Posts

গল্প

চব্বিশের "নবান্ন"

November 12, 2024

আব্দুছ ছামাদ আজাদ

গেলো ঈদের দিন সন্ধ্যায় পরিচিত একজনকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম আসাতে আসতে রাতের মনোরম আকাশ আর হুডের ফাঁক দিয়ে চাঁদটা দেখার লোভ সামাল দিতে পারছিলাম না।

রাস্তা খারাপ থাকায় রিক্সা এদিক সেদিক করছিল, রিক্সাওলাও এমন জোরে চালাচ্ছে মনে হয় ধেয়ে আসা উন্মাদ কুকুর তাকে তাড়াচ্ছে, যার কারণে সুন্দর মুহুর্তটাকে উপভোগ করতে কষ্ট হচ্ছিল। 

ভাবছিলাম হাসপাতালে না আসলে হয়তো ভাতিজা শানের টিমের সাথে জমিয়ে গল্প হতো! হটাৎ দৃষ্টি পড়লো রাস্তার বাঁ পাশে... 

ক্ষণিকের জন্য বিজন ভট্টাচার্যের "নবান্ন" নাটকের শিল্পরূপটা যেনো আমি চাক্ষুষ বিলোকন করছিলাম।

"নবান্ন" পড়ে মনে হয়েছিল যে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে আমু কুকুরের সাথে লড়াই করে এবং সেটি ধরে রাখতে গিয়ে হন্যে হওয়া কুকুরের কামড় খেয়ে উচ্ছিষ্টটা রাখার যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যটা! এটিই ছিল হয়তো ইতিহাসের করুনতম দৃশ্য।

কিন্তু আমাদের চর্ম চক্ষু দিয়ে বিচার করে পৃথিবীর সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ নই,

ঘটনাটি দেখুন...

একজন সুস্থ মানুষ... ভিক্ষুক বা পাগল যাই হোক "মানুষ" ছিল, ক্ষুধার ছটফটানি সহ্য করতে না পেরে ডাস্টবিনের ময়লাতে উচ্ছিষ্ট খাবার খুঁজছিলো, টাইম চেক তখন রাত ১০:০০ টা। উচ্ছিষ্ট ময়লা বের করতে না করতেই ক্ষুধার্ত এক কুকুর গেউ গেউ করতে করতে এদিক ওদিক করছিল।

ক্ষুধার্ত মানুষটিই বা কম? তাড়াচ্ছিলো কুকুরের ভাষাতেই কুকুরকে, লাগলো কুকুর আর মানুষের হার জিত লড়াই...

পাঠকের মনে এখন কৌতুহল… কে জিতলো? জ্বি হ্যা সেদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ আর কুকুরের মধ্যকার ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ছিনিয়ে আনার যুদ্ধে মানুষ-ই জয়ী হয়েছিল।

কিন্তু লড়াইয়ের প্রতি ন্যানো সেকেন্ডে অযুত-নিযুত বার হেরে যাওয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীবের মানবতাকেই কথক দেখছিলো!

বিজন ভট্টাচার্য নাটকটি রচনা করেছিল ১৯৪৩ সালে। আজ আট দশক পর গতিশীল প্রজন্মের কাছে মনে হয়েছিল সেই আমু ক্ষুধার্ত কুকুরের সাথে উচ্ছিষ্ট খাবার ছিনিয়ে রাখতে যে লড়াই করেছিল সেটাই বুঝি সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

কিন্তু গত ঈদ দিবাগত রাতের সেই অশুভ দৃশ্যটি প্রজন্মের ধারণাকে বদলে দিয়েছিল। তবে কি আট দশক আগে থেকে এ অব্দি মানবতার কোনো উত্তরণ হয় নাই?

সে সময় তো দুর্ভিক্ষ ছিল আজও কি সেটি আছে? বা এমন কোনো অজুহাত?

মানুষের মন খুব স্পর্শকাতর হয়ে থাকে, মানুষের কষ্টে সহানুভূতির খায়েশ জাগে। মানুষের মন বড় বিচিত্র হয়ে থাকে কখন কি করে অনেক সময় নিজেও জানে না। মানুষের রহস্য ভেদ করা দুষ্কর কারণ একেক জন একেক ডিজাইনের মনের দিক থেকেও ভিন্ন।

মানুষ চাইলে হয়ত এমন দৃশ্যের ইতি টানতে পারে। সেদিন বড় খায়েশ হয়েছিল যে আমি হয়তো মিলিয়নিয়ার হওয়ার দরকার ছিল!..

যে ভূমিতে অসহায় মানুষের কদর নাই সেই মাঠি উর্বর হয়েও ঊষর।

ধন্যবাদ।       "২০২৪ এর নবান্ন"

Comments

    Please login to post comment. Login