভাল একটা ওয়েবছাইট পাইছে শে, এইখানে শব ভিটি মাগনা। তারচে বড় ব্যাপার পুরাটা থাকে--ভিটি'র অনেক মাগনা ছাইট থাকলেও পুরাটা কমই পাওয়া যায়, ভিডিও কোয়ালিটিও খারাপ বেশিরভাগ ছাইটে। টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করে না বাদল, রিস্কি; ফাইলগুলা পিসিতে থাইকা যায়, হিস্ট্রি-টেম্প ফাইল থাকে, ভিডিও প্লেয়ারের প্লেলিস্টেও এন্ট্রি থাকে। শবগুলি ক্লিয়ার করায় টাইম লাগে, দুয়েকটা মিসও হইতে পারে। ওদিকে, কেরাইম হিসাবে টরেন্ট-সিডিং ধরা পইড়া যাবার মতোই। তারচে নেট বেরাউজারে 'কিলিন অন এক্সিট' ফিচার অন রাখলেই মামলা খতম, বা ইনকগনিটো মোডে বেরাউজ করা।
খ.
কমোডে বশা চম্পা, তেমন কিছু ভাবার নাই, ভাবতেছেও না। কিছু পিরিপারেশন আছে, শেইটাই জা একটু ভাবা দরকার।
বাদলরে লইয়া মুশকিল হইলো, চম্পার ঘামের ঘেরানে খুব লোভ তার; অফিশ থিকা ফেরার পরে গায়ে জে একটু পানি দেবে, তখনই বাদলের কথা মনে পড়ে। হাত শরে না আর, এইটারেই হয়তো পিরিতি কয়!
বাদল একটু গাবর টাইপ, মিন্সট্রুয়েশনের ব্লাডও শে শমান আগ্রহে টেশ করে! পোবলেমটা চম্পারই। বাদলের দুইটা মুখ থাকলে ভালো হইতো! ঐ একটাই তো মুখ, শেই মুখেই চুমাচুমি করতে হয়।
বাজারে মাইয়াদের কনডম আইছে, চম্পার জন্য এইটা ভালোই হইছে। এস্পেশালি মিন্সট্রুয়েশনের ওয়াক্তে। চম্পার আজকের পিরিপারেশন হিসাবে ফেমিডম পরতে হবে; অনলাইনে কিনে রাখছিল আগেই। দেশের আরেকটা আজব ঘটনা হইলো, কনডম বেচে ফার্মেছিতে, সেই ফার্মেছিগুলা আবার শবই পোলায় ভরা! পোলাগুলাও আবার আজব কিছিমের হাবা। ফেমিডম কিনতে গেলে ফার্মেছির পোলাগুলা এমন এক নজর দেবে জেন বা মাইয়ারা ছেক্স-টেক্স করে না, ওদের মায়েরা শব ভার্জিন! বা ছেক্স-টেক্স করলেও কনডম কেন কিনবে, কেনা লাগলে কিনবে তাগো পোলা পাটনারেরা! আজব! কেন, মাইয়ারা চালায় তেমন ফার্মেছিও দুই চারটা থাকতে পারতো না!
এইগুলাই চম্পার ভাবনার টপিক এখন। কয়দিন আগে চম্পার বাপ মরলো, সেই শক মোটামুটি কাটাইয়া উঠছে। বাপের মরাটা অবশ্য ততো বড়ো শক না চম্পার জন্য, তারচে বড়ো শক মরার ঠিক আগে বাপের বিয়াটা, অমন বুড়া বয়শে পুরা পালাইয়া বিয়া।
বাপের শেবায় এক নার্ছ রাখছিল চম্পা, কয় দিন পরে দেখা গেল সেই নার্ছ পোয়াতি! শেই শব কাহিনি আর ভাবে না চম্পা, আরো কত কি ভাবে না! অনেক আগেই চম্পা বুঝছে, ছহি হিশাব করতে পারলে ভাবনার চাপে কাহিল হইতে হয় না, এমনকি বড়ো বড়ো ইশুও আলগোছে মাফ কইরা দেওন যায়!
চম্পার বাপের বিয়ার কাহিনি আশলেই জটিল। ঘটনার শুরু এক উড়া চিঠি দিয়া। একদিন শকালে দাড়োয়ান একটা চিঠি দিয়া গেল, কুরিয়ারে আশছে নাকি। চিঠি পইড়া তো চম্পা ১৫ মিনিট নড়াচড়া করতেই ভুইলা গেল, চিঠিতে লেখা,
"পিরিয় পড়শি,
ছালাম লইবেন। শরমের কথা, তবু না কইয়া পারতেছি না! আমাদের বাশায় ছোট ছোট পোলা-মাইয়া, বারান্দায় গেলেই চোখে পড়ে আপনাদের বারান্দা। পরশু বারান্দায় যাইয়া দেখি আপনের বাপে বইশা রইছে চেয়ারে। বুড়া মানুশ, ডাইনে বামে চাইলো এক নজর, কিন্তু শামনে চাইতে ভুইলা গেল! বা চোখে ঠিকঠাক দেখেই না হয়তো।
জাই হোক, ডাইনে-বামে একবার চাইয়া আপনের বাপে মাশ্টারবেট করতে শুরু করলো!
পোলা-মাইয়া আশে বারান্দায়, কি জে করি--ভাবলাম একদিন। কইতেও পারি না, শইতেও পারি না! মনে মনে এলাহি ভরশা কইয়া এই চিঠি লিখতেছি, কিছু একটা কইরেন পিলিজ।
ভালো থাকবেন,
আপনাদের এক পড়শি,
খোদা হাফেজ।"
চিঠি পাইয়া বেদিক হইয়া গেল চম্পা। কপাল ভালো ছিল, ২ দিনের ভিতর তাছলিমারে আনলো বাশায়।
তাছলিমা হইলো লুৎফার বোন। চম্পার অফিশের ছুইপার লুৎফা একদিন কইলো,
--আপা, আমার বইনটা ভালো। শামি মরলো কয়েক মাশ আগে, বাচ্চা-কাচ্চা হয় নাই একটাও! বাজা।
--বাজা!
--হ।
--এখন তাইলে কি হালতে আছে? নিজের কামাই আছিল নাকি?
--ভাতারের সেবাই তো চাকরি আফা, ভাতারও নাই, চাকরিও নাই। কামাই কেমনে থাকে!
--হুম, কি করবে তাইলে এখন?
--হেই কারণেই কইতেছিলাম, আপনের বাশায় রাইখা দেন।
--হ, রাখা যায়। আমারও একজন দরকার।
--আপনের বাশা দেইখা রাখতে পারবে।
--হুম। কালকে লগে লইয়া বাশায় আইতে পারবেন?
--অফিশের পরে জামু?
--আশেন, ৭-৮টার দিকে।
বোনরে লইয়া শময় মতোই আইলো লুৎফা। বেডরুমেই ডাকলো চম্পা, শিরিনরে কইলো দুইটা টুল দিতে।
এই ওক্তে ছোট্ট একটা ঘুম দেয় চম্পা, আজকে আর হইলো না। তবু শুইয়াই থাকলো। বাদল গেছে বাজারে, মুনা জে কি করে, খোদা মালুম। পড়ালেখায় তো ঠনাঠন, শারা দিন খালি কম্পিউটার আর ফোনের অ্যাপ না জেন কি বানায় নাকি!
টুল আইনা দুইজনরে বশাইলো শিরিন। চম্পা তখন জিগাইলো,
--বাশায় কলা আছে শিরিন?
--আছে আন্টি। আঙুরও আছে।
মেজাজ একটু খারাপ হইলো চম্পার। চাইপা জাইয়া কইলো,
--আচ্ছা দাও এনাদের। কয়েকটা বিস্কুটও দিও, পরে চা।
--জি আন্টি।
শিরিন ঘর থেকে বাইরাইতেছে, দুই বোন চাইয়া রইছে শিরিনের পিছে। ডাকলো চম্পা, নজর ঘুরাইলো দুই বোন। চম্পা কইলো,
--তো, আপনে হইলেন তাছলিমা, তাই তো? কেমন আছেন?
--আল্লার ইচ্ছায় ভালো এখন।
--কি হইছিলো আপনের শামির?
--কইতে পারি না। ভোরে উইঠা কয়, বুকে ব্যথা। তেল মালিশ করলাম, কমে না। জহুরের ওক্তে ভ্যানে শোয়াইয়া হাশপাতালে লইয়া গেলাম, ডাক্তার নাড়ি দেইখা কয়, ‘নাই’। আল্লায় লইয়া গেছে, ডাক্তার রাখবে কেমনে!
--বুকে ব্যথা হইতো নাকি মাঝে মাঝে?
--বছর তিনেক আগে একবার হইছিল রাইতে। ফজরের ওক্তে কইমা গেছিল।
--বয়শ কত হইছিলো?
--কইতে পারমু না। গন্ডগোলের বছর ৭/৮ আছিলো শুনছি।
চম্পার অনুমান, হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু কইলো না কিছু ঐ ব্যাপারে। জিগাইলো,
-- কি করতেন উনি?
--ভ্যান চালাইতো। ৫ জনের একটা দলে আছিলো, বাশা-বাড়ি আর অফিশের মালামাল টানতো। ঐ জে, এক বাশা ছাইড়া আরেক বাশায় জায় না? ঐ দলের একজনের ভ্যানে কইরাই নিছিলাম হাশপাতালে।
--পরে দাফন করলেন কই?
--দাফন করা হয় নাই। ডাক্তারি পড়ার একটা কলেজে দিয়া দিছি।
--কন কি!
--হ, ডাক্তার শাব কইলো, ‘ডাক্তারির এলেম বাড়াইতে কামে লাগে লাশ, মানুশের উপকার হবে।’
--দিয়া দিলেন?
--ভাইবা দেখলাম, মানুশের উপকার হইলে তো আল্লার বেজার হবার কথা না। লাশ লইয়াই বা কই দাফন করমু! আছমানি ফয়সালা ম্যাডাম।
--হুম।
কামের কথায় যায় চম্পা, তাড়াতাড়ি বিদায় কইরা একটু ঘুমাইতে পারলে ভালো। ঘুম না কইয়া ঝিমানো কওয়া উচিত আশলে! বা ঘুমও হইতে পারে! কফি বনাম পারফর্মেন্স, বাদলের পারফর্মেন্স জেই দিন শিরিনের কফিরে হারাইতে পারে, শেই দিন ঘুম, জেই দিন শিরিন জেতে সেইদিন ঝিম মাইরা শুইয়া থাকা কতখন! তবে পুরা দায় বাদলের উপ্রে দেওয়া ঠিক হবে না, চম্পার মুড আর পারফর্মেন্সের মামলাও এইটা! কোন দিন হয়তো বাদল জান লাগাইয়াই চেশ্টা করে, কিন্তু চম্পাই কেমন দায় সারা গোছে ঠ্যাঙ মেইলা থাকে ছেরেফ! তবে এই ব্যাপারটা শব সময়ই চম্পার মনে মনে, বাইরে চম্পার খোশ মেজাজই দ্যাখে বাদল!
বিয়ার পরে পরেই চম্পা বুঝতে পারছিল, কনজ্যুগাল লাইফ মানে ‘ওয়েলফেয়ার লাইং’! কেবল মুখের মিছা কথা না, পুরা শরিল দিয়াই মিছা কইতে হয়, পিরিতি মানে এইশব মিছা কথা কইতে রাজি হওয়া, হাচা কথা কনজ্যুগাল রিশতায় পেরায়ই খুব নিঠুরিয়া ব্যাপার!
লুৎফারে কয় চম্পা
--শোনেন লুৎফা, শিরিন আছে বাসায়, শব কামই পারে ও, করেও, করবেও। ঘরের এইশব কামে তাছলিমার ভাগ লইতে হবে না।
--কন কি, তাইলে ও আর কি কাম করবে!
--তাছলিমার কাম হইলো, আমার বাপের শেবা করা, আর কিছুই না।
--হ, খালুজানের তো বয়শ হইছে!
