আশির দশকে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক ও ধারাবাহিক নাটকের ইতিহাসে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেন হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ১৯ জুলাই ২০১২)। এই আলোড়ন আছে বর্তমানে, থাকবে ভবিষ্যতে। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রখ্যাত যাদুশিল্পী, বাঁশি বাদক ও চিত্রশিল্পী জুয়েল আইচ তাকে উৎসর্গ করা বইটির উৎসর্গ অংশ তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এভাবে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন,
"জুয়েল আইচ-
জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন।
এভারেস্ট বিজয়ীরা শৃঙ্গবিজয়ের পরে নেমে আসেন। ইনি নামতে ভুলে গেছেন।"
হুমায়ূন আহমেদের লেখায় একটা প্রাণ আছে। সেই প্রাণ আঁকড়ে ধরে অনেক পাঠক জীবন আছেন। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সমাদৃত। বর্তমান সময়ে এসেও ভালো নাটকে বা রুচিশীল নাটক বলতে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত নাটকের কথা চলে আসবে। ভালো লাগার প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন পরবর্তীকালে তা ছেড়ে দেন।
হুমায়ূন আহমেদ নামটা কার নিকট কিরকম বা তিনি লেখক হিসেবে কেমন আমি এই বিচার করি না। আমার কাছে তার লেখা সহজ মনে হয়। কেননা বাস্তব জীবনকে খুঁজে পাই তার লেখায়। আমি তার বেশি বই পড়ি নাই। তবে আমার একাডেমিক বইয়ের বাহিরে বই পড়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল তার লেখা 'আমার ছেলেবেলা' পড়ে। বইটিতে তিনি তার জীবন তুলে ধরেছেন। সেখানে নিজেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ পছন্দের। বাংলা সাহিত্য তিনি ও তার দুই ভাইয়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। যা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), চন্দ্রকথা (২০০৩), শ্যামল ছায়া (২০০৪), নয় নম্বর বিপদ সংকেত(২০০৬), আমার আছে জল(২০০৮) ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। এছাড়া তার লেখা নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত নাটক সমূহ হলো:
প্রিয় পদরেখা, আজ আমাদের ছুটি, ওয়াইজা বোর্ড, হিমু, নিমফুল , ঘটনা সামান্য, বনুর গল্প, আগুন মজিদ, মৃত্যুর ওপারে, দ্বিতীয় জন, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, পুষ্প কথ, হাবলঙ্গের বাজার, টুয়েন্টি ফোর ক্যারেট ম্যান, তারা তিন জন টি মাস্টার, রূপালী রাত্রি, তারা তিন জন, জুতা বাবা, মহান চৈনিক চিকিৎসক ওয়াং পি, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, আমরা জেগে আছি, একটি অলৌকিক ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি। তার পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক সমূহ হলো- নক্ষত্রের রাত, আমি আজ ভেজাবো চোখ সমুদ্র জলে, উড়ে যায় বকপক্ষী, এই মেঘ এই রৌদ্র, কালা কইতর, চন্দ্র কারিগর ও সেদিন চৈত্র মাস ইত্যাদি। পরিকারের সকলে মিলে নাটক দেখতে চাইলে এখন সন্ধান করতে হয় কোন নাটক পরিবার নিয়ে দেখা যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ ভিন্ন। পারিবারিক সস্থির নাটকে বলতে চাইলে হুমায়ূন আহমেদকে নির্দেশ করবে। হুমায়ূন আহমেদ অধ্যাপনা ছেড়ে পরিচালক হয়েছেন। তার ত্যাগ সার্থক হলো।
২০১২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গাজীপুরের ‘নুহাশ পল্লী-তে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
লেখনিতে
মুহাম্মদ আল ইমরান
এক্সিকিউটিভ, সিনেপ্রাঙ্গণ।
২৮শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।