ওয়েটিং রুমে ঢুকেই তিনি বললেন, ‘কী জন্য এসেছেন বলেন। দুই মিনিটে শেষ করবেন। আমার জরুরি কাজ আছে।’
তার ব্যস্ততা দেখে আমি মিইয়ে গেলাম। আমি অবশ্য আগে থেকেই মিইয়ে ছিলাম। তার পাতায় আমি এ পর্যন্ত আঠারোটা গল্প পাঠিয়েছি। একটাও ছাপা হয়নি। সুতরাং তিনি যে আমাকে খুব একটা পাত্তা দেবেন না সেটা আমি জানতাম।
ফেসবুকে তিনি আমার লিস্টে আছেন।
আমি প্রায়ই ইনবক্সে নক করি। তিনি সাড়া দেন না। তার সব রকম পোস্টে লাইক-কমেন্ট করি। কোনো রিপ্লাই পাই না। আমাকে অন্য একজন সম্পাদক বলেছেন, রিপ্লাই দিলে অনেকে পেয়ে বসে। লেখা ছাপানোর জন্য উটকো অনুরোধ করে। তাই সম্পাদকেরা ফেসবুকে চুপচাপ থাকেন।
সেই দুপুর থেকে বসে আছি। এখন বিকেল পাঁচটায় এসে তিনি বলছেন—দুই মিনিটে শেষ করবেন।
সোফায় বসেই টি-টেবিলের ওপর পা তুলে দিলেন তিনি। ফোন রিসিভ করলেন—আনি এরনাক্স না ভাই, আনি এরনো। পা দোলাতে দোলাতে আমাকে বললেন, ‘আনি এরনো পড়েছেন?’
আমি বললাম, ‘জি না।’
‘সেটা অবশ্য আপনার লেখা দেখলেই বোঝা যায়। পড়ার অভ্যাস না থাকলে লিখে সময় নষ্ট করবেন না। আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হব।’
‘জি আচ্ছা। আমি চেষ্টা করছি।’
‘কী চেষ্টা করছেন? আমাকে বিরক্ত না করার, নাকি গল্প না লেখার?’
‘দুটোই।’
‘ভালো।’
‘এ পর্যন্ত আঠারোটা গল্প পাঠিয়েছি। উনিশ নম্বরটা হবে আমার শেষ গল্প। এটা লেখার আগে আপনার কিছু টিপস চাই।’
‘ওই যে বললাম—পড়বেন। সুকুমার বড়ুয়া মাত্র কিছুদিন আগে বলেছেন, ১০০ পৃষ্ঠা বই পড়লে এক পাতা লেখা যায়। আর শোনেন, পৃথিবীর সব গল্প প্রায় লেখা হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয়, আপনি কোন আঙ্গিকে, কোন ঢঙে গল্পটা বলে যাচ্ছেন।’
সব গল্প লেখা হয়ে গেছে—এটা শুনে আমি একটু হতাশ হলাম। আমি অভিজ্ঞতা থেকে লিখি। স্যাড-রিয়েলিস্টিক গল্প। পত্রিকায় পাঠাই। ছাপা হয় না। পরে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। প্রচুর সাড়া পাই। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
সম্পাদক মশাই বললেন, ‘আপনার গল্পগুলো জীবনমুখী। কিন্তু এসব ট্রেন্ড এখন অচল। আপনি এখনো অন্ধকার যুগে পড়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ মুখস্থ আছে?’
‘জি না।’
‘আমি উঠব। চা খাবেন?’
আমি জবাব দেওয়ার আগেই তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘আচ্ছা আরেকটু বসি। আপনি কি সব গল্প অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন?’
‘জি।’
‘আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড়। এটা যেদিন খালি হবে, সেদিন আপনি গল্পকার হয়ে উঠতে পারবেন।’
‘খালি হয়ে গেছে।’
‘একদম?’
‘একটা গল্প বাকি আছে। আমার ধারণা, পৃথিবীর কোথাও এটা লেখা হয়নি।’
‘কী সেটা?’
‘আপনার সময় হবে?’
‘দু মিনিটে শেষ করবেন।’
‘একটা চিহ্নহীন সমাধির গল্প।’
‘আসল কথা বলেন।’
‘আমি নিঃসন্তান। কিন্তু আমার একটা ছেলে হয়েছিল।’
‘মারা গেছে?’
‘মায়ের গর্ভে সাত মাস বয়সে মারা গেছে সে।’
‘দুঃখিত।’
‘কিন্তু তার কোনো সমাধি নেই।’
‘কী রকম?’