--শোনেন লুৎফা, তাছলিমাও মন দিয়া শোনেন।
রুমে তখন ঢুকলো শিরিন, হাতে একটা টেরে। কলা, আঙুর আর বিস্কুট আনছে টেরে ভইরা। টি টেবিলে নামাইয়া রাখলো। পানি? জিগায় চম্পা। দিতেছি, কইয়া ঘোরে শিরিন। চম্পা ডাকে আবার। চা দিয়া জাইও শিরিন। চম্পা ভাবছিল, কফি দেবে কিনা জিগাইবে শিরিন। ধুরন্ধর শিরিন আবারো হারাইয়া দিলো চম্পারে! ছেরেফ কইলো, আচ্ছা। শিরিন বাইরাইতে চম্পা আবার কামের কথায় ফিরলো।
--হ, আব্বার বয়শ হইছে। ও আচ্ছা, খাওয়া শুরু করেন আপনারা, খাইতে খাইতেই আলাপ করি।
লুৎফা কইলো, আপনে লইবেন না কিছু! চম্পা জবাব দেয়, আমি একটু আগে খাইছি, এখন দুয়েকটা আঙুর খাইতেছি। তারপর ফেরত জায় আগের আলাপে।
--যা কইতেছিলাম, আব্বা বুড়া হইছে। কিন্তু একটা কথা কি জানেন, বয়শ মানুশের খায়েশ মারতে পারে না শব শময়!
এইবার কথা কইয়া ওঠে তাছলিমা।
--কত কি বাকি থাইকা জায়, জিন্দেগি আশলে একটা লম্বা খরার মৌশুম!
চম্পা কিছুখন চাইয়া থাকলো তাছলিমার দিকে। এই একটা জিনিশ বহুবার মালুম হইছে চম্পার--মানুশ আসলে ভিতরে খুবই মরমি। মুখে কইলো,
--আব্বা তো একলা পুরা, গত কয় বছর। শরিলের কত ডাক আছে! হয়তো পায়ে ব্যথা, একটু টিপে দিলে আরাম হবে।
কলায় একটা কামড় দিতে জাইয়াও দিলো না লুৎফা, কইলো
--বুড়া মানুশ এমনই আফা, এইগুলাই তো বুড়াদের শেবা।
শিরিন আবার হাজির হইলো তখন, চা লইয়া আশছে। চম্পা চাইয়া আছে শিরিনের দিকে। একবার চম্পার দিকে চাইলো শিরিন। চোখে চোখ পড়লো, চা নামাইয়া রাইখা বাইরাইয়া গেল। চম্পা শুরু করলো আবার, চাইলো তাছলিমার দিকে, তাছলিমার নজর চম্পার দিকেই।
--শোনেন তাছলিমা, আমার আব্বার গার্জেন হবেন আপনে, তার শব দরকার মিটাইবেন। যা কিছু লাগবে, কইবেন আমারে।
--জি আফা।
--আপনের তো বাচ্চা-কাচ্চা হয় নাই, আপনের জন্যই তো? লুৎফা তাই কইতেছিল।
--জি আফা।
--তাইলে তো ঝামেলা নাই আর। আপনেও ভালো থাকবেন, আব্বাও ভালো থাকবে। বেতন-টেতন যতটা পারি দিবো, ব্যাংকে একটা একাউন্ট কইরা লইয়েন, নাকি আছে?
--নাই আফা।
--আচ্ছা, আমি কইরা দিবো নে। আপনের খরচ তো আর নাই কোন, ব্যাংকে জমাইয়া রাইখেন বেতন, বুড়াকালে কামে লাগবে।
কিছু আর কইলো না দুইজনের কেউ। তিনজনেই চুপচাপ কিছুখন। চা খাইতেছে লুৎফা আর তাছলিমা।
চা খতম হইলো একটু পরেই। লুৎফা বিদায় লইলো, তাছলিমা আর চম্পা দুয়ার তক আগাইয়া দিলো লুৎফারে। যাবার আগে তাছলিমারে জড়াইয়া ধরলো লুৎফা, তাছলিমাও। লুৎফা কইলো তাছলিমারে--ভালোই থাকবি তুই, আফা মানুশটা ভালো।
এই বিদায় বেলায় শিরিন আইলো না, চম্পাও ডাকে নাই। মন দিয়া টিভি দেখতেছে, মাঝে মাঝেই হাশির আওয়াজ ফুটতেছে। লুৎফা বিদায় নিতে চম্পা ডাকলো; শিরিন, তাছলিমারে আব্বার রুমে দিয়া আসো। তাছলিমার দিকে নজর দিয়া কইলো, নিজেই নিজের মতো চিন-পরিচয় কইরা লন তাছলিমা।
চম্পার বাপের লগে তাছলিমার চিন-পরিচয় ভালোই হইছিলো; বহু বছর আগে বাংলায় বাইবেল পড়ছিলো চম্পা, তার কিছু লাইন মনে পড়ে চম্পার: আদম হাওয়ার পরিচয় নিলেন, হাবিলের জনম হইলো; আদম আবার হাওয়ার পরিচয় নিলেন, কাবিলের জনম হইলো। কমোডে বইশা চম্পা এখন তার তখনকার ভাবনা ভাবে, তার বাপে তাছলিমার পরিচয় নেবে কিন্তু রুস্তম বা কালু বা কুলছুমেরা হবে না, কেননা, তাছলিমা তো বাজা! কিন্তু দেখা গেলো, তাছলিমার পরিচয় চম্পা তো দুর, তার বোন লুৎফাও ততো পায় নাই আগে! চম্পার বাপে শেই দায়িত্তও লইলো শবার অজান্তেই। তাছলিমার শামিই আশলে বাজা আছিলো, তাছলিমা না, কিন্তু তারা ধইরাই নিছিলো জে, বাজা তো আলবত তাছলিমাই, পোলাদের জদি খাড়ায় আর মাল বাইরাইলে পরে শে আর বাজা হয় কেমনে!
নাহ্, আর ভাবতে চাইলো না চম্পা, ফোনটা হাতেই আছিলো, আনলক কইরা ফেছবুক বেরাউজ করা শুরু করলো। দেশের হালত তো ভালো না, নয়া বাকশালি হুকুমত চলতেছে, ফেছবুকই একমাত্র মিডিয়া এখন, আর কোথাও দেশের শাচ্চা ছুরত বোঝার উপায় নাই, তাই ফেছবুকই ভরশা! ফেছবুকে ঢুইকা মনে হইলো, পোফাইল পিকটা পাল্টানো দরকার, একই পিকে বছর চইলা গেলো পেরায়। কালকে অফিশিয়াল পিকনিকে ঢাকা উদ্দানের পাশে বুড়িগংগায় একটা বজরায় গেছিলো শবাই, চম্পার ভালো কিছু ছবি তুলছে তখন মুনা, ঐগুলার একটা পোফাইল পিকে দিতে ফোনের গ্যালারি ওপেন করলো। কিন্তু গ্যালারিতে ঢুইকা কালকের ছবিগুলা পাইতেছিলো না, এতো পিছে পড়লো কেমনে! এস্ক্রল কইরা পিছে জাইতে জাইতে মনে পড়লো, মুনারে একটা কাম দিছিলো কালকে রাইতে--মুনার নানা-নানির কতগুলা কাগজপত্রের ছবি তোলার, গুগোল ডেরাইভে ডিজিটাল ব্যাকআপ রাখা উচিত মনে হইতেছিলো চম্পার। পিকনিকের পরে ঐ কাগজপত্রের ছবিতেই গ্যালারি এতো ভরা, আর ঐ কারনেই পিকনিকের ছবি এতো পিছে চইলা গেছে!
পিছের দিকে এস্ক্রল করতে করতে দুয়েকটা ছবি ওপেন করলো, দেখলো এক নজর, পরে আরেকটু টাইম লইয়া বেরাউজ করতে হবে, মেমোরি এক আজব জিনিশ, আমরা জে এতো পিরিত-পিরিত করি, মেমোরি নাই তো পিরিতও নাই! বাপের পোরতি পিরিতিটা রিনিউ করা দরকার, বহুত জালাইয়া মরছে বুইড়া!
কিন্তু ঐ দুয়েকটা ছবি ওপেন করতে জাইয়াই একটা ছবিতে চোখ আটকাইয়া গেলো চম্পার, কইলজা লাফাইয়া উঠলো পুরা! হাত-পা কাপা শুরু হইলো, কোনমতে ধুইলো নিজেরে, তারপর বাইর হইলো বাথরুম থিকা।
বিছনায় আধশোয়া হইয়া আছে বাদল, হাশা মুখে চাইয়া রইছে, চোকাচোখি হইলো চম্পার লগে, চম্পার নজরে পুইড়া গেলো বাদলের দাওয়াতি নজর। কোন কথা না বইলা চম্পা হাইটা গেলো দরজার কাছে, পুরাটা খুইলা ফেললো কপাট, চোখা গলায় ডাক দিলো, শিরিন…
মোটামুটি দৌড়াইয়া আইলো শিরিন, চম্পা এইবার খুবই ঠান্ডা গলায় কইলো, কফি-নাশতা নিয়া ডাইনিং টেবিলে রাখো। রুমে ঢুকলো শিরিন, ভ্যাবাচ্যাগা খাওয়া বাদলের শামনে থিকা চাকা লাগানো টি-টেবিলটা ঠেলতে ঠেলতে নিয়া বাইরে গেল শিরিন। তারপর বাদলের দিকে ফিরে চম্পা কইলো, বের হও। বিছনা থিকা নাইমা গেল বাদল, কিছুই না কইয়া বাইরাইয়া গেলো, তার পিছে কপাট লাগাইয়া দিলো চম্পা।
তারপর রেডি হইতে শুরু করলো; ছোট্ট একটা ব্যাগে দুয়েকটা জামাকাপড় ঢুকাইলো, কয়েকটা টেম্পুন ঢুকাইলো, পার্ছে টাকাপয়শা-কার্ড চেক করলো। ফোনের চার্জারও ঢুকাইলো ব্যাগে, ল্যাপটপটাও অফিশের ব্যাগ থিকা নিয়া ঐ ব্যাগে ঢুকাইলো।
দরজা খুইলা বের হইলো চম্পা, ব্যাগ দুইটা লইয়া ডোরোইং রুমে ঢুকলো, দেখলো, মুনারে পড়াইতেছে অপরা; চম্পার দিকে দুইজনেই চাইলো, চম্পা কইলো, গলা একটু চড়াইয়া–মুনা, ২/৩ দিন থাকবো না আমি, একটা কামে ঢাকার বাইরে জাইতেছি; বড়ো হইছো তুমি এখন, নিজেরটা তো দেখবাই, আর শব দিকেও খেয়াল রাইখো। তারপর কাউকে কিছু কইবার মওকা না দিয়া দুয়ার খুইলা বাইরাইয়া গেল। দুয়ারের পাশেই একটা পেরেকে চম্পার চাবির গোছাটা ঝুলানো ছিলো, ছো মাইরা ঐটা নিলো নিজেরে বাইর করার ঠিক আগে। ডোর লকে চাপ দিয়া বাইরাইয়াই ঠাশ কইরা লাগাইয়া দিলো কপাট।
গ.
হাকিম খা’র মনের শিরিন চম্পা হইতে পারে নাই। হাকিম খা মানে চম্পার, মানে শিরিনের বাপ। গরুর গোশত তার পছন্দ, গত ৫ বছর উনি গরু খাওয়া বাড়াইয়া দিছেন। শিরিনের মা মইরা গেল ৫ বছর আগে, হাকিম খা তখন ৬৪।
বেশি বেশি গরু খাইয়া ঝামেলা বাড়ছে আরো। শিরিনের মা, মানে শোনালতা বাইচা থাকতে হাকিম খা হায়াত বাড়াইতে চাইতেন; তাই গোশত কমাইছিলেন। গত ৫ বছরে ডাক্তারদের উপর ভরশা পুরাই গেছে; ৫ বছর ধইরা এতো এতো গরু খাইয়া কোনই লাভ হইলো না! ফট কইরা মরে তো নাই-ই, উল্টা নিজেরে আরো তাগড়া লাগতেছে! হাকিম খা ভাবছিলো, বেশি বেশি গরু খাইলে পেরেশার বাড়বে, হাটফেল কইরা বিছনায় পইড়া থাকবে, কোন একদিন শকালে শিরিন রুমে ঢুইকা দেখবে, হাকিম খা ঘুমাইয়া রইছে বিছনায়, শিরিনের মালুমই হয় নাই, অফিশে দৌড়াইছে, শন্ধায় আইশা দেখবে হাকিম খার মুখে ভন ভন করতেছে মাছি!
কিন্তু না; হাকিম খা মরে না, গোশতের তেজে উল্টা জৌবনের জোয়ার উঠছে জেন গতরে! আরো মুশকিল হইলো, নিজেরে এখন পাপি পাপি লাগে হাকিম খার!
