অবুঝ শিশু যেমন করে পুতুল নিয়ে খেলতে ভালবাসেন তেমন করে স্রষ্টাও বুঝি নিজের সৃষ্ট মানুষ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। তার এই খেলার ধরন দেখে আমরা কখনো আনন্দ পাই আবার কখনো কষ্ট পাই। কিন্তু আমাদের কষ্ট কিংবা আনন্দে তার কোন যায় আসেনা। তিনি খেলতে বুঝি ভালবাসেন তাই আপন মনেই খেলে যান। মানুষ তার এই খেলনার নাম দিয়েছেন ভাগ্য। আর এই ভাগ্য নামক খেলনার নির্মম পরিহাসের শিকার অধিকাংশই দরিদ্র শেনীর। গরীব শ্রেনীর প্রতিবাদ কেউ গায়ে মাখে না, তাই তারা প্রতিবাদও করতে চাইনা।প্রতিবাদ করেই আর কি হবে ক্ষুদ্র এ জীবনে কিছু পাই আর না পাই একটা জীবনতো পেয়েছি এই ভেবে সকল কষ্ট যন্ত্রনা তারা নত মস্তকে মেনে নেয়, মেনে না নিয়ে উপায়ও নাই। তিনি ভাগ্য খেলা খেলেন বটে কিন্তু সে খেলায় তার পক্ষপাতিত্ব দেখতে পাই। যদি তাই না হবে তবে তিনি রাশু নামে মেয়েটাকে জীবন দিলেন শৈশব দিলেন, আর দিলেন যৌবন, সেই যৌবনে কল্পনা বিভোর মনও দিলেন। কিন্তু যৌবন যদি রুপে প্রকাশ পাই তবে তার যৌবন বলে কিছু নাই। কাক কালো হলেও কাকের আলাদা করে সৌন্দর্য প্রকাশ পাই বিশেষ করে আমাদের এই সমাজে কিন্তু মানুষ যদি কালো বর্ণের হয় আর তা যদি হয় কোন মেয়ে তবে তার সৌন্দর্য যে কিসে প্রকাশ পায় তা ভাগ্য খেলায় যে পেয়েছে তার ব্যথা কেবল সেই বুঝেছে৷ রাশু মেয়েটাও সে কালো বর্ণ পেয়েছে ভাগ্য খেলায়, অনিচ্ছাই অংশগ্রহন করে। রাশু যেই বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়ির সদস্যরা ঢাকায় যাবে, সঙ্গে রাশুকেও নিয়ে যাবে। রাশু তার এই ১৫ বছরের জীবনে কখনো ঢাকায় যায়নি। মানুষ অপ্রত্যাশিত জীবনে কিছু পেলে কিছু দিন ঘুমাতে পারেনা আনন্দের অতিশায্যে, রাশুও কয়দিন ঘুমাতে পারে না। ঢাকা শহরের গল্প অনেক শুনেছে, কিন্তু স্বচক্ষে দেখেনি।ঢাকক শহর কেমন, সে ওখানে যেয়ে কি কি করবে সব কিছুই কল্পনাতে ভাসিয়ে তোলে আর অজানা আনন্দে বার বার পুলকিত হয়। তার অবশ্য আনন্দের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, কি জানি এ বাসার বড় ছেলেকে দেখলে কেমন কেমন জানি লজ্জা লাগে তাহলে কি ও বড়
ভাইয়াকে পছন্দ করে??কিন্তু ভাল লাগলেই বা কি বড় ভাইয়া তার দিকে ঘুরেও তাকায় না৷ বড় লোকের ছেলে গুলো গরীব মানুষের মেয়েদের দিকে ঘুরেও তাকায় না আর গরিবের মেয়েরা বড়লোকের ছেলেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেও সাহস করে না৷ কোথায় যেন বাধা পায়।রাশুর ভাল লাগা সেখানেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভালবাসা ধনি গরিব কালো ফর্সা দেখে হয়না, এটা মনের ব্যপার কিন্তু এ কথা এ যুগে আর চলে না৷ রাশুর মনে পড়ে যায় যখন তার মনে ভাল লাগার কোন কিছুই হয়নি তখন তার এক মামাতো ভাই ওকে ভালবাসার কথা বলেছিল। মানুষের মন পানির মত। পানি যেনন কোন ছিদ্র পেলে সেখান দিয়ে ছুটে বের হতে চায় তেমন মানুষের মনও সুযোগ পেলে তার নিজের জায়গা খুজে নেয়। রাশুর প্রেম ঘটিত ব্যপার সে রকমই। রাশুর জীবনে যদি কেউ প্রেমের বার্তা দেয় তবে তার চেহারা দেখে নয় বরং যৌবন জালায় কোন পথ না পেয়ে সরু পথ খুজে যেখানে সেখানে ডুবে মরার মতই। রাশু কি তা বুঝে? তার কি এটা বুঝার বয়স ছিল কিংবা ভুল স্বপ্নে বিভোর মন। সে যখন তার বাসা মালিকের মেয়ে সোমা আপুর পাশে দাঁড়ায় তখন আকাশ পাতাল পার্থক্য