‘বিয়ের দশ বছর পর আমার স্ত্রী গর্ভধারণ করে। নানা জটিলতায় সাত মাসে তার গর্ভপাত হয়। অপরিণত হলে কী হবে, বাচ্চাটা অনেক হৃষ্টপুষ্ট ছিল। আমি মৌলভি সাহেবের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি, অপরিণত বাচ্চার গোসল-জানাজা লাগে না। মাটিতে পুঁতে ফেললেই চলে। তখন বাচ্চাটাকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। ভাবছিলাম কী করা যায়।’
‘কী করলেন?’
‘একটা লোক এসে বলল, আমি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম থেকে এসেছি। আপনি চাইলে আমরা বাচ্চাটাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আমি বাচ্চাটাকে তার হাতে তুলে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। লোকটা পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিল।’
‘তারপর?’
‘পরদিন হাসপাতালের আয়া আনোয়ারা খালা আমাকে এক অদ্ভুত গল্প শোনালেন। তিনি বললেন, হাসপাতালে আঞ্জুমানের অফিস আছে। ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আসলে তারা বাচ্চাটাকে নিয়েছে কি না। কিছু দালাল আছে, যারা এই রকম বাচ্চাদের লাশ নিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করে। আয়ার কথা শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠল।
আমি গেলাম আঞ্জুমানের অফিসে। না, তাদের কাছে আমার ছেলের লাশের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
‘তাহলে কোথায় নিয়ে গেল লাশটা?’
‘আনোয়ারা খালা আমাকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালের পেছনে পাহাড়ের খাঁজে। জায়গায় জায়গায় মাটি খোঁড়া। ছোট ছোট হাড়গোড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নতুন, পুরোনো।
দালালেরা অপরিণত বাচ্চাদের এখানে পুঁতে রাখে। শিয়াল-কুকুর এসে খেয়ে যায়। আনোয়ারা খালা বললেন, এগুলোর মাঝেই আছে আপনার ছেলের হাড্ডি।’
‘মারাত্মক! আপনি কমপ্লেইন করেননি?’
‘না। করলে বিষয়টা আমার স্ত্রী জেনে যেত। এখনো জানলে সে মূর্ছা যাবে। মাতৃত্বের আকুতি সে চাপা দিয়ে রেখেছে আঞ্জুমান মফিদুলে। সে জানে, তার নাড়ির ধন ওখানে ঘুমাচ্ছে। সে ঘরে বসে জেয়ারত করে। তার এই জানাটা মিথ্যে করে দিলে সে খুন হয়ে যাবে।’
এতক্ষণে সম্পাদক মশাইয়ের পা টি-টেবিল থেকে নেমে এসেছে। তিনি উঠে এসে আমার পাশে বসলেন। আমার হাত ধরে বললেন, ‘দুঃখিত, কিছু অভিজ্ঞতা গল্পকেও হারিয়ে দেয়। তবে অভিজ্ঞতা তো অভিজ্ঞতাই, গল্প নয়। আপনি আঠারোতেই থামুন, উনিশ নম্বর গল্প আর লেখার দরকার নেই।’
আমি নিদারুণ হতাশ হয়ে বললাম, ‘কেন, আপনার ভালো লাগেনি?’
‘ভালো লেগেছে। কিন্তু এ রকম করুণ ঘটনা আপনি ফেরি করে বেড়াবেন, বিষয়টা কেমন অমানবিক না?’
‘অমানবিক?’
‘এটাও বোঝেন না? তবে এটাকে মানবিক রূপ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আপনি পারবেন না। সেই কলকবজা আপনার হাতে নেই। আপনি আসতে পারেন।’
‘জি। আরেকটা কথা বলে উঠে যাব। আনোয়ারা খালার সঙ্গে পাহাড়ের খাঁজে গিয়ে সেদিন আমি শিয়ালে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলাম। সামনের পা দুটো দিয়ে আঁচড়ে আমার ছেলের হাড্ডি-মাংস বের করে আরাম করে খেয়েছি লেজ নাড়িয়ে।’
সম্পাদক এবার হো হো করে হেসে উঠলেন। টি-টেবিলটাকে পা দিয়ে ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনি কাফকাও পড়েননি। কাফকা পড়লে শিয়ালে রূপান্তরিত হতেন না।’
সম্পাদক মশাই মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখলেন। ‘এই রে...’ বলে অনেকটা দৌড়ে চলে গেলেন ভেতরের কক্ষে।