শিরিনের মা শোনালতার বয়শ আছিল হাকিম খার কাছাকাছিই; শমাজের ভাবাভাবি হিশাবে লইয়া শোনালতা ভাবছিল, তার গতরে আর তুফান উঠবে না বেশিদিন, তাতে হাকিম খার উপাশ থাকতে হবে! শোনালতা তাই একটা চাইনিজ পুতুল কিনছিলো হাকিম খার জন্য, শেই পুতুলের মন না থাকলেও গায়ে জখন-তখন বিজলির তুফান উঠানো জায়, হাকিম খার বুড়া কালের হাউশ মিটাইতে পারবে চাইনিজ পুতুল!
কিন্তু ঘটনা দেখা গেল উল্টা পুরাই! হায়াত বাড়াইতে হাকিম খা খাওয়া কমাইলো, শরিল মোটামুটি ঝিমাইয়া থাকতো; হাকিম খা পুতুলে হাউশ মিটাইতে জাবে তো দুর, শোনালতা ঘন্টাখানেক হাকিম খার গতর হাতাইয়াও শরিল জাগাইতে পারতো না! পরে লম্বা একটা দম ছাইড়া ঘুমাইয়া জাইতো! হাকিম খার গতরে এখন জোয়ার ওঠে রেগুলার, আর নিজেরে পাপি পাপি লাগে! আহা, হায়াতের লোভ না কইরা জদি আরেকটু খাইতো তখন--রেগুলার দুইটা ডিম, একটু গোশত..., অতোটা না মেটা হাউশ লইয়া হয়তো মরতে হইতো না শোনালতার!
শোনালতা মরার কিছুদিন পরে হাকিম খা এমন খাওয়া শুরু করছিলেন; শিরিন মানা করে কিন্তু শোনে না তার বাপ। তার ফল হইলো এই, গত ৪ বছর ধইরা মাঝে মাঝেই গতরে নিদারুন জালা ওঠে, বেশামাল হইয়া পড়েন হাকিম খা! কখনো বাথরুমে, কখনো বারান্দায় লুকাইয়া কাম শারেন--কইতেও পারেন না, শইতেও পারেন না।
পয়লা কিছুদিন শোনালতার দেওয়া পুতুল লইয়া হাকিম খা আরামেই আছিলেন। কিন্তু মাশ ৬ অমন চলার পরেই এমন এক ঘটনা ঘটলো! শোনালতার পুতুল হাকিম খা তার দোস্ত মোতালেব মিরধা'রে দিয়া দিলেন! শেই দুখ এখনো কামড়ায়, কিন্তু ঘটনাটা আর মনে করতে চায় না হাকিম খা, মেজাজ বিগড়াইয়া জায়।
শোনালতা মরার আগে হাকিম খা পেলান করছিলো একটা, বউ-মাইয়ার লগে আলাপও করছিলো, রাজি হয় নাই ওনারা। হাকিম খা চাইতেছিলো, ভালো একটা ওল্ড হোমে উইঠা জায় দুইজন, আরো আরো বুড়াবুড়ি থাকবে, মৌজ-মাস্তিতে কাটাইয়া দিতে পারবে জিন্দেগির আখেরি কয়টা বছর! কিন্তু পারলো না হাকিম খা, শোনালতা নাতির কাছে থাকতে চায়, মাইয়াও চাইলো-- বাপ-মা তার কাছেই থাক; বাপ-মারে ওল্ডহোমে দিলে শমাজে নাকি মুখ দেখানো মুশকিল হয়, আর মুনাও দুইজন শখাশখি পাইতে পারে তারা থাকলে! হাকিম খা একটু নাখোশ এই বেপারে; শিরিন এই জামানায় আইশাও শমাজের মাথা ঘামানিরে এতো পাত্তা দেয়! শমাজের মাথা ঘামানিরে পাত্তা কখনো বা দেবার দরকার আছে আশলেই, কিন্তু এইটা তো শমাজও না, কতগুলা ফালতু লোক, চোর-বাটপার-ঘুশখোর-ডাকাত, ২ নম্বরি পয়শা কামাইছে দেদার, এখন বইশা খায়, ভাড়াটিয়াদের উপর খবরদারি করে আর গিবত গাইয়া বেড়ায়! কতগুলা আছে ভাতারের ২ নম্বরি পয়শায় বান্দি রাখছে ৩টা, নিজের হাতে লাগড় পায় না পুটকি, শোচাইয়া দিতেও বান্দিরে বোলায়, ছিরিয়াল দেখতে দেখতে গা টিপায় বান্দিরে দিয়া। নিজে আকামে বিজি থাকে, লাগলে বান্দিরে ঠেইলা পাঠায় ভাতারের বিছানায়। লগে হুকুম দিয়া দেয় বান্দিরে, মুখে চুমা দিবি না কইলাম! তার বাইরে শমাজে জারা শাচ্চাই কাম কইরা খায়, তাগো অতো টাইম নাই মাথা ঘামানির; লাগানির টাইমই তো পায় না ঠিকঠাক! আমজনতার লগে কোন কানেকশন না থাকলে এমনই হবার কথা, ছেরেফ শয়তানের লগে ওঠাবশা করলে শয়তানের ভাবনাগুলারেই মনে হয় শমাজের ভাবাভাবি।
আজকে দুপুরেও গোশত খাইছে হাকিম খা, খাইয়া ঘুমাইলো কতখন, একটু আগে শন্ধা হইলো, কিন্তু বিছনাতেই শুইয়া টিভি দেখতেছে এখনো, বারান্দায় জাবে কিনা ভাবতেছে। ঘুম ভাংছে বিকালেই, কিন্তু বিকালে তেমন জায় না আর বারান্দায়। বারান্দার শামনেই ফাকা, নিচে রাস্তা, কিন্তু ঐ পাড়েই আরেকটা বিল্ডিং, হাকিম খার বারান্দা বরাবরই ঐ পাশে আরেকটা বারান্দা, ঐখানে মানুশজনের আগাগোনা আছে। ডানে বামে আরো কয়েকটা বারান্দা, উপরেও; শামনের ফেলাটটা মনে হয় কিছুদিন ফাকা আছিলো, গত মাশে লোক উঠছে। বেশ কিছুদিন ততো খেয়ালই করে নাই, কিন্তু গত কয়েকদিনে বুঝছে জে, হাকিম খার বারান্দা চোখে পড়ে অনেকগুলা ফেলাটের বারান্দা থিকাই! তাই ইদানিং রাইতের আন্ধারের ওয়েট করে। আন্ধার জিনিশটা মজার; কতগুলা ব্যাপার আছে জেইগুলা মানুশেরা এমনিতে জানলে শরমায় না, কিন্তু দেখলে শরমায়; হাকিম খা খেয়াল করছে জে, ছেরেফ আরেকজনের কোন ব্যাপার না, মানুশ নিজের আকামগুলাও আন্ধারে করতে আরাম পায়, নিজে জানে জে করতেছে, নিজেই তো করতেছে, কিন্তু আন্ধারের কারনে জে নিজের আকামই নিজেও দেখতেছে না, তাতে আরাম লাগে, শরম পাবার কারন কমাইয়া দেয় আন্ধার! লাইট মানুশকে অতিরিক্ত দেখায়, বেহুদা জিনিশ দেখায় পেরায়ই!
আন্ধার ভালো লাগে হাকিম খার, আন্ধার বারান্দা আরো ভালো! কিন্তু জাই জাই কইরাও উঠতেছে না হাকিম খা, বাশায় কারা জেন আশছে, তাগো বাইরাইয়া জাবার ওয়েট করতেছে হাকিম খা, আরেক ঘরে বইলা একটু খাড়া কইরাই রাখতে হইতেছে কান!
কতখন পরেই হাকিম খার মালুম হইলো দুয়ার খোলার শব্দ, কেউ বিদায় লইয়া গেলো, পরে দুয়ার আটকাইয়া দিলো শিরিন। তাই উঠবে উঠবে একটা ভাব আইলো হাকিম খার মনে। কিন্তু শন কনারির একটা বন্ড ছিনামা চলতেছে টিভিতে, ঐটাও দেখতেছে, তাই আর উঠলো না তখনি।
ছিনামা দেখায় তবু ডিস্টাব হইলো ঠিকই! অচেনা এক মাইয়া ঢুকছে হাকিম খার রুমে, বেডছুইচ টিপে লাইট জালাইলো শে, মাইয়ার হাতে একটা টেরে দেখলো এক নজর, তারপরেই হাকিম খার নজর চইলা গেলো মাইয়ার মুখে। চেহারা মনে হইলো ভালো, অচেনা শকল মাইয়ারেই ইদানিং মোটামুটি ভালো লাগে হাকিম খার! এই মাইয়ারেও হয়তো শেই কারনেই ভালো লাগলো।
তাছলিমা ঢুইকা একটা ছালাম দিলো, তারপর টি-টেবিলে নামাইয়া রাখলো টেরে। হাকিম খা জবাব দিলো ছালামের, তারপর টেরেতে দেখলো একটা চায়ের কাপ পিরিচ দিয়া ঢাকা, পাশে আরেকটা পিরিচে মনে হইলো কেক কোন, লগে কিছু ফলও দেখলো।
টেরে রাইখা তাছলিমা খাড়াইয়া রইলো, জাইতেছে না, একটু আনইজি লাগলো হাকিম খার, আগেই উইঠা বশছে বিছনাতেই, তাছলিমার মুখের দিকে চোখ তুইলা চাইলো আবার, জিগাইলো–কিছু কইবা?
তাছলিমা কইলো–জি। আমার নাম তাছলিমা, আফায় আপনারে 'নানা' ডাকতে কইছে। আর এখন থিকা আমি আপনের বান্ধা গোলাম, আপনের শেবা করতে কইছে আফায়।
হাকিম খা কইয়া উঠলো, কও কি! এমন কি শেবা লাগে আমার, শবই তো পারি আমি! আচ্ছা, ঐ টুলটায় বশো।
টিভি বরাবর একটা টুল হাতের ইশারায় দেখাইছে হাকিম খা, তাছলিমা ঐটাতে বশলো। হাকিম খা আবার কইলো--এইটা বন্ড ছিনামা, জেমস বন্ড। দেখতে থাকো বইশা, কথা কইবা না! তারপর হাত বাড়াইয়া ফলের পিরিচটা নিতে গেলো, তাছলিমা লাফ দিয়া খাড়াইয়া তাড়াতাড়ি পিরিচটা হাকিম খার হাতে তুইলা দিতে নিয়াও দিলো না; পিরিচটা আবার টেরেতে রাইখা পুরা টেরেটাই হাকিম খার শামনে বিছনায় রাখলো। ভ্যানিলা কেকের ঘেরান ঢুকলো হাকিম খার নাকে, ভ্যানিলা ঘেরানের গা ঘেশা আরেকটা ঘেরানও পাইলো হাকিম খা, শোনালতার ঘেরান মনে হইলো, একটু কাইপা উঠলো হাকিম খা! নাহ্, তাছলিমার ঘেরান, হাতে কাচের চুড়িও আছে, টুং টাং শব্দ হইলো চুড়িতে। হাকিম খা কইলো, হাত নাড়াইও না আর!
দুয়েকটা আংগুর মুখে দিলো হাকিম খা, টিভির দিকে চাইয়া রইছে আর আংগুর চাবাইতেছে। কিন্তু ২/৩ মিনিটেই তার নজর ঘোলা হইয়া গেল, শন কনারিরে মনে হইলো একটা রামপাঠা, মাঠের ঘাশে কোনই নজর নাই, নাশা ফুলাইয়া ফুলাইয়া দম ছাড়তেছে আর এদিক ওদিক চাইয়া কি জেন খুজতেছে!
হাকিম খা কইয়া উঠলো, নাহ্, ভাল্লাগতেছে না; এই, আর কিছু দেখবা তুমি? তাছলিমার দিকে রিমোট আগাইয়া দিতে দিতে কইলো, আচ্ছা, কি জেন নাম কইলা তোমার?
জবাব আশলো মোলায়েম শুরে--তাছলিমা।
হাকিম খা কইলো, আমি একটু বশবো বারান্দায়, তুমি টিভি দেখো, আর বারান্দায় একটা মশার কয়েল জালাইয়া দিতে পারো। তারপর বিছনা ছাইড়া বারান্দার দিকে রওনা হইলো হাকিম খা।
বারান্দায় জাইয়া আন্ধারে হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া দোলনা চেয়ারটায় বশলো হাকিম খা, নজর এখনো ঘোলা, শামনের বারান্দায় আবছা আলো, ভিতরের রুমে লাইট জলতেছে, পর্দাটা ঠেকাইতে পারে নাই পুরা আলো। হালকা বাতাশ, নিচের রাস্তায় কোন একটা গাড়ি হর্ন দিতেছে বড়ো বড়ো; পার্কিং-এ ঢুকবে মনে হয়, গেট হয়তো আটকানো, দাড়োয়ান কই গেলো!
