পোস্টস

গল্প

মাতব্বর বাড়ির দৈত্যছানা

১৩ নভেম্বর ২০২৪

borhun uddin


 

ইসলামপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ি। বাড়িটি অনেক বড়। সেই বাড়ির লোকজনের সংখ্যা অনেক। যাকে যৌথ পরিবার বলে। এই বাড়ির কর্তা হলেন বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিটি। তিনি এই গ্রামের মাতব্বর। সবাই তাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আবার তেমনি ভয়ও করে। কেননা তিনি গ্রামের মাতব্বর তিনি সৎ এবং নিষ্ঠাবান ছিলেন। কেউ কোন অপরাধ করলে তিনি তাকে শাস্তি দিতে পিছিয়ে যেতেন না। আবার তিনি রসিক মানুষ। বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রতিদিন বিকালে নাতি নাতনিদের নিয়ে বিশাল গল্পের আসর বসাতেন। ছোট ছোট বাচ্চারা তার গল্প শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। তার নাম হলো রহমত উল্লাহ।

এই বাড়িতে মোট পাঁচজন ছোট বাচ্চা আছে। তারা সবাই রহমত সাহেবের নাতি নাতনি বড় জনের নাম হলো আকবর তার বয়স তেরো বছর। রহমত সাহেবের বড় ছেলের মেজো ছেলে সে। সে খুব ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র।

এর থেকে ছোট তার নাম সোহান সে আকবরের ছোট ভাই। তার বয়স এগারো বছর।  সোহান একটু দুষ্টু। 

এর ছোট সে হলো স্বপ্না। খুব মিষ্টি মেয়ে সে। রহমত সাহেবের মেজো ছেলের একমাত্র মেয়ে স্বপ্না। স্বপ্নার বয়স বারো বছর। ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করে সে।

রহমত সাহেবের ছোট ছেলের দুইটি সন্তান। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়ের বয়স পাঁচ বছর আর ছেলের বয়স নয় বছর। মেয়ের নাম পুতুল আর ছেলের নাম অভি। অভি খুব দুষ্টু ও পন্ডিত ধরনের। সে তার বড় ভাইদের সাথেও খুব দুষ্টামি করে এবং খুব হিংসা করে।

রহমত সাহেবের বাড়ির উঠোনে বিশাল এক বরই ( কুল) গাছ আছে। দেখতে দেখতে ঋতুর দল পাল্টে গেল। বরই এর মৌসুম এলো। একে একে দিন গুলো কেটে গেল। বরই গুলো বড় হলো দিন দিন পাকতে শুরু করল। পাড়ার ছেলে মেয়েরা প্রতিদিন ভোরে এই গাছের বরই কুড়াতে আসতো। একদিন অভির ভোরে ঘুম ভেঙে যায়, সে প্রসাব করার জন্য ঘরের বাইরে বের হয়। সে সময় উঠান থেকে কিছু ছেলে মেয়ের আওয়াজ শুনতে পায়। তারপর অভি বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের সাথেও বরই কুড়াতে থাকে।

বাড়ির সবাই জানতো যে পাড়ার ছেলেমেয়ে বরই কুড়াতে আসে। বাড়ির সবাই বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতো তাই কখনো তারা বাঁধা দিত না। কারন তারা তো আর গাছ থেকে পেড়ে নেয় না বরং কুড়িয়ে নেয়। আর তাছাড়া প্রতিবেশীদের ও তো কিছুটা হক আছে। 

পাড়ার ছেলে মেয়েরা প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও বরই কুড়াতে আসলো। সবাই বরই কুড়াতে ব্যাস্ত। ঠিক সেই সময় একজনের মাথায় এসে ঢিল পড়ল। সে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাইতো বরই কুড়াতে ব্যাস্ত, এবার সে ভাবছে তাহলে ঢিল ছুড়লো কে। এমন সময় আরো একটি ঢিল এসে তার সামনে পড়লো।

এবার সে হতভম্ব হয়ে গেল। উপরের দিকে তাকাতেই সে ছোট্ট একটা দৈত্যছানা দেখতে পেলো। তারপর তার সাথীদের নিয়ে দৌড়ে পালালো। 

এমনি করে তারা বেশ কয়েক দিন আসলো আর মাঝে মাঝেই সেই দৈত্যছানাকে দেখতে পেতো। যেদিন দৈত্যছানা দেখতে পেতো সেদিন তারা চলে যেতো। আর যেদিন দেখতে পেতো না সেদিন বরই কুড়াতো।

এরপর কয়েকদিন এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে সেই দৈত্যছানাকে দেখতে পাওয়া গেলো। তারা আসাও বন্ধ করে দিল।

