Posts

প্রবন্ধ

শোষণের বেড়াজালে আবদ্ধ সমাজ

November 12, 2024

Mostofa Masud

163
View


শোষণ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে ঔপনিবেশিক শোষণ।যদিও আমরা বর্তমানে প্রকাশ্য ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত ।তাই আমরা এখন নিজেদের স্বাধীন ভেবে ভুল করি।আমরা কি  বর্তমানে প্রকৃতপক্ষেই ইউরোপিয় শাসন থেকে মুক্ত? সবদিক বিবেচনা করলে এটা বিশ্বাস করা একটু কঠিনই বটে।

পশ্চাত্যের শাসন  এখনো টিকে আছে এই কথার প্রমাণ হিসেবে এটাই যথেষ্ট যে,আমরা পশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে,ভাবধারাকে নিজেদের সংস্কৃতি,ভাবধারা হিসেবে রুপ দিয়েছি। তাই বলা যায়  বর্তমান যুগেও পরোক্ষভাবে পশ্চাত্যের শাসন টিকে আছে।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগেও আমরা শাসিত হচ্ছি পশ্চিমা সভ্যতার মাধ্যমে।মিডিয়ার সুদূর প্রসারি প্রভাবে বিংশ শতাব্দীতে এসে  পশ্চিমা সভ্যতা ব্যপক প্রসার লাভ করেছে।তাই,এটা আশ্চর্যের বিষয় নয়, যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে নেংটি পড়া দক্ষিন অ্যামেরিকান কোন উপজাতি তরুণকে অ্যামাজনের গহীন বনে মাথায় নাইকির লোগো সম্বলিত বেসবল ক্যাপ পরে ঘুরতে দেখা যায়।এটা হলো পরোক্ষভাবে শাসন করা।প্রথমে ইউরোপিয়রা প্রতোক্ষভাবে শাসন করে তাদের সংস্কৃতিকে আমাদের কাছে উন্নত হিসেবে উপস্থাপন করেছে  । তাদের সংস্কৃতির কাছে আমাদের সংস্কৃতিকে নিচুভাবে উপস্থাপন করেছে।এরপর আস্তে আস্তে স্লো পয়জন এর মত তাদের  সংস্কৃতিকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।তাদের এই পরিকল্পনা এত সূক্ষ্ম যে,শোষিতরা অনুধাবনই করতে পারে নি যে,তারা শোষিত হচ্ছে। বর্তমানে যেহেতু আরব, অনারব প্রতিটি দেশই পশ্চাত্যের সংস্কৃতি লালন করছে তাই এরাও এই সংস্কৃতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে  নিজেদের এই ধ্বংসময় সংস্কৃতির হাতে ধরা দিতে প্রস্তুত।তাদের মনোভাব এমন যে,"বিশ্বের প্রত্যেক দেশ যদি পশ্চাত্যের দ্বারা শোষিত হতে প্রস্তুত তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন?" বিষয়টি অনুধাবন করতে পারলে সত্যিই হাসি পাই।

আমরা যে শোষিত হচ্ছি সেটা আমরাই বুঝতে পারছি না,এই শাসনই তো চাই পশ্চাত্যরা ; তারা শাসন করবে কিন্তু আমরা অনুধাবন করতে পারবো না যে, আমরা শাষিত।তারা নিজেদেরকে আমাদের রব হিসেবে উপস্থাপন করবে কিন্তু আমরা বুঝতেও পারবো না আমরা তাদের দাস। ইস্, এই ধারনাটি যদি তারা ঔপনিবেশ  শাসন অবসানের  পূর্বে পেত তাহলে,তাদেরকে মানুষ শাসক মনে করে ঔপনিবেশ থেকে বিতারিত করতো না বরং তাদের অভ্যর্থনা করে বলতো "এসো আমাদের শাসন করো"।
ঔপনিবেশ হারিয়ে তাদের খুব একটা ক্ষতি হয়েছে এমন বলার উপায় নেই কারণ,ঔপনিবেশ হারানোর পূর্বে তারা এই ধারনা মানুষের মনে দৃঢ় করতে পেরেছিল যে," আমাদের সংস্কৃতিই উন্নত সংস্কৃতি,আমাদের সংস্কৃতি ধারণেই বিশ্বের মুক্তি নিহিত"।তাইতো,বর্তমান যুগের বিজ্ঞ মানুষ পশ্চিমাদের সংস্কৃতি লালনে ব্যস্ত।

আমরা যে শুধু তাদের সংস্কৃতির মাধ্যমেই শাসিত হচ্ছি তা নয় তারা নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের চিন্তাশক্তি। আমাদের অভ্যন্তরীন,বাহ্যিক ব্যবহারেও,চলাফেরাতেও,আমাদের লক্ষ্য, এমনকি পোষাকেও আমরা আমাদের স্বতন্ত্রতা হারিয়েছি।আমরা নিজেদেরকে তাদের আদর্শের সাথে তুলনা করি।তাদের দেখানো পদ্ধতিতে চিন্তা করি,বলতে আনন্দ লাগে যে প্রত্যেক মনুষের যে আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকে যার মাধ্যমে তাকে আলাদাভাবে চেনা যাই,আমরা সেটা বিসর্জন দিয়েছি অনেক আগেই।তাই তো বর্তমানের যুবসমাজ তাকওয়ার মাধ্যম সম্মান খুঁজে না,তাদের সম্মান সুন্দর পোষাকে; ইসলামের সম্পর্কে সূক্ষ্ম জ্ঞান তাদের কাছে স্মার্টনেস নয়,স্মার্টনেস হলো তিন চারটা গার্লফ্রেন্ড,অন্যায়ের প্রতিবাদকারীকে তারা মনে করে বোকা, বীরত্ব বলতে গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করা বুঝায়।পশ্চিমাদের আচার-অভ্যাস এমনভাবে চর্চা করা হয়,পশ্চিমাদের এমনভাবে অনুকরণ করা হয় যেন আমাদের চিন্তাশক্তিতে স্থবিরতা চলে এসেছে।আমরা নতুন করে ভাবতে যেন ভুলেই গিয়েছি।আমাদের অবস্থা এমন, পশ্চিমাদের তৈরিকৃত বিকল্পগুলোর মধ্যথেকেই একটি গ্রহণ করতে হবে, নতুন কিছু তৈরি করার যোগ্যতাই যেন নেই আমাদের।এমনভাবে পশ্চিমাদের ভাবধারা আমাদের মনে স্থান করে নিয়েছে যে,কোনটা আমাদের ভাবধারা আর কোনটা পশ্চিমাদের ভাবধারা এইটা বিশ্লেষণ করতে ইতিহাস ঘাটতে হবে।

আমরা যে পশ্চিমাদের মাধ্যমে কতটা  নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি নিচের প্রশ্নের উত্তর নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবঃ

১.আমরা যে অন্যকে স্মার্ট বা আনস্মার্ট বলে থাকি সেটা কি পশ্চিমাদের কাছে স্মার্ট বা আনস্মার্ট বলে গণ্য নয়?

২.পশ্চিমাদের ভোগবাদী মানসিকতা কি আমরা চর্চা করি না?

৩.আমাদের মনে কি পশ্চিমাদের কোন ব্যক্তির ভোগবিলাসি জীবন দেখে তার মতো জীবন পরিচালনা করতে ইচ্ছা করে না?
অনেকেই বলতে পারে যে, এটা হলো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা।সত্যিই কি তাই?যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানে এটা নয় যে,নিজের রঙকে বিসর্জন দিয়ে সম্পুর্নভাবে অন্যের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলা।

Comments

    Please login to post comment. Login