একটু পরেই পর্দা শরাইয়া তাছলিমা ঢুকলো বারান্দায়। একটু খাড়াইয়া আন্ধারে চোখ শওয়াইয়া নিলো। বারান্দার আরেক মাথায় দোলনা চেয়ারে বইশা আছে হাকিম খা। তাছলিমা ওদিকে আগাইতে আগাইতে কইলো--নানা, এই জে মলমের মতো একটা জিনিশ পাইলাম, টিউবের গায়ে মশার ছবি আকা, এইটা কি মশার মলম? কয়েলে নাক-চোখ জলে, এইটা মশার মলম হইলে লাগাইয়া দিতেছি গায়ে।
হাকিম খা কি জেন কইতে চাইলো, কিন্তু আওয়াজ বাইরাইলো না ঠিক, গলাখাকাড়ি দিয়া ছাফ করলো গলা, তারপর কইলো, হ, মশার মলমই। তারপর কইলো, আমি নিজেই তো পারি, তুমি লাগাইবা কেন!
তাছলিমা কইলো, আমিই লাগাইয়া দিতেছি, আপনের ভাল্লাগবে দেইখেন। কিছু কইলো না হাকিম খা, তাছলিমাও জবাবের জন্ন খাড়াইয়া না থাইকা আগাইয়া গেলো হাকিম খার দিকে, পায়ের কাছে বশলো। তারপর মলম বাইর কইরা দুই হাতে ১/২ বার ঘশা দিয়া হাকিম খার পায়ে আলতো কইরা মলম লাগাইতে থাকলো। হাকিম খা শুরুতে একটু কাইপা উঠলো, তারপর পেরায় ফিশফিশ কইরা কইলো, তোমার হাতে পায়েও দিয়া লও।
লুংগি আর গেন্জি পইরা আছে হাকিম খা, হাটু থিকা নিচের দিকে, দুই পায়ের পুরাটাতেই মলম মাখাইখা দিলো তাছলিমা। তারপর আন্ধারে পুরা বোঝে নাই হাকিম খা, শে ছেরেফ বিরতিটাই বুঝলো। তাছলিমা নিজের পা বাইর কইরা হাত দুইটা মুছলো পায়ে! তারপর আরেকটু মলম লইয়া নিজের দুই হাতেও দিলো। তারপর আবার মলম লইয়া হাকিম খার হাত ধরলো। হাতের কনুইয়ের উপরেও দিলো, তারপর খাড়াইয়া পিছে গেল হাকিম খার। মলম লইয়া ঘাড়ে দিতে থাকলো মলম, হাতটা ঘশতে ঘশতেই বুকের উপরের দিকেও নিলো, হাফ হাতা গেন্জি পরা হাকিম খার বুকের উপরের দিকটাও খোলা। হাকিম খা চুপচাপ বইশা রইলো, পুরা চুপ না, ঘন ঘন দম লওয়া আর ছাড়ার শব্দ পাইতেছে তাছলিমা। তারপর হঠাৎ কথা কইয়া উঠলো হাকিম খা, আস্তে আস্তে কইলো, তোমার মাইয়াপোলা কই, শামি? ডান কানের উপরের দিক থিকা জবাব আইলো, শামি মরছে কয় মাশ আগে, পোলামাইয়া তো নাই, বিয়ার ৭ বছরেও হয় নাই, ডাক্তারের ওশুধ, হুজুরের পানি পড়া খাইলাম কতো, কাম হয় নাই কিছুতে!
হাকিম খা কইয়া উঠলো, আহা! তারপর আবার চুপ দুইজনেই। হাকিম খার মনে হইলো, মলম লাগানো হইয়া গেছে, কিন্তু তাছলিমা থামে নাই, ঘাড়ে, মাথায় হাত বুলাইতেছে আস্তে আস্তে, মাথার তালুতে তাছলিমার নাক দিয়া ছাড়া হাওয়া টের পাইতেছে হাকিম খা, নিজের নাক দিয়াও গরম বাতাশ বাইর হইতেছে মনে হইলো। হঠাৎ আবার শন কনারির কথা মনে পড়লো, টের পাইলো বারান্দা থিকাই, টিভিটা চলতেছে; নিজেরে শন কনারির মতো একটা রামপাঠা মনে হইতে থাকলো হাকিম খার। আস্তে কইরা কইলো, মলমের ঐখানেই দেখো, আতরের শিশি আছে একটা… এতো আস্তে কইলো জে বুঝতে পারলো না তাছলিমা, ঝুকে হাকিম খার মুখ বরাবর নিয়া আশলো তার কান, হাকিম খা আবার কইলো--আতরের শিশি… আছে ঐখানেই, লইয়া আশো!
ঘ.
মোহাম্মদপুর শিয়া মশজিদের পিছে, নুরজাহান রোডের একটা বাশার দুয়ারে খাড়াইয়া আছে চম্পা। কলিং বেলের ছুইচটা চাপলো, কিন্তু কোন আওয়াজ হইছে বইলা মনে হইলো না; খটখট করবে কিনা কপাটে, ভাবতে ভাবতেই দুয়ার খুললো নিপুন আরেং!
বাদলের জানি দোস্ত এই নিপুন আরেং। নিপুন হাগিদক আশলে। মান্দি। গারো পাহাড়ের নামে গারো হিশাবেও চেনে বাংগালিরা; নাকি ওনাদের গারো নাম দেবার পরেই ঐটারে গারো পাহাড় কয়! এগুলা ঠিকঠাক জানার উপায় নাই। এই মান্দিরা মায়ের পদবি ইউজ করে এমনিতে, বিয়ার পরে পোলারা বউয়ের বাড়ি চইলা জায়, শশুরবাড়িতে শংশার পাতে, ঐ শংসারের হাল ধরে জাইয়া। এই নিপুনের মায়ের পদবি হাগিদক, বাপের আরেং; বাংগালির আশেপাশে থাকতে থাকতে মায়ের পদবি ছাইড়া বাপের পদবি লইয়া নিপুন আরেং হইয়া গেছে এই পোলা।
নিপুনকে মোটেই আনইজি লাগলো না, একটু অবাক হবার ভাবও নাই চেহারায়, খুব নর্মাল গলায় জিগাইলো, কেমন আছেন ভাবি? আশেন। আগে কখনোই একা আশে নাই চম্পা, বাদল বা বাদল-মুনা-চম্পা, ৩ জনে আশছে, চম্পারই বরং একটু আনইজি লাগলো। কিন্তু ঢুকে পড়লো, ঢুকতে ঢুকতে কইলো, ভালোই তো!
ঢুকতেই একটু বড়ো একটা রুম, এক পাশে একটা ডিভান আর ২টা ছিংগেল ছোফা, আরেকদিকে একটা ৩ চেয়ারঅলা ৩ কোনা ডাইনিং টেবিল। চম্পারে ডিভান ছাইড়া দিয়া নিজে একটা ছোফায় বশলো নিপুন। তারপর নিজেই কইলো, কলিং বেল নশ্টো, কিন্তু কয়দিন আগে ক্যামেরা লাগাইছি দুয়ারে, টেস্ট করতেছিলাম এখন, তখনি আপনি আশলেন, তাই দেখতেছিলাম আমি ক্যামেরায়। কিন্তু আশার আগে ফোন দিতেন! আর বাদল কি নিচে কোথাও থামলো, একটু পরে আশবে নাকি?
চম্পা কইলো, নাহ্, একলাই আশছি। আপনে রেডি হন, একটা ব্যাগে দুয়েকটা টেরাউজার, গামছা লন, লাগলে লুংগিও লইতে পারেন, ফোনের চার্জার; পাওয়ার ব্যাংক আছে আপনার? থাকলে লইয়া লন। আমার লগে ঢাকার বাইরে জাইতে হবে একটু, ২/৩ দিনের মামলা। জরুরি কাম আছে।
চাইয়া রইলো নিপুন, কইলো না কিছুই, হাতের ফোনটার ইস্ক্রিনে চাইলো, ফোনটা আনলক হইয়া গেল। চম্পা তখনই কইয়া উঠলো, বাদলরে কিছু কইতে পারবেন না এখন, পিলিজ। ঠিক তখনই ফোনটা কাপা শুরু করলো, ইস্ক্রিনে বাদলের নাম উঠলো, চম্পার চোখে নজর রাইখাই রিছিভ করলো নিপুন, কইলো, হ্যালো। কিছুখন থাইমা থাকার পরে আবার কইলো, নারে দোস্ত, একটু বিজি, এখন জাইতে পারবো না! দেখি, ফিরি হইলে কল দিবো নে তোরে। তারপর রাইখা দিলো ফোন।
তারপর চম্পার দিকে চাইয়া রইলো, চম্পাও; কেউই কিছু কইলো না, একটু পরে নিপুন উইঠা পাশের আরেকটা রুমে ঢুইকা গেল।
চম্পা ফোনে উবার ওপেন কইরা গাবতলির রাইড নিলো একটা; গাড়ি। কিছুখন চাইয়া থাকলো ফোনে, কোন কল আশলো না, বাট গাড়িটা আগানো শুরু করলো নুরজাহান রোডের দিকে, জাপান গার্ডেন ছিটির পিছনে, মনে হইলো, শেখেরটেকে আছিলো গাড়িটা, ১৫ মিনিট লাগবে দেখাইতেছে, শিয়া মশজিদের চৌরাস্তায় বেশ জ্যাম মনে হইতেছে।
মিনিট দশেক পরেই বের হইলো নিপুন, তারে দেইখাই চম্পাও খাড়াইলো, তারপর কোন কথা না বইলা দরজার দিকে আগাইলো, বের হইয়া খাড়াইলো, নিপুনও বের হইয়া দুয়ারে তালা লাগাইয়া দিলো। শিড়ি দিয়া নামতে হবে, ৬ তলায় নিপুনের বাশা, চিলেকোঠাই আশলে, তাই বেশ গরমও। উঠতে উঠতে হাপাইয়া জাইতে হয়, তবে নামতে ততো কশ্টো নাই।
গাড়ি চইলা আশছে, দুইজনে উইঠা বশলো। পাশাপাশি বইশা নিপুন চাইলো চম্পার দিকে, চম্পা এক কথায় কইলো, গাবতলি। বাসে বরিশাল জাইতেছি আমরা, বরিশালের পাশে ঝালকাঠি জাবো। ঝালকাঠি আমার বাপের বাড়ি। কালকে শন্ধায় আবার রওনা দিতে পারবো আশা করি; কি কামে জাইতেছি, শেইটা জাইয়া বুঝবেন।
নিপুন একলাই থাকে ঢাকায়, ফলে অতো এনগেজমেন্ট নাই; কিন্তু নিপুন একজন ডাক্তার আবার, ডার্মাটোলজিস্ট, ঐটাই একটু ঝামেলা, একটা ডায়াগনস্টিক ছেন্টারে বশে, রুগি থাকে কিছু, এখন ইমার্জেন্সি ছুটি নিতে হইলো, ৩ দিন থাকবে না বইলা মেছেজ পাঠাইয়া দিছে চম্পার লগে বের হবার আগেই।
নিপুন একলা থাকে কিন্তু তার আশলে বউ আছে একজন; শেই বউ আবার আরেকজনের বউও! মানে বেশ কয়েক বছর আগে নিপুনের বউ ইনডিয়া গেলো কুটুমের বাড়িতে বেড়াইতে, মেঘালয়ে, হালুয়াঘাটের ওপারেই। আর ফেরে নাই, ঐখানেই আরেকজনকে বিয়া করছে বইলা শুনছে নিপুন, নিপুনরে তালাকও দেয় নাই বউ, নিপুনও খবর লইতে মেঘালয়ে জায় নাই। খিরিস্টান হিশাবে তালাক ছাড়াই নিপুন আরেকটা বিয়াও করতে পারতো না, তবে চেশ্টাও করে নাই, তেমন কেউ নাই-ও, থাকলে হয়তো নিজেই তালাকের ছিস্টেম কইরা ফেলতো।
গাবতলি সাকুরার কাউন্টারে গাড়ি থামাইলো চম্পা, দুইটা টিকেট কাটলো, আধাঘন্টা পরে ছাড়বে, শাড়ে দশটায়। পাশেই দোকান আছে, চম্পা কইলো, চলেন কফি খাই আর আরিচা ফেরিতে ভাত খাবো আমরা। কফি খাইয়া গাড়িতে বশলো তারা, পাশাপাশি ছিট, জানলার পাশে বশলো চম্পা, তেমন কোন কথা কইলো না কেউই, কিছুখন নিজেদের ফোন গুতাগুতি কইরা দুই জনেই ঝিমাইতে থাকলো।
কিন্তু বেশিখন ঝিমাইতে পারলো না, ধামরাই পার হবার পর থিকা একদম বরিশাল তক খাড়াইয়া থাকলো নিপুন, তার ছিটে ৭/৮ বছরের এক মাইয়ারে বশাইয়া। কাহিনি হইলো, ঐ মাইয়ার বাপ একটা ছিটেই মাইয়া লইয়া বরিশাল জাইতেছে, চম্পাদের ২ শারি পিছেই ছিট, ধামরাই পার হইতেই মাইয়ার বাপ বমি কইরা ভিজাইয়া ফেললো পাশের লোকটার ছিট আর লোকটারেও! গাড়ির ছুপারভাইজার আগেই পলিথিন দিছিলো, কিন্তু বমি আইতেই পুরা হুশ-গেয়ান হারাইয়া ফেললো লোকটা, বা মাইয়ারে বাচাইতে জাইয়া টাইম পাইলো না, গল গল কইরা পাশের ছিটে ঢাইলা দিলো! তারপর কি আর করা, দুইজনেই ছাফ-ছুতরো হবার পরে পাশের লোকটারে নিজের ছিট ছাড়লো মাইয়ার বাপ, নিজে বশলো নিজেরই বমিতে ভেজা ছিটে, এইবার পলিথিন একদম হাতে, খোলা। কিন্তু মাইয়ারে কি করবে? লোকটা বেশ কাহিলও হইয়া পড়লো, গাড়িতে পুরা এক হুলাহুলি! নিপুন তখন মাইয়ারে আইনা নিজের ছিটে বশাইয়া দিলো, আর নিজে খাড়াইয়া থাকলো! মাইয়ার বাপ, বাছের আরো লোকেরা মাইয়ারে কোলে লইয়া বশতে কইলো নিপুনরে, নিপুন রাজি হইলো না, মুখে ছেরেফ কইলো, ঐভাবে বশা ভালো না!