নিজেও বুঝতে পারে। তবুও সে সাজে। সাজলে তাকে দেখতে আরো খারাপ লাগে তবুও সাজে। সাজাগুজোর প্রতি মেয়েদের দুর্বলতা আছে। ক্রমেই রাসুদের ঢাকায় যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো। সবাই রেডি হয়ে গেছে রাশুটা কেন যে দেরি করছে সোমা দেখতে গিয়ে ভিড়মি খাওয়ার অবস্থা। রাসু এমন সাজা সেজেছে যেন রাজপুরির রাজপুত্তর ওকে পংখিরাজ ঘোড়ায় করে নিতে আসবে। অবশেষে পঙ্ক্ষিরাজ ঘোড়াও নেই রাজপুত্তর ও নেই। সবাই যখন রাশুকে দেখলো তখন এমন হাসা হাসলো যেন কোন সার্কাসের ভাড়কে দেখেছে। আর হাসবেই বা না কেন? রাশু এমনিতেই কালো তার উপর আবার এমন মেকাপ করেছে যেন কেউ সাদা ময়দা রাশুর মুখে মাখিয়ে দিয়েছে। রাসু বুঝে তবুও মেকাপ ধুয়ে ফেলে না। আর কেউ তাকে জোরও করে না। স্টেশন এসে তার সকলে উপস্থিত হয়। স্টেশনে কত মানুষ, রাশু দেখে অবাক হয়।এর আগেও স্টেশনে সে এসেছে কিন্তু এতো মানুষ কখনো সে দেখেনি।কয়েকটা ছেলেকে সে দেখতে পেল। ছেলে গুলো সোমা আপুর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখলো ছেলে গুলো তাকে দেখে ও মিটমিট করে হাসছে। মানুষের হাসি বড় মনোহর, মানুষের হাসি বড় ভয়ংকর। কোন হাসি গোলাপের পাপড়ি ছুড়ে আবার কোন হাসি বিষ মাখানো তীর ছুড়ে। কোন হাসি হৃদয় জুড়ে আবার কোন হাসি হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন করে৷ রাশু হয়তো বুঝে আবার বুঝে না, কিন্তু তাতে মানুষের হাসি থামে না। কিন্তু সোমা আপু বিষয় টা খেয়াল করে রাশুকে মুখ ধুয়ে আসতে বুএ। রাসু মুখ ধুয়ে আসে, তবুও সবাই হাসে, বেশি করে হাসে। রাশুর সে হাসিতে কিছুই যায় আসে না। জীবনে অনেক হাসির পাত্র হয়েছে, তাই অপরের বক্র হাসি তার মন খারাপের কারন হতে পারে না। রাসুরা ঢাকায় গিয়েছে মালিকের বোনের মেয়ের বিয়ের নেমন্ত্রন খেতে৷ রাশুরা ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়৷ ঢাকায় কত মানুষ। রাশু দেখে অবাক হয়। কত বড় বড় দালান। চারে দিকে আলোর রশ্নি। রাশুরা মালিকের বোনের বাসায় ওঠে। ২০ তলা দালান বাড়ি। নানা রকমের আলো দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে না। অনুষ্ঠান হবে অন্য কোন জায়গায়৷কি যেন অডেট্রিয়াম না কি যেন। গ্রামের বাড়িতে বিয়ের মত এখানে বেশি আনন্দ নাই৷ এখানকার ব্যপার সেপার আলাদা। পরের দিন সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে। সবাই সাজুগুজু করছে, রাশু এবার তেমন সাজে না সেদিকে কারো খেয়ালো নেই।সোমা আপুও সেজেছে। সোমা আপুকে দেখতে ভীষন সুন্দর লাগছে। অডিটারিয়ামের সবাই রওয়ানা দিল। রাশুও গেল। সোমার আপুর সাথে সাথে থাকছে। অনুষ্টানে গিয়ে সোমা আপুর খালাতো বোন রিমি আপুকেও দেখলো রাশু৷ সোমার আওউর চেয়ে রিমি আপুকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। সোমা আপুকে রাশু দেখলো কেমন মন মরা হয়ে সোফার এক কোনে বসে আছে৷ অনেক ছেলে বন্ধু এসে রিমি আপুর সাথে হাসাহাসি করছে।খুব মজা করছে। ওদের সকল কে এতো সুন্দর লাগছে, যে রাশু খেয়াল করলো সোমা আপুর দিকে কোন ছেলে ঘুরেও তাকাচ্ছে না। অথচ গ্রাম হলে সোমা আপুই যেন সকলের মধ্য মণি হয়ে থাকতো। রাশু সোমা আপুর পাশে গিয়ে বসে। আর সোমা আপুকে এক মনে দেখে আর ভাবে সোমা আপুও অনেক সুন্দর। হয়তো সে নিজেও। কেউ বোঝে কেউ বুঝে না। হয়তো স্রষ্টাও বোঝে কিংবা বোঝে না।