রহমত সাহেব ভাবলেন কি ব্যাপার ছেলেমেয়েরা আর আসেনা তাদের কথাবার্তাও শোনা যায়না। আবার ভাবলেন হয়তো ওরা ঘুম থেকে উঠতে পারেনি।

কয়েক দিন পর রহমত সাহেবের পাশের বাড়িতে কিছু আত্মীয় স্বজনরা বেড়াতে আসলো। এদের মধ্য একজন ছেলের বয়স পনেরো বছর। সারাদিন পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ালো। যেসব ছেলেমেয়েরা ভয় পেতো তাদেরই একজন রবিন। সেই ছেলেটি সম্পর্কে রবিনের মামাতো ভাই। তার নাম আসিফ। ঐ বরই গাছটি আসিফের চোখে পড়ল। সেও মনে মনে ঠিক করলো সে বরই কুড়াতে যাবে। আসিফ রবিনকে বললে সে পুরো ঘটনা খুলে বলল। আসিফ খুব সাহসী ও ভূতপ্রেত বিশ্বাস করে না। 

সেদিন ভোর রাতে আবার তারা বরই কুড়াতে গেল। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। এভাবে দুই দিন কিছুই দেখা গেলো না। তৃতীয় রাত্রে তারা আবার যাবে। সেদিন বরই গাছের ডালে দৈত্যছানাকে দেখতে পাওয়া গেলো। তারা সবাই একত্রিত হলো। এই দৃশ্য দেখে আসিফ খুব ভয় পেয়েছে। তারপরও সে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতেই দৈত্যছানাটি বললঃ হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাও। তখনি আসিফ থমকে দাঁড়াল। 

আসিফ মনে মনে ভাবলো ফজরের আজান  তো হয়ে গেছে। আর এই সময় তো ভুতপ্রেত থাকেনা। এরপর সে একটা লাঠি নিয়ে আসলো। আর বললঃ দৈত্যছানা তুমি কেমন মানুষের গন্ধ পাও দেখি। কেমন করে মানুষ খাবে। তুমি নিচে না নামলে আমি এই লম্বা লাঠি দিয়ে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেবো। এবার দৈত্যছানা ভয় পেয়ে গেলো।

সে নিচে নেমে আসলো। আর সবার সামনে গিয়ে তার মুখোশ খুলে ফেললো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। কারন এটাতো দৈত্যছানা নয় বরং সে অভি তার মানে মাতব্বর বাড়ির দৈত্যছানা। এতদিন অভি সবাইকে ভয় দেখিয়ে আসছিল। 

ছেলেমেয়েরা অভিকে আর কিছু বলল না। কারন সে মাতবরের নাতি তাই তারা সবাই চলে গেল। অভিও ঘরে চলে গেল। 

পাঁচ ছ'দিন কেটে গেল। পাড়ার আর কেউ তাদের গাছের বরই কুড়াতে যেত না। কেউ অভির সাথে কথা বলতো না। অভি বড্ড একা হয়ে গেল। আর সব সময়  মন খারাপ করে বসে থাকতো। 

একদিন রহমত সাহেবের চোখে পড়ল, অভির মুখ ভার আর সে চুপটি করে বসে আছে। তারপর তিনি অভিকে কাছে ডেকে বললেনঃ তোমার কি হয়েছে দাদাভাই। মন খারাপ কেন?

- পাড়ার কোন ছেলেমেয়েই আমার সাথে কথা বলে না।

তখন দাদু রহমত সাহেব পাড়ার ছেলেমেয়েদের ডেকে পাঠালেন। তারা সবাই চলে আসলে রহমত সাহেব জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা অভির সাথে কথা বলোনা কেন? তখন ছেলেমেয়েরা পুরো ঘটনা খুলে বলল। 

এরপর রহমত সাহেব অভিকে বললেনঃ তুমি তো বড়ই অন্যায় করছো। তোমার শাস্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমায় শাস্তি দিবোনা। বরং শোনঃ  এগুলো হলো শয়তানের কাজ। এভাবে কখনো কাউকে ভয় দেখাতে হয় না। শয়তানরা মানুষের ক্ষতি করে আর মানুষ মানুষের উপকার করে। আর কখনো কারো সাথে হিংসে করবে না। 

তখন অভি দাদুর কাছে ক্ষমা চাইলো। আর প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কোন দিন এমন কাজ করবে না।

রহমত সাহেব অভিকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করলেন এবং সবার জন্য বিকেলের নাস্তার ব্যবস্থা করে খাওয়ালেন। ছেলেমেয়েরা রাগ ভূলে আবার অভির সাথে মিলেমিশে থাকতে শুরু করল।