আরিচা ফেরিতে ঐ মাইয়ার বাপেরে জিগাইয়া মাইয়ারে লইয়াই খাইতে গেলো চম্পা-নিপুন। খাইতে খাইতে মাইয়ার লগে আলাপে আলাপে চম্পা জানলো, মাইয়ার নাম ছাবরিনা। তার মা ঢাকায় থাকে–মিরপুরে নায়ক অনন্ত জলিলের গার্মেন্টছে চাকরি করে, বাপে থাকে বরিশাল, গেরামে একটা বাড়ি আছে ছোট্ট, দাদিরে লইয়া ৩ জনে থাকে। বাপে একটা মুদি দোকানে চাকরি করে, বরিশালে। মাঝে মাঝে ঢাকায় আশে তারা, ফুফুর বাশা আছে ঢাকায়, বাপ-মাইয়া ঢাকায় আশলে ৩ জনে ফুফুর বাশায় থাকে, তারপর বাপ-মাইয়া বরিশাল ফেরে, মা চইলা জায় তার মেছে। তারা শব শময় লন্চেই আশে-জায়, কিন্তু এখন নাকি লন্চের হরতাল, তাই বাছে জাইতেছে।
হুম, কয়দিন আগের নিউজ মনে পড়লো চম্পার। দলের কাউন্সিলে বরিশাল থিকা ২০১৮ শালের রাইতের ভোটের ১ এমপির লোকেরা একটা লন্চ লইয়া ঢাকায় আইতেছিলো। ঐ লন্চে থাকা দলের জুব শাখার এক নেতারে মাইয়া ছাপ্লাই দিছে ছাত্র শাখার ১ নেত্রি, শেই মাইয়ারে গ্যাঙ রেপ করছে ছাত্র শাখার পোলারা। তারপর শুরু হইছে মারামারি, লন্চের শারেং মহা বিপদ দেইখা চানপুরে ভিড়াইয়া দিছে লন্চ, তারপর জুবশাখার মেম্বাররা লন্চে দিছে আগুন! ঐ ঘটনার জেরেই লন্চঅলারা হরতাল ডাকছে।
খাওয়ার পরে বাছে ফিরলো তারা; নিপুনরে কইলো চম্পা, আপনে কতখন বশেন এইবার, আমি একটু খাড়াই। একদম রাজি হইলো না নিপুন! বাকি রাস্তা পুরাটাই খাড়াইয়া গেল নিপুন, চম্পার বেশ খারাপই লাগলো।
বাছ বরিশাল জাইয়া থামলো শাড়ে ৫ টায়, ছাবরিনারা বিদায় লইয়া চইলা গেল; চম্পা ছাবরিনারে নিজের পার্ছ থিকা ছোট্ট একটা আয়না আর চিরুনির ছেট দিয়া দিলো। নিপুন চাইয়া চাইয়া দেখলো, কিছু কইলো না। ছাবরিনারা বিদায় নেবার পরে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাছেস্টান্ডের পাশে একটা হোটেলে জাইয়া বশলো দুইজন। কফির অডার দিলো শুরুতে, ওয়েটারকে কইলো পরাটা খাবে, একটু পরে। নিপুন জিগাইলো, আপনেরা মনে হইলো পরাটায় থাবড়া মারেন? মানে বাড়ি মারে না দুই হাতে, ঐটার কথা কইতেছি? আমার জন্ন দুই পিঠ কড়া ভাজবেন, তেল দিয়া, থাবড়া মারবেন না, আর ডিম পোচ-ভাজি দেবেন। চম্পার দিকে চাইলো এইবার নিপুন, কইলো, ১৫ মিনিট পরে দিতে বলি? চম্পা কইলো এইবার ওয়েটারকে, হ, ১৫ মিনিট পরে দেন, আর আমার পরাটাও ওনার ছিস্টেমে দেন।
একটু পরেই কফি দিয়া গেলো ওয়েটার। কাপে একটা চুমুক দিয়া টেবিলে নামাইয়া রাখলো চম্পা, কাপটার দিকে চাইয়া থাকলো কতখন। তারপর চোখ তুইলা চাইলো নিপুনের দিকে, চুপচাপ চাইয়া থাকলো কয়েক ছেকেন্ড, তারপর কইলো--এক দিকে আপনের দোস্ত, আরেক দিকে ইনছাফ, কোন দিকে জাইবেন আপনে? তাবত মমতা বহাল থাকলেও ইনছাফের দিকে জাইতে পারবেন?
নিপুন ভাবলো একটু, তারপর চম্পার দিকে চাইয়া কইলো, জানি না। আর কোন কথা কইলো না কেউ। একটু পরে নাশতা চইলা আশলো। খাওয়া হইলে ঐ হোটেল থিকাই কয়েকটা পরাটা আর ৫০টা রশগোল্লা দিতে কইলো। প্যাকেট আশলো ৫/৭ মিনিটে, বিল মিটাইয়া বের হইলো দুইজন; একটা ছিএনজি ঠিক করলো চম্পা; কালিজিরা বাজারে জাবে, বরিশালের পাশেই, কিন্তু ঝালকাঠির ভিতর পড়ছে ঐটা। কালিজিরা নদির নামে বাজার, ঐ নদির পাড়েই চম্পার বাপের বাড়ি।
ঙ.
কালিজিরা নদিটা পুরাই মরবে মনে হয়, কিন্তু এখনো ছোট ছোট কিছু নৌকা চলে। বাজারটা ছাড়াইয়া আরেকটু শামনে জাইতে কইলো চম্পা, একটু পরে খাড়া করাইলো। ছিএনজিঅলা এই বাড়তি রাস্তার ব্যাপারে একটু বেজার আন্দাজ কইরা ২০ টাকা বেশি দিলো চম্পা। তারপর দুইজন হাটা শুরু করলো; একটু পরে নিপুনের মনে হইলো, একটা বাড়িতে ঢোকার রাস্তা, বড়ো রাস্তা ছাইড়া ঐ রাস্তায় ঢুকলো চম্পা, লগে লগে নিপুনও ঢুকলো। কয়েক গজ হাটার পরে নিপুন আরেকটু দুরে একটা টিনের ঘর দেখলো। কিন্তু চম্পা আগেই খাড়াইয়া পড়ছে। নিপুনের মনে হইলো, গোরস্তান একটা। আশেপাশে দুয়েকটা গরু ছাগল বান্ধা দেখলো নিপুন, শকালবেলার রোদে ঘাশ খাইতেছে, গোরস্তানের পরে একটা পুকুর, কিছু হাশের বাচ্চা পাড়ে খাড়াইয়া রইছে, মা হাশটা পুকুরে নাইমা বাচ্চাগুলারে ডাকতেছে প্যাক প্যাক কইরা।
চম্পার পাশে নিপুনও খাড়াইলো। নিপুনের মনে হইলো, চম্পা কানতেছে, পাশে খাড়াইয়া চম্পার মুখের এপাশটা দেখলো নিপুন, এক ফোটা পানিও পড়তে দেখলো। এমন টাইমে কারো ছোয়া, পিঠে কারো হাত খুব হেল্প করে, কিন্তু নিপুন ভাইবাও ছুইলো না চম্পারে, তার বদলে চম্পার হাতের ছোট্ট ব্যাগটা নিলো। হাতটা ফিরি হইতে গোরস্তানের বেড়ায় হাতটা রাখলো চম্পা। তারপর গোরস্তানের দিকে চাইয়া থাইকাই কইলো, আমার মা-বাপের কবর। দুজনের মাঝে ছোট্ট একটা কবরও আছে, ঐটা আমার ভাইয়ের, ছোট্ট থাকতেই ঐ পুকুরে ডুইবা মরছে। আর কোন পোলামাইয়া হয় নাই বা নেয় নাই তারা! নিপুন কিছু কইলো না।
গোরস্তানের বেড়া থিকা হাতটা তুইলা চোখ মুছলো চম্পা, তারপর আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলো আবার। ঘরের শামনে জাইয়া দেখলো দুয়ার লাগানো, কড়া নাইড়া শব্দ করলো, একটু পরেই দুয়ার খুইলা দিলো তাছলিমা। কোলে একটা বাচ্চা। হাকিম খা মরার কয়েকদিন পরেই তাছলিমার একটা পোলা হইছে। চম্পা খবর পাইছে, পাশের প্যাদা বাড়ির বারেক ফোন দিয়া জানাইছিলো চম্পারে।
দুয়ার খুইলা চম্পারে দেইখাই একটু জেন ডরাইলো তাছলিমা, তারপর আস্তে কইরা জিগাইলো, আফা, ভালো আছেন? তাছলিমারে অবাক কইরা দিয়া চম্পা ঘরে উইঠাই জড়াইয়া ধরলো তাছলিমারে, মুখে কইলো, ভালো। তারপরই ছাইড়া দিলো, কইলো, ওহ, জার্নি কইরা আশছি, এমনে জড়াইয়া ধরা ঠিক হয় নাই!
তারপর দুয়ার ছাইড়া নিপুনরে উঠতে দিলো, এইটা ঘরের শামনের বারান্দা, একটা টেবিল আর দুই তিনটা চেয়ার। ইশারায় নিপুনরে চেয়ার দেখাইয়া চম্পা কইলো, দেখা হইছিলো না আপনাদের দুয়েকবার? মাথা নাড়লো নিপুন, তাছলিমারে জিগাইলো তারপর, ভালো আছেন?