আমি এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরলাম আন্দরকিল্লার দিকে। কাফকা কিনব। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। পথের কুকুরগুলো যেন আমাকে ঘিরে ঘেউ ঘেউ করছে।
আন্দরকিল্লার বইয়ের দোকানে ঢুকেই দেখি, কাফকা বসে আছেন। আমি দু-তিনটা বই নিয়ে পাতা ওলটাতে শুরু করলাম। একটা তেলাপোকা আচমকা উড়ে এসে বসল আমার পিঠের ওপর। আমি লেজ নাড়িয়ে ওটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।
তার ব্যস্ততা দেখে আমি মিইয়ে গেলাম। আমি অবশ্য আগে থেকেই মিইয়ে ছিলাম। তার পাতায় আমি এ পর্যন্ত আঠারোটা গল্প পাঠিয়েছি। একটাও ছাপা হয়নি। সুতরাং তিনি যে আমাকে খুব একটা পাত্তা দেবেন না সেটা আমি জানতাম।
ফেসবুকে তিনি আমার লিস্টে আছেন।
আমি প্রায়ই ইনবক্সে নক করি। তিনি সাড়া দেন না। তার সব রকম পোস্টে লাইক-কমেন্ট করি। কোনো রিপ্লাই পাই না। আমাকে অন্য একজন সম্পাদক বলেছেন, রিপ্লাই দিলে অনেকে পেয়ে বসে। লেখা ছাপানোর জন্য উটকো অনুরোধ করে। তাই সম্পাদকেরা ফেসবুকে চুপচাপ থাকেন।
সেই দুপুর থেকে বসে আছি। এখন বিকেল পাঁচটায় এসে তিনি বলছেন—দুই মিনিটে শেষ করবেন।
সোফায় বসেই টি-টেবিলের ওপর পা তুলে দিলেন তিনি। ফোন রিসিভ করলেন—আনি এরনাক্স না ভাই, আনি এরনো। পা দোলাতে দোলাতে আমাকে বললেন, ‘আনি এরনো পড়েছেন?’
আমি বললাম, ‘জি না।’
‘সেটা অবশ্য আপনার লেখা দেখলেই বোঝা যায়। পড়ার অভ্যাস না থাকলে লিখে সময় নষ্ট করবেন না। আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হব।’
‘জি আচ্ছা। আমি চেষ্টা করছি।’
‘কী চেষ্টা করছেন? আমাকে বিরক্ত না করার, নাকি গল্প না লেখার?’
‘দুটোই।’
‘ভালো।’
‘এ পর্যন্ত আঠারোটা গল্প পাঠিয়েছি। উনিশ নম্বরটা হবে আমার শেষ গল্প। এটা লেখার আগে আপনার কিছু টিপস চাই।’
‘ওই যে বললাম—পড়বেন। সুকুমার বড়ুয়া মাত্র কিছুদিন আগে বলেছেন, ১০০ পৃষ্ঠা বই পড়লে এক পাতা লেখা যায়। আর শোনেন, পৃথিবীর সব গল্প প্রায় লেখা হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয়, আপনি কোন আঙ্গিকে, কোন ঢঙে গল্পটা বলে যাচ্ছেন।’
সব গল্প লেখা হয়ে গেছে—এটা শুনে আমি একটু হতাশ হলাম। আমি অভিজ্ঞতা থেকে লিখি। স্যাড-রিয়েলিস্টিক গল্প। পত্রিকায় পাঠাই। ছাপা হয় না। পরে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। প্রচুর সাড়া পাই। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
সম্পাদক মশাই বললেন, ‘আপনার গল্পগুলো জীবনমুখী। কিন্তু এসব ট্রেন্ড এখন অচল। আপনি এখনো অন্ধকার যুগে পড়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ মুখস্থ আছে?’
‘জি না।’
‘আমি উঠব। চা খাবেন?’
আমি জবাব দেওয়ার আগেই তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘আচ্ছা আরেকটু বসি। আপনি কি সব গল্প অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন?’
‘জি।’
‘আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড়। এটা যেদিন খালি হবে, সেদিন আপনি গল্পকার হয়ে উঠতে পারবেন।’
‘খালি হয়ে গেছে।’
‘একদম?’
‘একটা গল্প বাকি আছে। আমার ধারণা, পৃথিবীর কোথাও এটা লেখা হয়নি।’
‘কী সেটা?’
‘আপনার সময় হবে?’
‘দু মিনিটে শেষ করবেন।’
‘একটা চিহ্নহীন সমাধির গল্প।’
‘আসল কথা বলেন।’
‘আমি নিঃসন্তান। কিন্তু আমার একটা ছেলে হয়েছিল।’
‘মারা গেছে?’
‘মায়ের গর্ভে সাত মাস বয়সে মারা গেছে সে।’
‘দুঃখিত।’
‘কিন্তু তার কোনো সমাধি নেই।’
‘কী রকম?’