ঘটনায় তাছলিমা বেশ টাশকি খাইছে, আস্তে কইরা কইলো, ভালো। এর ভিতর পোলা কাইন্দা উঠলো, তাছলিমা দোলানো শুরু করলো কোলে, মুখে কইলো, আপনেরা বশেন, আমি একটু আইতেছি; তারপর ভিতরের ঘরে ঢুইকা গেল। একটু পরেই বাচ্চার কান্দন থামলো, তারো মিনিট দশেক পরে তাছলিমা একলা বের হইয়া আশলো শামনে। কইলো, পোলা ঘুমাইছে। আপনাদের তাইলে কি খাওয়াই এখন? ভাত আর ডাইল রান্ধি? আন্ডা আছে হাশের, আপনারা হাতমুখ ধুইয়া আশেন। চম্পা তাড়াতাড়ি কইলো, আমরা পরাটা খাইছি, তোমার জন্নও লইয়া আশছি, আর ঐ প্যাকেটে রশগোল্লা আছে। তুমি নাশতা করো নিজে। আর দুই তিনটা রুপালি আমগাছ আছিলো না? থাকলে আমাদের দুইটা আম দিতে পারো, আর একটা ছুরি বা বটি, আমরাই কাইটা খাইতেছি। তাছলিমা আবার ভিতরের ঘরে ঢুকলো, আর চম্পা ব্যাগ খুইলা টাওয়েল, বেরাশ-পেস্ট বাইর করলো, নিপুনরে জিগাইলো, আনছেন বেরাশ? নিপুন মাথা নাইড়া জানাইলো, না; চম্পা তখন ব্যাগ থিকা নতুন একটা বেরাশ বাইর কইরা দিলো। তারপর বেরাশে পেস্ট লাগাইয়া, টাওয়েলটা লইয়া দুইজনে ঘর থিকা বাইরাইয়া দরজা টাইনা পুকুরের দিকে হাটা দিলো।
পুকুর থিকা ফিরে ভেজানো দুয়ার ঠেইলা ঢুকলো দুইজন, তাছলিমা টেবিলের এক পাশে বইশা চম্পার আনা রশগোল্লা আর পরাটা খাইতেছে, দরজার দিকে মুখ কইরাই বশা আছিলো, চম্পার চোখে চোখ পড়তেই একটু লাজুক হাশি দিলো, হাশলো চম্পাও। আর দেখলো, টেবিলের উপরেই একটা বাটিতে কয়েকটা আম, একটা ইস্টিলের পেলেটের উপর একটা বাটি, ঢাকা, তার পাশে একটা ছুরি। চম্পা আর নিপুন বশলো, বাটির ঢাকনা তুলতেই চম্পা দেখলো, ছোট ছোট পিছ করা কিছু আম, আর দুইটা কাটা চামচ। ওপাশ থিকা তাছলিমা কইয়া উঠলো, কাইটা খাইতে আরাম পাইবেন না আফা, আমে পোকায় ধরছে। চম্পা কইলো, তাই! এইবার বারেককে একটা দায়িত্ত দিয়া জাইতে হবে তাইলে, আমগুলাও তো অনেক ছোট ছোট হইছে! গাছের গোড়ায় কি কি জেন মালমশলা দিতে হয়, আর গাছে বোল আশলে কি জেন এস্প্রে করে। বারেকরে কইলে ঐগুলা করবে, তাতে আগামি বছর আমও বড়ো হবার কথা, পোকাও ধরতে পারবে না মনে হয়! তারপর তাছলিমার কাটা আম খাওয়া শুরু করলো চম্পা, নিপুনরে ইশারা করলো, নিপুনও তখন আরেকটা চামচ নিলো হাতে।
চ.
খাওয়া খুব একটা আগাইতেছে না তাছলিমার। চম্পার আশার কারন ভাইবা কোন কুলকিনারা পাইতেছে না! লগে আবার জামাই বা মাইয়ারে আনে নাই, আরেকজনরে লইয়া আশছে। তাছলিমার মনে কু গাইতেছে, তার মনে হইতেছে, কোন একটা প্যাচ লাগছে কোথাও, কিন্তু একদমই ধরতে পারতেছে না!
তাছলিমা না চাইয়াই টের পাইতেছে, আম খাইতেছে চম্পা। কয়েক টুকরা খাইয়া হঠাৎ চম্পা কইয়া উঠলো, তাছলিমা!
চমকাইলো একটু তাছলিমা, তারপর মুখ তুলে চাইলো চম্পার দিকে। চম্পা কইলো আবার–তাছলিমা, আপনে কিন্তু এখন আমার মা, আমার বাপে আমার মা বানাইয়া দিয়া গেছে আপনারে, আপনার পোলা আমার ভাই।
কিছু কইলো না তাছলিমা, চাইয়া রইলো মুখ নামাইয়া, পরাটা নাড়াচাড়া করতেছে, মুখে দিতেছে না! খেয়াল কইরা চম্পা কইলো, খাইতে থাকেন তাছলিমা, আপনের চিন্তার কোন কারন নাই, আমি একান্তই আমার ব্যাপারেই আশছি বাড়িতে, আপনের একটু মদদ চাইতেও আশছি; তেমন কিছু না, দুয়েকটা জিনিশ জানা দরকার আমার, আপনের কাছে তার জবাব আছে, তাই আপনার কাছে আশছি। আপনে আমার মা, আপনের পোলা আমার ভাই, আপনের কোন খতি না হইলে আমারে মদদ দেবেন বইলাই আন্দাজ করি আমি, না দেবার মতো মানুশ না আপনে, আপনারে আমি মোটামুটি চিনি মনে হয়।
এখনো কিছু বুঝতেছে না তাছলিমা, চুপ কইরাই থাকলো শে। ১ পিছ আম মুখে দিয়া চম্পা উইঠা নিজের পার্ছ থিকা ফোনটা নিয়া আবার বশলো চেয়ারে। ফোনটা আনলক কইরা দেখলো, বাদল আর মুনার কয়েকটা মিছকল। মুনারে একটা মেছেজ দিলো, চিন্তা কইরো না মুনা, আমি ভালোই আছি, কাজকামে বিজি, কল দিবো পরে। তারপর ফোনের গ্যালারি খুইলা একটা ছবি বাইর কইরা নিপুনের হাতে দিলো ফোনটা।
ছবিটা ভালো কইরা দেখলো নিপুন। একটা ভ্যাছেকটমির ডকুমেন্ট। হাকিম খার ভ্যাছেকটমি। তাছলিমা শুনলো, চম্পা কইলো নিপুনরে, এই কারনেই মনে হয় আমার ঐ ছোট ভাইটা পুকুরে ডুইবা মরার পরে আর কোন ভাই-বোন হয় নাই আমার। তারপর তাছলিমার দিকে ফিরে কইলো, আমারে খোলাখুলি কইবেন আপনে, আমার বাপ, জামাই, আমার শংশার, আমার মাইয়ার কথা ভাববেন না; এবং আমি আমার মাইয়ার নামে কছম খাইয়া কথা দিতেছি, আপনার বা আপনার পোলার কোন খতি করতে পারবে না কেউ, আগেই কইছি, আপনের পোলা আমার ভাই, আপনে আমার মা!
তাছলিমা শুনতেছে, এইবারো কিছু কইলো না। চম্পা আবার কইলো, আমার বাপের ভ্যাছেকটমি করানো আছিলো তাছলিমা, ঐ পোলা আমার বাপের না, আপনে আর লুকাইবেন না কিছু, আমারে খুইলা কন শব!
তাছলিমা এইবার ডরাইলো আশলেই, হাকিম খার পোলা না হইলে ঐ পোলা কার, শে নিজেই তো জানে না! ওদিকে, ঐ পোলা হাকিম খার না হইলে চম্পা, চম্পার চাচাতো ভাইয়েরা তো এই বাড়ি ছাড়া করবে তারে! তার চোখ দিয়া পানি বাইরাইয়া গেল! ডুকরাইয়া কাইন্দা দিলো তাছলিমা, কথা আটকাইয়া গেলো পেরায়, তবু কইলো, আমি কিছুই জানি না আফা!
এইবার ভাবনায় পড়লো চম্পা; হাকিম খার ভ্যাছেকটমির রিপোর্ট দেইখা চম্পার অটোমেটিক শন্দেহ গেছিলো বাদলের উপর। তাছলিমারে জিগাইলো, আমাদের বাশায় আশার পরেই পোয়াতি হইছেন, পেরায় ৩ মাশ পরে, আগেই পোয়াতি থাকলে তো টের পাইতাম আমি। তারপর কার কার লগে দেখা হইছে আপনার? তাছলিমা কইলো, বাদল ভাইয়া আর উনি, আর কেউ না, কোথাও জাইও নাই আমি!
নিজের দিকে তাছলিমার আংগুল দেইখা পুরাই টাশকি খাইলো নিপুন! তাড়াতাড়ি চম্পার দিকে চাইলো! লাফ দিয়া খাড়াইলো নিপুন, শক্ত গলায় কইলো, এই শন্দেহ থিকাই তাইলে আমারে লইয়া আশছেন এইখানে!
চম্পা কইলো, হিশাবে তো আপনেরো থাকারই কথা, নাকি না! কিন্তু এতো টেনশন করতেছেন কেন আপনে, জদি আপনেই শেই লোক না হন, ডিএনএ টেস্টই তো শব ফকফকা কইরা দেবে! বশেন। বইশা পড়লো নিপুন।
তাছলিমা কানতেছে তখনো। তাছলিমার পোলা এতখনে উইঠা পড়ার কথা, কিন্তু ওদিকে কোন শব্দ নাই, ঘুমাইতেছে এখনো। চম্পা আবার কইলো, আব্বার হুশ টনটনা আছিলো, মরার আগে তক, তার ভোলার কথা না মোটেই। আব্বা আপনারে কখনো… তাছলিমা! কানতে কানতেই চম্পার দিকে চাইলো তাছলিমা। চম্পা আবার কইলো, আব্বা কখনো কিছু কইছে এইশব ব্যাপারে? নিজের ভ্যাছেকটমির ব্যাপারটা কোনভাবেই ভুইলা জাবার কথা না তার।
চোখ মুছলো তাছলিমা, কইলো, না। তার ভিতর কখনো কোন শন্দেহ দেখি নাই আমি, কখনো কিছু কয়ও নাই আমারে। আর শময়ই বা কই পাইলো! বাড়িতে আশার পর তার শরিল খুব দুর্বল হইয়া জায়। আর আপনের চাচাতো ভাইয়েরা আশপাশের মানুশদের বহু কথা কইতো, শেইগুলা কানে আশতো, খুব খেইপা থাকতেন শব শময়। একবার এলাকার মেম্বার আর চেয়ারম্যানের কাছেও গেছিলো আমারে লইয়া, বউ হিশাবে পরিচয় করাইয়া দিছে আমারে। বাচ্চার কথাও কইছে। শে মরার পরে তার ভাইর পোলারা জাতে ঝামেলা করতে না পারে, শেই ব্যাপারে তাগো কইয়া আশছে। তবে আপনার কথা কিছুই কয় নাই তাগো কাছে। আমারে খালি কইয়া গেছে জে, শিরিনরে লইয়া চিন্তা করবা না, বরং বিপদ দেখলে শিরিনরে জানাবা, জতো তাড়াতাড়ি পারো, জানাবা। বারেকরে খবর দিলেই জানাইয়া দেবে বারেক। আপনার কথা কইয়া মাঝে মাঝে আফছোছ করতো, কইতো, আমার মাইয়াটা একটু বদনছিব!
চম্পার ভিতর থিকা কান্দন উঠতে চাইলো, কিন্তু নিজেরে শামলাইয়া কইলো, আচ্ছা, এইগুলাই কন। আমার মাইয়া বা জামাইরে লইয়া কি কি কইছে?
আপনের মাইয়ারে লইয়া মাঝে মাঝে চিন্তা করতো; একবার কইলো, কখনো জদি একলা হইয়া পড়ে মুনা, ও কি শামলাইতে পারবে নিজেরে? তোমার কি মনে হয় তাছলিমা? আর দোয়া করতো, আরেকটু বড়ো হবার আগে জেন তেমন কিছু না হয়!
কিন্তু বাদল ভাইয়ারে মনে হয় পছন্দ করতো না! খুব বেশি কিছু কয়ও নাই কখনো। আপনাদের বাশায় জাবার কয়দিন পরে আমি একটা পোটলায় কিছু শোনালি চুলের মতো পাইয়া তারে জিগাইছিলাম, ঐগুলা কি?
উনি কইলেন, ঐটা একটা পুতুলের চুল। শোনালতা দিছিলো আমারে। পুতুলটা নাড়াচাড়া করতে জাইয়া বাদল একদিন ছিড়ে ফেললো কিছু চুল। পরে পুতুলটা মোতালেবরে দিয়া দিছি, চুলগুলা রইয়া গেছে। ফালাইয়া দাও।
চম্পার মনে ঝিলিক দিয়া উঠলো বাদলের খাছলত! চম্পা একদিন লাত্থি দিয়া খাট থিকা ফালাইয়া দিছিলো বাদলরে! চুল টানাটানির একটা বদ খাছলত আছে বাদলের! আর তার মা জে একটা পুতুল দিছিলো বাপেরে, শেইটা জানতো চম্পা, কিন্তু শেইটা জে হাকিম খা তার দোস্তরে দিয়া দিছিলো, শেইটা চম্পা জানলো মাত্র এখন!
চম্পা তখন জিগাইলো, আচ্ছা তাছলিমা, বাদলের লগে আপনের কখন কি হইছে মনে করার চেশ্টা করেন তো একটু! বাচ্চাটা কার, এইটা কেমনে না জানেন আপনে!
তাছলিমা আবার কাইন্দা দিলো, কইলো, আফা, শত্তই কিছু জানি না আমি, কিছুই মনে নাই আমার! তারপর একটু ভাইবা কইলো, একদিন আপনের বাবারে লইয়া আপনে আর মুনা ডাক্তারের কাছে গেছিলেন; ঐদিন বাদল ভাইয়া, মুনারে জেইরুমে পড়াইতো এক মাশ্টারনি, ঐ রুমে বইশা কি জেন খাইতেছিলো। বোতলে পানি ভরতে ডাইনিং টেবিলের দিকে জাইতেছিলাম, তখন আমারে ডাক দিলো বাদল ভাইয়া। তারপর হাতে একটা গেলাশ দিয়া কইলো, এইটা খাও তাছলিমা, ভালো লাগবে। আমি না করলাম, কিন্তু ভাইয়া আবারো কইলো, আরে খাও, জিন্দেগিতে টেশ করতে হয় অনেক কিছু! আমি তারপর এক চুমুক মুখে নিয়া দেখলাম, খুব ঝাঝ লাগে, তাড়াতাড়ি গিলে ফেললাম, তারপর দিয়া দিলাম গেলাশ। কইলাম, মাফ করেন ভাইয়া, আর খাইতে পারুম না! তারপরে আপনের বাবার রুমে ঢুইকা গেলাম, পরে কিছু মনে নাই আর। জখন থিকা মনে আছে পরে, তখন দেখলাম, আপনের বাবা ফিরছেন, শুইয়া আছে আমার পাশে, আমিও বিছনাতেই। ধড়ফড় কইরা উইঠা জিগাইলাম, কখন আইলেন! উনি কইলেন, এই তো ঘন্টাখানেক; ঠিকাছে, তুমি আরো ঘুমাইলে ঘুমাও।
চম্পা হিশাব মিলাইলো মনে মনে। তারপর নিপুনের দিকে চাইলো। নিপুন কইলো, আমার থিকা একবার কড়া কিছু ঘুমের ওশুধ নিছিলো বাদল!
চম্পা কইলো, আচ্ছা বুঝছি। ঠিকাছে তাছলিমা, হিশাব মিলছে আমার। আমরা চইলা জাবো এখন। আচ্ছা, তোমার পোলা উঠুক, মুখটা দেইখা জাই একবার!
তাছলিমা কইলো, এখন কই জাইবেন! ভাত রান্ধি, আর বারেক ভাইরে ডাইকা হাশটা একটু জবাই করাই। আচ্ছা, চাউলের রুটি বানাই, চাউলের রুটি দিয়া হাশের মাংশ মজা লাগে খুব।
তাছলিমার দিকে চুপচাপ কিছুখন চাইয়া রইলো চম্পা, তাছলিমা দেখলো, চম্পার গাল বাইয়া পানি পড়তেছে। ভারি গলায় চম্পা কইলো তারপর, আচ্ছা ঠিকাছে। তারপর উইঠা খাড়াইলো, হাটা দিলো দুয়ারের দিকে, তার পিছে পিছে নিপুনও হাটা দিলো।
দুইজনেই বাইরে নামলো, ঘরের পাশ দিয়া পিছের কালিজিরা নদির পাড়ে জাওয়া জায়, ঐ দিকে হাটতে থাকলো চম্পা, লগে লগে নিপুনও। কড়া রোদ আকাশে, কিন্তু গাছের ফাক গলে নামতে পারতেছে না নিচে।
একটু হাটতেই নদির পাড়। চাচাতো ভাইদের লগে দেখা হইয়া জাইতে পারে, ভাবলো চম্পা। তাদের বাড়িটা পাশেই। কিন্তু নদির পাড়ে তেমন কাউকে দেখা গেলো না। আছমানে চাইয়া দেখলো এক নজর, দুরে কিছু মেঘ দেখা জাইতেছে; বিশ্টির ছিজন, কিন্তু বিশ্টি হবে বইলা মনে হইতেছে না! নদির পাড়ে বেড়িবাধ, ঐটা ছাড়াইয়া একদম নদির পাড়ে জাইয়া একটা ছৈলা গাছের নিচে বশলো চম্পা। নিপুনও পাশে পাশেই হাটতেছিলো, চম্পা বশার পরেও খাড়াইয়া রইলো নিপুন, চম্পা কইলো, বশেন নিপুন ভাই।
নিপুন বশার আগেই চম্পা আবার কইয়া উঠলো, আমার এখন কি করা উচিত, আপনে কি কন?
নিপুন বশতে বশতেই নদির দিকে চাইলো। একটা ছোট নৌকা নদির মাঝ বরাবর, মাছ ধরতেছে কেউ বড়শি দিয়া। তির থিকা নদির ভিতর অনেকদুর চর পড়ছে, বুঝতে পারলো নিপুন। নিপুনের বাড়ির পাশের নদিটার দশাও এমন। ঐটার ওপাড়েই মেঘালয়। মেঘালয়ের একটা শহর তুরা, ঐখানেই থাকে এখন পারো রিছিল, নিপুনের বউ, কেমন আছে শে!
মনটারে টান দিয়া আবার কালিজিরার পাড়ে আনলো নিপুন, চম্পারে কইলো, আমারে আপনে ইনছাফের দিকেই পাইবেন!
চম্পা চাইয়া রইলো নদির দিকে। তার পর আস্তে আস্তে কইলো, কিন্তু আমিই তো মনে হয় ইনছাফের রাস্তায় হাটতে পারবো না ভাই! তারপর নিপুনের দিকে ফিরে কইলো, আমার চাচাতো ভাইরা আমার বাপের মরনের দিকে চাইয়া ছিলো, আমি একলা মাইয়া তার, শেই আমিও ঢাকায় থাকি। আমার বাপ মরলে পুরাটাই দখলে নিতে পারতো তারা; কিন্তু ঠিক তখনই আমার বাপে পোয়াতি বউ লইয়া হাজির! শেই বউয়ের আবার হইলো একখান পোলা! এর চাইতে খারাপ খবর আর কি আছে আমার চাচাতো ভাইদের জন্ন!
আশলে জার পোলাই হৌক, আমার বাপে তারে জাইনা বুইঝাই এইখানে লইয়া আশছে, তার শেই পেলান ভন্ডুল করতে পারবো না আমি, চাচাতো ভাইদের আশা পুরন হইতে দিবো না।
একটু থামলো চম্পা, পরে কইলো, তাছলিমা জে ঐ বারেকের কথা কইলো না, ঐ বারেক আমার ছোট্টকালের নাগর। আমার বংশের লোকেরা, আমার বাপ-মা প্যাদা বাড়ির লোকজনরে ভাবে ছোটলোক, হয়তো ভিতরে কোথাও আমিও ভাবতাম! আপনে কি জানেন, বারেক আমারে কখনো কিছু কয়ও নাই, আর নিজেও বিয়া করে নাই!
নিপুন কইয়া উঠলো, এইগুলা কি ভাবেন, ওনার লেখাপড়া কদ্দুর, ম্যাচ করতে পারবেন আপনে!
চম্পা কইয়া উঠলো, আরে না! আপনে কি ভাবছেন! আমি ভাবতেছি, তাছলিমার লগে বারেকের বিয়া দিয়া দিবো! আমার আবদার ফেলতে পারবে না বারেক! জাই হোক, শে পরে দেখা জাবে। তারপর চুপচাপ কতখন কালিজিরার পাড়ে বইশা থাকলো তারা দুইজন, কেউই জানলো না কে কি ভাবতেছে!
এক শময় চম্পাই কইয়া উঠলো, চলেন, ঘরে জাই। তাছলিমার পোলা এতখনে উঠছে, নিচ্চই, ঘরে জাইয়া আপনার একটা ভিডিও কল দিতে হবে বাদলরে, কিছু কইতে হবে না আপনের, জা কইবার আমিই কইবো। আচ্ছা, খাড়ান, আরেকটা কাম কইরা লই আগে। ফোনটা আনলক কইরা মুনারে একটা কল দিলো চম্পা। ভিডিও কলই দিলো, কিন্তু মুনা কল ধরলেও ক্যামেরা অন করলো না! চম্পা কইলো, আচ্ছা, দুই মিনিট পরে আবার কল দিতেছি, ক্যামেরা অন করতে হবে তোমার, তারপর কলটা কাইটা দিলো।
দুই মিনিট খতম হবার আগে মুনাই কল দিলো। ধরলো চম্পা। তারপর কইলো, মন দিয়া শুনবা কথা, কঠিন কথা, কতটা বুঝবা এখন জানি না, বুঝলেও নর্মাল হিশাবেই নিবা, মনে ভাববা, দুনিয়া এমনই।
তারপর কইতে শুরু করলো--আমি এখন ঝালকাঠি, তোমার নানা বাড়ি। ঘটনা কইতে জাইয়াও কইলো না চম্পা, এই জামানার টিনএজ মাইয়া, এদের রিয়েকশনের ঠিকঠিকানা নাই! ছেরেফ এইটাই কইলো জে, কালকে শকালেই বাসায় আশতেছি আমি, ফেরার পরে বুঝাইয়া বলবো তোমারে। তার আগে তোমার বাবা তোমারে লইয়া কোথাও জাইতে চাইতে পারে, কিন্তু আমি ফেরার আগে বাশার বাইরে পা দিবা না তুমি! তোমার বাবারে বলবা, মা আশতেছে শকালে, তার আগে বাশাতেই থাকবা তুমি।
বিরক্ত হইলো মুনা, কইলো, মা, তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না! চম্পা ঝাড়ি দিলো একটা, কইলো, বুঝতে হবে না এখন, জা কইছি মনে রাইখো। আর এখন শিরিনরে একটু ডাকো; ফোনটা রাইখা শিরিনরে ডাকতে গেলো মুনা। চম্পা মনে মনে ভাইবা রাখলো, মুনার কাছে রাখঢাক করা জাবে না, এমন ছিরিয়াছ ব্যাপার জানা দরকার আছে, লোকটা এমনকি তার বাপ হইলেও! বাশায় ফিরে মুনারে পাশে বশাইয়া কইতে হবে,
"তুমি তো জানো জে, তোমার নানার একটা পোলা হইছে; কিন্তু ঐ পোলা তোমার নানার না, তোমার বাপের। তাছলিমারে তোমার বাপে রেপ করছিলো, তারই ফল ঐ পোলা। তাই আমি তোমার বাপেরে তালাক দিতেছি। আর কয়েক বছর পরে তুমি শাবালক হবা, কি করবা, তখন ভাইবা ডিছিশন লইও। এখন তুমি আমার কাছে থাকবা, তোমার বাপ এই বাশায় থাকতেছে না আর।"
শিরিনকে ডাইকা আনলো মুনা, চম্পা কইলো, তুমি ঘরের বাইরে জাও মুনা। মুনা কিছু কইতে জাইতেছিলো, আবার ঝাড়ি মারলো চম্পা। মুনা বাইরাইতে শিরিনকে চম্পা কইলো, দরজাটা আটকাও। দরজা আটকাইলো শিরিন। তারপর চম্পা কইলো, তোমার ভাইয়া মুনারে লইয়া বাইরে জাইতে চাইতে পারে; তুমি কইবা, আফায় মানা করছে। শে জোরাজুরি করলে ছিন কিরিয়েট করবা, চিৎকার করবা, পাশের বাশার লোক ডাকবা দরকারে, কিন্তু মুনারে লইয়া কোনভাবেই বাইরাইতে পারে না জেন! মনে থাকবে?