‘বিয়ের দশ বছর পর আমার স্ত্রী গর্ভধারণ করে। নানা জটিলতায় সাত মাসে তার গর্ভপাত হয়। অপরিণত হলে কী হবে, বাচ্চাটা অনেক হৃষ্টপুষ্ট ছিল। আমি মৌলভি সাহেবের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি, অপরিণত বাচ্চার গোসল-জানাজা লাগে না। মাটিতে পুঁতে ফেললেই চলে। তখন বাচ্চাটাকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। ভাবছিলাম কী করা যায়।’
‘কী করলেন?’
‘একটা লোক এসে বলল, আমি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম থেকে এসেছি। আপনি চাইলে আমরা বাচ্চাটাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আমি বাচ্চাটাকে তার হাতে তুলে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। লোকটা পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিল।’
‘তারপর?’
‘পরদিন হাসপাতালের আয়া আনোয়ারা খালা আমাকে এক অদ্ভুত গল্প শোনালেন। তিনি বললেন, হাসপাতালে আঞ্জুমানের অফিস আছে। ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আসলে তারা বাচ্চাটাকে নিয়েছে কি না। কিছু দালাল আছে, যারা এই রকম বাচ্চাদের লাশ নিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করে। আয়ার কথা শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠল।
আমি গেলাম আঞ্জুমানের অফিসে। না, তাদের কাছে আমার ছেলের লাশের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
‘তাহলে কোথায় নিয়ে গেল লাশটা?’
‘আনোয়ারা খালা আমাকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালের পেছনে পাহাড়ের খাঁজে। জায়গায় জায়গায় মাটি খোঁড়া। ছোট ছোট হাড়গোড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নতুন, পুরোনো।
দালালেরা অপরিণত বাচ্চাদের এখানে পুঁতে রাখে। শিয়াল-কুকুর এসে খেয়ে যায়। আনোয়ারা খালা বললেন, এগুলোর মাঝেই আছে আপনার ছেলের হাড্ডি।’
‘মারাত্মক! আপনি কমপ্লেইন করেননি?’
‘না। করলে বিষয়টা আমার স্ত্রী জেনে যেত। এখনো জানলে সে মূর্ছা যাবে। মাতৃত্বের আকুতি সে চাপা দিয়ে রেখেছে আঞ্জুমান মফিদুলে। সে জানে, তার নাড়ির ধন ওখানে ঘুমাচ্ছে। সে ঘরে বসে জেয়ারত করে। তার এই জানাটা মিথ্যে করে দিলে সে খুন হয়ে যাবে।’
এতক্ষণে সম্পাদক মশাইয়ের পা টি-টেবিল থেকে নেমে এসেছে। তিনি উঠে এসে আমার পাশে বসলেন। আমার হাত ধরে বললেন, ‘দুঃখিত, কিছু অভিজ্ঞতা গল্পকেও হারিয়ে দেয়। তবে অভিজ্ঞতা তো অভিজ্ঞতাই, গল্প নয়। আপনি আঠারোতেই থামুন, উনিশ নম্বর গল্প আর লেখার দরকার নেই।’
আমি নিদারুণ হতাশ হয়ে বললাম, ‘কেন, আপনার ভালো লাগেনি?’
‘ভালো লেগেছে। কিন্তু এ রকম করুণ ঘটনা আপনি ফেরি করে বেড়াবেন, বিষয়টা কেমন অমানবিক না?’
‘অমানবিক?’
‘এটাও বোঝেন না? তবে এটাকে মানবিক রূপ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আপনি পারবেন না। সেই কলকবজা আপনার হাতে নেই। আপনি আসতে পারেন।’
‘জি। আরেকটা কথা বলে উঠে যাব। আনোয়ারা খালার সঙ্গে পাহাড়ের খাঁজে গিয়ে সেদিন আমি শিয়ালে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলাম। সামনের পা দুটো দিয়ে আঁচড়ে আমার ছেলের হাড্ডি-মাংস বের করে আরাম করে খেয়েছি লেজ নাড়িয়ে।’
সম্পাদক এবার হো হো করে হেসে উঠলেন। টি-টেবিলটাকে পা দিয়ে ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনি কাফকাও পড়েননি। কাফকা পড়লে শিয়ালে রূপান্তরিত হতেন না।’
সম্পাদক মশাই মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখলেন। ‘এই রে...’ বলে অনেকটা দৌড়ে চলে গেলেন ভেতরের কক্ষে।
আমি এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরলাম আন্দরকিল্লার দিকে। কাফকা কিনব। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। পথের কুকুরগুলো যেন আমাকে ঘিরে ঘেউ ঘেউ করছে।
আন্দরকিল্লার বইয়ের দোকানে ঢুকেই দেখি, কাফকা বসে আছেন। আমি দু-তিনটা বই নিয়ে পাতা ওলটাতে শুরু করলাম। একটা তেলাপোকা আচমকা উড়ে এসে বসল আমার পিঠের ওপর। আমি লেজ নাড়িয়ে ওটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।