একটু বেশ ডরাইলো শিরিন, কিছুই বুঝলো না, ভয়ে ভয়েই কইলো, ঠিকাছে আফা। ফোন রাইখা দেবার আগে চম্পা কইলো, মুনারে এর কিছুই কইও না কিন্তু। শিরিন আবার কইলো, ঠিকাছে আফা। তারপর কল কাইটা দিলো চম্পা।
দুইজনের লগে কথা খতম কইরা ঘরের দিকে ফিরলো তারা– চম্পা আর নিপুন। ঘরের শামনে উঠান, বারেক আর তার মা আশছে। দুইজনে একটা হাশ জবাই করতেছে। চম্পারে দেইখা বারেক একটু হাশলো, চম্পাও হাশলো। বারেকের মায়ের দিকে ফিরে জিগাইলো চম্পা, কেমন আছেন চাচি? মহিলা কুজা হইয়া গেছে, বয়শ হইছে, শোজা হইয়া আর খাড়াইতে পারে না মনে হয়। উনি জবাব দিলেন, ভালো আছি মা। তোমার মাইয়া জামাই কেমন আছে? মাঝে মাঝে লইয়া আশবা বাড়িতে। আর তোমারে তো খুব কাহিল লাগতেছে! তেমন কিছু কইলো না চম্পা, একটু হাশলো।
দুইজনে ঘরে উঠলো। নিপুনরে বশাইয়া বারান্দার পাশ ঘুইরা ভিতরের দিকে ঢুকলো চম্পা। নিপুনের মনে হইলো, ওদিকে রান্নাঘর। একটু পরে একটা বাচ্চা কোলে দোলাইতে দোলাইতে চম্পা ফিরলো। নিপুনরে কইলো, কল হিম।
মেছেন্জারে ঢুকলো নিপুন। বাদল বেশ কয়েক বার নক করছিলো, ছিন করে নাই নিপুন। এখন কল দিতেই ধরলো বাদল। ধইরাই কইলো–ধুর ব্যাটা ফাউল, কার বাল কামাও তুমি! নিপুনের ফোনের ক্যামেরাটা এমনভাবে ধরা জে নিপুনের মুখটা দেখা জাইতেছে আর তার পিছে বারান্দার গিরিলের ফাকফোকর দিয়া উঠানের কতকটা।
নিপুন কইলো, আর কারে কামাবো আমি! তারপর ক্যামেরাটা ঘুরায়া চম্পার দিকে ধরলো, চম্পার কোলে তখনো বাচ্চাটা, দোলাইলেছে চম্পা, বাচ্চাটা কু কু করতেছে।
চম্পারে দেইখাই বাদল চুপ হইয়া গেল। চম্পা কইলো, তোমার পোলা কোলে লইছি, চেহারা দেখবা? তোমার চাইতে তাছলিমার মতোই বেশি হইছে পোলা!
কিছুই কইলো না বাদল, চোখমুখ শক্ত হইয়া গেল; কোনভাবেই হিশাব মিলাইতে পারতেছে না বাদল। কোন মওকা দিলো না চম্পা, একনাগাড়ে কইতে থাকলো, কালকে শকালে বাশায় আশবো আমি, তোমার জা কিছু আগে শব গুছাও, লইয়া ভাগো, আমি আইশা জেন না দেখি তোমারে! পরশু তুমি আমার তালাকের চিঠি পাবা। এই বাশা আমার নামে ভাড়া লওয়া, কাবিননামায়ও তালাক দেবার এখতিয়ার দেওয়া আছে।
লগে জোগ করলো চম্পা, ছেরেফ তোমার জিনিশপত্রই নেবা, আমারে জা দিছো জিন্দেগিতে, ওগুলাও লইয়া জাও, নাইলে আমিই ফালাইয়া দিবো। কিন্তু ভুলেও মুনারে লইয়া বাশার বাইরে বের হবার চেশ্টা করবা না কইলাম!
বাদল জাস্ট চুপ কইরা রইলো, কিছুই কইলো না। চম্পাও ওয়েট না কইরা কাইটা দিলো কল।
ছ.
তাছলিমার হাশ রান্না ভালো হইছিলো। চালের রুটিও। চম্পা আর নিপুন খাইলো ভালোই। চম্পা ভাবছিলো, তেমন খাইতে পারবে না। কিন্তু নিজেরে চম্পার বেশ ফুরফুরাই লাগলো, এতো বছরের শংশার এমনে ভাইংগা পড়লো, এইটা চম্পারে তেমন কাহিল করতে পারলো না! বরং নিজেরে বেশ নির্ভার লাগতেছে; একটা ব্যাপারেই কেবল খারাপ লাগতেছে জে, চাচাতো ভাইদের শায়েস্তা করতে জাইয়া বাদলরে জেলে নিতে পারলো না!
খাওয়ার টেবিলে বারেককে ডাকলো চম্পা, ৩ জনে বইশা খাইলো এক লগে, তাছলিমা খাদেম হিশাবে থাকলো; বারেকের মা চৌকির উপর বশা, কোলে তাছলিমার পোলা। চম্পা জিগাইলো তাছলিমারে, নাম রাখছেন পোলার? তাছলিমা জবাব দিলো, আপনের বাপেই নাম রাইখা গেছে, বাবুল। চম্পার গলায় চালের রুটি আটকাইয়া গেলো পেরায়, তার মরা ভাইটার নামেই নাম রাখছে হাকিম খা! তাছলিমা আরো কইলো, মাইয়া হইলে নাম রাখতে কইছিলো, শোনালতা।
একটুখন চুপচাপ খাইলো শবাই। তারপর বারেকের দিকে মুখটা ঘুরাইয়া চম্পা কইয়া উঠলো, আমার মা আর ভাইরে রাইখা গেলাম তোমার জিম্মায়, দেইখা রাইখো। তোমার লগে আরো কথা আছে, ঢাকায় জাইয়া ফোনে আলাপ করবোনে।
খাওয়ার পরে বিদায় নিলো নিপুন আর চম্পা। কালিজিরা বাজার থিকা শোজা বরিশাল। তখন তো কোন লন্চ নাই, আবার তখনি বাছে উঠলে ঢাকা পৌছাবে অনেক রাতে। নিপুনরে কইলো চম্পা, চলেন আপনারে ভোলার মহিশের দুধের দই খাওয়াই, আর রশগোল্লা। বাছেস্টান্ডের রশগোল্লা ভালো না, তাই আপনারে খাইতে কই নাই। আর অটো রিকশায় ঘুরবো আমরা, বরিশালে আমার ইশকুল ফেরেন্ড আছে অনেক, তাদের কারো বাশায়ও জাইতে পারি, দেখি পাই কিনা কাউকে।
শিউলি আর কবিরকেই কেবল পাওয়া গেলো। কেলাশ ক্যাপ্টেন আছিলো শিউলি, কবিরকে একবার এমন পিটান খাওয়াইছিলো! শেই শিউলি ফোন ধরলো, তার বাশাতেই গেলো দুইজন। ফোনেই জানলো, তিনটা বাচ্চা শিউলির, মোটামুটি বড়ো হইয়া গেছে বাচ্চারা। তবু কিছু চিপস আর চকলেট কিনলো চম্পা। শিউলির বাশায় জাইতে তার দুই পোলার লগে পরিচয় করাইয়া দিলো। মাইয়া এখনো ছোটই, ৪/৫ বছর হবে। পোলাদের দেইখা চম্পা কইলো, এগুলার চেহারা কবিরের মতো কেন! শিউলি হাশলো, কইলো, আর কইশ না, পাপের ফল! কবিরও ফিরলো একটু পর। কবিরই লন্চে ২টা ছিংগেল কেবিন ঠিক কইরা দিলো ফোনে। হরতালের পরে আজকেই শুরু হইছে লন্চ চলা। রাতে খাইতেও হইলো ওদের বাশাতেই, তারপর কবির একদম লন্চে উঠাইয়া দিয়া গেল!
লন্চ ছাড়লো রাত ৯টায়, পাশাপাশি কেবিনের শামনের চেয়ারে বইশা কফি খাইলো দুইজন। টুকটাক কথাও হইলো, কিন্তু লন্চের কফি নিপুনরে তাজা রাখতে পারলো না, কালকের বাছের ধকলের পরে আজকে শারাদিন; শিউলির বাশায় একটু ঘুমাইয়া নিতে কইছিলো চম্পা, রাজি হয় নাই নিপুন। তাই চম্পারে গুড নাইট কইয়া নিজের কেবিনে জাইয়া ঘুমাইয়া পড়লো।
চম্পা ঐ চেয়ারেই বইশা রইলো আরো অনেকখন! ভাবলো তার বাপের কথা, বাদল, মুনা, নিজের কথাও। ঠিক বুঝলো না, তার কি আরো বেশি খারাপ লাগার কথা! কতজনের কথা শোনে, তাদের পিরিতি কি আরো অনেক ঘন! তাদের মতো বেহাল দশা হইলো না কেন তার! চম্পার বরং অন্ন অন্ন পুরুশের কথা মনে আইলো, বাদল এতোটাই ভইরা ছিলো জে, এতোদিন ভাবেই নাই! এমনকি নিপুনের কথাও ভাবলো; লোকটারে ভালো মনে হইলো চম্পার, ১ দিনেই মনে হইলো, একটা শান্তি লাগে নিপুন পাশে থাকলে।
আবার কি বিয়া করবে চম্পা? ভাবে। মুনার কথা ভাবে। খুব রিস্কি লাগে চম্পার। মনে মনে ভাবে, কখনো জদি বিয়া করেও, এমনকি শে নিপুন হইলেও মুনা নিজেরে পুরাপুরি শামলাবার মতো বড়ো হবার আগে আর কোন পুরুশ লইয়া ১ বাশায় থাকবে না শে। আলাদা বাশায় থাকলো, মাঝে মাঝে তারা জেন বা ডেটিং করলো, তেমন পোলা কি পাবে আর চম্পা! জৌনবাজারে কতটা আর দাম আছে তার, ভাবে চম্পা! উইঠা নিজের কেবিনে গেল, লাইট নিভাইয়া শুইয়া পড়লো। তারপর আবার ফোনটা হাতে নিলো, ১২টা বাজে। মুনারে ফোন দিলো চম্পা। ভারি গলায় চম্পা কইলো, মা, তুমি কেমন আছো? তুমি ছাড়া আমার কেউ নাই আর! হাউমাউ কইরা কাইন্দা দিলো চম্পা। মুনা চিৎকার দিয়া উঠলো–মা, তুমি কই? কি হইছে তোমার! চম্পা নিজেরে শামলাইয়া তাড়াতাড়ি কইলো, না না, আমি ঠিকাছি, এখন লন্চে, শকালেই দেখা হবে তোমার লগে। তুমি ঘুমাও মা, আমিও ঘুমাইতেছি। তারপর ফোন রাইখা দিলো চম্পা।
জ.
বাশায় ফিরে বাদলকে পাইলো না, কই গেছে, কে জানে! দুই দিন পরে বাদলের অফিশের ঠিকানায় তালাকনামা পাঠাইয়া দিলো চম্পা। মুনারে বুঝাইয়া কইলো শব কিছু। অনেক কানলো মুনা, কয়েকদিনের ছুটি লইয়া বাশাতেই থাকলো চম্পা। শান্তি লাগতেছিলো। কিন্তু বাদল শান্তিটা টিকতে দিলো না! ঝালকাঠিতে চম্পাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফোন দিলো একদিন। ঝালকাঠি আবার জাইতে হইলো চম্পার, আবারো নিপুনরে লইয়াই গেল। কাহিনি হইলো, বাদল মনে হয় পাগল হইয়া গেছে! চম্পাদের বাড়িতে গেছিলো বাদল, জাইয়া তাছলিমারে তার লগে জাইতে কইলো পোলা লইয়া! বাদল হয়তো ভাবছে, চম্পার উপর এইভাবে বদলা লইতে পারবে শে! কিন্তু তাছলিমা রাজি হইলো না, বারেকরে ডাকলো শে। তারপর কেমনে কেমনে বারেকের গায়ে হাত তুললো বাদল, গেরামের লোকেরা তখন বাদলরে আটকাইয়া চেয়ারম্যানের কাছে লইয়া গেলো। চেয়ারম্যান তখন চম্পারে ফোন দিলো। চম্পা ছাফ কইয়া দিলো, আমাদের তালাক হইছে, উনি আর আমার কেউ না, আইন মোতাবেক জা করতে হয়, তাই করেন। চেয়ারম্যান পুলিশে খবর দিলো, পুলিশ আইশা লইয়া গেলো বাদলরে। পরে নিপুনরে লইয়া জাইয়া চম্পা এইবার আশলেই বারেকের লগে তাছলিমার বিয়া পড়াইয়া দিয়া তারপর ফিরলো ঢাকায়।
//২০১৮-২০২২